বাংলাদেশে কয়লা ও এলএনজিতে জাপানের বেসরকারি বিনিয়োগ বন্ধের দাবি জানিয়েছে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা ‘ধরা’ ও পরিবেশবাদী ২১টি সংগঠন। এছাড়া জাপানি সংস্থাগুলো যেন জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করে সেই আহ্বান জানিয়েছে এসব সংগঠন। মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুরে রাজধানীর শ্যামলী পার্ক মাঠে এক সমাবেশে এই দাবি জানানো হয়।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপান অন্যতম সহযোগী দেশ। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে জাপান কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং টার্মিনাল স্থাপন করার যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলছে, তা শুধু এ দেশের প্রাণ-প্রকৃতির জন্য সর্বনাশ বয়ে আনছে তা নয়, বরং নবায়নযোগ্য জালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশের যে অযুত সম্ভাবনা রয়েছে, তাকেও বিনষ্ট করে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি করবে।
তিনি বলেন, আশা করি, জাপান বাংলাদেশে জীবাশ্ম জালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা প্রত্যাহার করবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিস্তারে সহযোগিতা করবে।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা প্রয়োজন, কিন্তু কয়লা বা জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক জ্বালানি হলে তা হবে আমদানি নির্ভর ও বিপজ্জনক। করোনা সংক্রমণ ও রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের সময়কালে জীবাশ্ম জালানি খাতে বিনিয়োগের প্রভাব সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা দেখেছি যে ঢাকা বিশ্বের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। আমাদের দেশে গড় আয়ু হ্রাস পাচ্ছে, রোগের প্রকোপ বাড়ছে এবং আমরা এখন আমাদের চিকিৎসার জন্য আরও বেশি ব্যয় করছি। কাজেই জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা দূষক শিল্পায়নে অর্থায়ন বন্ধের দাবি জানাই।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের ইকবাল ফারুক বলেন, গ্যাস এবং অন্যান্য জ্বালানি আমাদের দেশে ট্রানজিশনাল জ্বালানি হিসেবে প্রবেশ করানো হচ্ছে যা ভ্রান্ত সমাধান। গত ১ দশকেরও বেশি সময় ধরে জাপানি প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করছে এবং ইতিমধ্যে তারা অনেক অর্থ আয়ও করেছে। কিন্তু এই অর্থায়ন আমাদের টেকসই উন্নয়নের সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় অঞ্চল ও সুন্দরবন ধ্বংস হচ্ছে এবং মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ওইসব এলাকার মানুষ অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে হবে।
শের-এ-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা বিদেশি প্রকল্পের ওপর নির্ভরশীল। এগুলো বন্ধ হলে আমরা বিপদগ্রস্ত হই। ফলে আমাদের সামাজিক ও পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে আমাদের নিজস্ব প্রকল্প তৈরি করতে হবে।
সচেতন ফাউন্ডেশনের হাবিবুর রহমান বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে যখন আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির বিরুদ্ধে কথা বলছি, তখন জাপান এই প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করছে। কার্বন নির্গমনের ওপর কোনো গ্রহণযোগ্য গবেষণা নেই। সে কারণে আমরা বলতে পারব না যে, আমরা কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী নই। আমরা আমাদের ভবিষ্যতকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাই না।
আরএএস/জেডএইচ/