শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর প্রথম কার্যদিবস মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দেশের শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৮৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। ১০৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম একদিনে যতটা বেড়ে যাওয়া সম্ভব ততটাই বেড়েছে। এমন বাজারে ক্রেতা সংকটে পড়ে সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন চার প্রতিষ্ঠান।
এ চার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, বেক্সিমকো ফার্মা, আইএফআইসি ব্যাংক, শাইনপুকুর সিরামিক এবং বেক্সিমকো। এ চারটি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব রয়েছে সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের দখলে।
এদিকে মঙ্গলবার নির্ধারিত সময় সূচিতে শেয়ারবাজারে লেনদেন হলেও অফিস করেননি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি শেখ হাসিনা এবং সালমান এফ রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
বিএসইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অধ্যাপক শিবলী রোববার রাতে দেশে ফেরেন। তবে তিনি আজকে অফিসে আসেননি। এছাড়া বুধবার কমিশন সভা পূর্বনির্ধারিত থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ দেশের বাইরে রয়েছেন।
সালমান এফ রহমান শেয়ারবাজারের ব্যাপক সমালোচানার জন্ম দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার থেকে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।
সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো ফার্ম, শাইনপুকুর সিরামিক এবং আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার দাম একদিনে যতটা কমা সম্ভব ততটাই কমেছে। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বেঁধে দেওয়া নিয়মের কারণে বেক্সিমকোর শেয়ার দাম কমার সুযোগ নেই। ফলে এ কোম্পানির শেয়ার দাম কমেনি। কিন্তু ক্রেতাও ছিল না প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হলে শেয়ারবাজারে মন্দা অবস্থা দেখা দেয়। তার আগেও নানা ইস্যুতে শেয়ারবাজারে মন্দা চলছিল। প্রায় চার মাস ধরে শেয়ারবাজার পতনের মধ্যে রয়েছে। অর্থাৎ হাসিনা সরকারের শেষ সময়টা মোটেও ভালো যায়নি শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে এক ধরনের অস্থিরতা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় শেয়ারবাজারেও লেনদেন বন্ধ থাকে একাধিক দিন। এমনকি পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজও শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকার কথা ছিল। তবে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব আন্দোলনের মুখে পড়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পর থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে দেশ ছেড়ে চলে যান।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর মঙ্গলবার দেশের সরকারি-বেসরকারি সব অফিস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত সময় সকাল ১০টায় শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়। লেনদেনের শুরুতেই দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায় লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠান। এতে শুরুতেই সূচকের বড় উত্থান হয়। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এ ঊত্থান অব্যাহত থাকে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৮৩ শতাংশ বা ৩২৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৬০টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৯৭ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৪২৬ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
এমএএস/এমএএইচ/এমএস