হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) আল্লাহর রাসুলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান একজন সাহাবি। ইসলামের আবির্ভাবের কয়েক বছর পর ইসলাম গ্রহণ করলেও পরবর্তীতে তিনি সাহাবিদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিতে পরিণত হন। সাহাবিদের মধ্যে আবু বকরের (রা.) পরই ছিল তার অবস্থান। নবিজি (সা.) তাকে ও আবু বকরকে সাহাবিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন এবং তাদের অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। ওহাব আস-সুয়ায়ী থেকে বর্ণিত আলী (রা.) একদিন খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন, আপনারা কি জানেন নবিজির (সা.) পর এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি কে ? সবাই বললেন আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি বললেন, না, নবিজির (সা.) পর এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি আবু বকর, তারপর ওমর। (মুসনাদে আহমদ: ৮৩৪)
৬৩২ খৃষ্টাব্দে নবিজির (সা.) ওফাতের পর সাহাবিদের সর্বসম্মতিক্রমে হজরত আবু বকর (রা.) খলিফা হন। তার খেলাফত মাত্র দুই বছর স্থায়ী হয়। ৬৩৪ খৃষ্টাব্দে অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি বুঝতে পারেন তার হায়াত শেষ হয়ে এসেছে। মৃত্যুশয্যায় তিনি হজরত ওমরকে (রা.) তার উত্তরসূরি হিসেবে নিযুক্ত করেন।
হজরত আবু বকরের (রা.) ওফাতের পর খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করে প্রথম ভাষণে হজরত ওমর (রা.) কী বলেছিলেন এ বিষয়ে বিভিন্ন রকম বর্ণনা পাওয়া যায়। কিছু বর্ণনায় এসেছে, খলিফা হওয়ার পর হজরত ওমর (রা.) মিম্বরে উঠে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি কঠোর, আপনি আমাকে নম্র করুন, আমি দুর্বল, আমাকে শক্তিশালী করুন, আমি কৃপণ, আমাকে উদার করুন।’
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, হজরত ওমর (রা.) তার প্রথম ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমার পূর্বসূরির পর আল্লাহ তাআলা আপনাদের জন্য আমাকে এবং আমার জন্য আপনাদেরকে পরীক্ষা হিসেবে স্থির করেছেন। আপনাদের কোনো বিষয় আমার কাছে উপস্থিত হলে আমি তা অন্য কারো হাতে ছেড়ে দেব না এবং যদি কোনো বিষয় আমার দৃষ্টির বাইরে থাকে, তবে আমি তার জন্য উপযুক্ত ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ করব। যদি তারা ভালো করে, আমি তাদের প্রতি ভালো আচরণ করব, আর যদি তারা অন্যায় করে, তবে আমি অবশ্যই তাদের শাস্তি দেব।’
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, খেলাফত গ্রহণের পর তিনি মিম্বরে উঠলেন এবং আবু বকরের (রা.) বসার স্থানে বসতে উদ্যত হলেন, কিন্তু পরে বললেন, আমি নিজেকে আবু বকরের আসনের উপযুক্ত মনে করি না। এরপর তিনি এক ধাপ নিচে নেমে এলেন। তারপর আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করে বললেন, ‘আপনারা কোরআন পড়ুন, জ্ঞান লাভ করবেন। কোরআনের ওপর আমল করুন, কোরআনের আহল বা অনুসারী হতে পারবেন। আপনারা নিজেদের মূল্যায়ন করুন বিচার দিবসে আপনাদের মূল্যায়ন হওয়ার আগে। বিচার দিবসে আল্লাহর সামনে উপস্থাপিত হওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করুন যেদিন আপনাদের কিছুই গোপন থাকবে না। নিশ্চয়ই কোনো হকদারের হক এত বড় নয় যে, তার আনুগত্য করতে গিয়ে আল্লাহর অবাধ্যতা করা যাবে। সবাই জেনে রাখুন! আমি নিজেকে এতিমের অভিভাবকের মতো গণ্য করছি। যদি আমার স্বচ্ছলতা থাকে, তাহলে আমি সংযম অবলম্বন করব, আর যদি দরিদ্র হই, তাহলে ন্যায্যভাবে গ্রহণ করব।’
এই বর্ণনাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব এইভাবে যে, ওমর (রা.) তার ভাষণে উল্লিখিত সব কথাই বলেছিলেন, উপস্থিত ব্যক্তিরা যে যতটুকু মনে রেখেছিলেন, তা বর্ণনা করেছেন।
তথ্যসূত্র: উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.), ড. আলী মুহাম্মাদ সাল্লাবি
ওএফএফ/জেআইএম