‘খামারিদের পাশে নেই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর’

4 months ago 62

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক খামারিবান্ধব নন। তিনি খামারিদের কোনো সহযোগিতা করছেন না। তার কার্যক্রমে বোঝা যাচ্ছে, দেশের দুধ উৎপাদনে তাদের ডাক্তার ও মিল্ক প্রসেসিং কোম্পানিগুলোই সব কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন।

শনিবার (১ জুন) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন। কোরবানিতে চোরাইপথে গরু আসা বন্ধ, রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সহায়তা ও গুঁড়ো দুধের শুল্ক বাড়ানোর দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

বিডিএফ-এর সভাপতি মো. ইমরানের হোসেনের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি আলী আজম শিবলী, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ ইমরান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম নাজীব উল্লাহ, আলী আজম রহমান শিবলী, অর্থ-সম্পাদক জাফর আহমেদ পাটোয়ারী প্রমুখ।

জামাল হোসেন নামে এক প্রান্তিক খামারি বলেন, আমি ডিজির সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিন দিন পরে দেখা করার জন্য সময় দেন।

মোহাম্মদপুরের আদাবরের খামারি রাশিদা বেগম জানান, তার ২০টি গাভীর মধ্যে ১৫টি মারা গেছে। গরু যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন ডাক্তারদের ফোন দিলে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে বলে দাবি জানায়। বাধ্য হয়ে ৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ডাক্তারের সামনেই দুটি গাভী মারা গেছে। কী রোগ হয়েছিল তা জানতে তারা পরীক্ষার জন্য আলামত নিলেও এখনো রিপোর্ট দেয়নি। আমি এখন নিঃশ্ব।

এ সময় বিডিএফএ সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, আগে ডাক্তাররা মোটরসাইকেল যোগে আসতো তাদের ২০০-৩০০ টাকা দিলেই হতো। বর্তমানে ১০০০ থেকে ৫০০০ টাকা দিতে হয়। ঘুস ছাড়া সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।

গুঁড়ো দুধের ওপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে বছরে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন দুধের প্রয়োজন। তবে উৎপাদন হচ্ছে ১ কোটি ৪০ লাখ ৬৮ হাজার টন। পুষ্টির চাহিদা দেশের দুগ্ধ খামারের মাধ্যমেই সম্ভব। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ থাকলেও বেশ কিছু বাধার কারণে দুধের উৎপাদন বাড়ছে না। এসব বাধা দূর করলে দেশ দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। এসব দুধের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

ইমরান হোসেন বলেন, গুঁড়ো দুধ আমদানিতে কঠোরতা আরোপ করে সঠিক ও কার্যকর উদ্যোগ নিলে দুই বছরের মধ্যে দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে বাংলাদেশ। আমদানিতে অধিক হারে শুষ্কারোপ করে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, শিশুখাদ্য হিসেবে ফরমুলা দুধ শুল্কমুক্ত করে দেওয়া হোক। বাল্ক ফিল্ড মিল্কে কোনো ফ্যাট থাকে না। সেখানে ভেজিটেবল ফ্যাট দেওয়া হয়। বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ দুধ। এটা করতে আমদানিতে কোটা তৈরি, শুল্ক বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করতে হবে জানিয়ে মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, বাংলাদেশে আঘাত হানা প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে বড় ক্ষতি করেছে। বিশেষ করে কোরবানির হাটের উদ্দেশ্যে যারা গবাদি পশু লালন করেছে তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। দুর্গত অনেক এলাকায় পশুর প্রয়োজনীয় খাবার নেই। অনাহারে কিংবা পচা খাদ্য খেয়ে অনেক পশু নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মারাও পড়ছে। চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় পাওয়া যাচ্ছে না সবুজ ঘাস। ১৯ জেলায় ১০৭টি উপজেলায় গবাদি পশু ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে। অন্তত ২৫ লাখ গবাদি পশু ঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে গবাদি পশুর ৯ হাজার ৭৫৯ একর চারণভূমি। ফলে প্রাকৃতিক খাবারের বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। এ মুহুর্তে চিকিৎসা, গরুর ঘর তৈরি করে দেওয়া ও আর্থিক প্রণোদনা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, খামারিদের ব্যাংক ঋণ মওকুফ করতে হবে। সহজ শর্ত ও সুদবিহীন কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। খামারিদের ক্ষতি নিরূপণ করতে হবে দ্রুত। সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনতে হবে এবং গবাদি পশুর জন্য ঘাসের বিকল্প খাবারের ব্যবস্থা নিতে হবে।

চোরাইপথে গরু আসছে অভিযোগ করে ইমরান হোসেন বলেন, ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেখান থেকে বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ হয়। চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশে গবাদি পশুর লালন-পালন বেড়ে যায়। আর সেটাই বাংলাদেশকে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। একদিকে কয়েক বছর ধরে গবাদি পশু আমদানি বন্ধ, অন্যদিকে কোরবানির ঈদে প্রতিবছর উদ্বৃত্ত থাকে ২০ লাখের বেশি পশু। এবারও চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ বেশি পশু প্রস্তুত আছে। তবুও ঈদুল আজহা সামনে রেখে নানা কৌশলে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে গরু-মহিষ। কিছু সীমান্তে কড়া নজরদারি থাকলেও বেশ কয়েকটি এলাকা দিয়ে অন্য বছরের চেয়ে বেশি পশু ঢুকছে এবার। এখন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে গরু ঢোকায় লোকসানের শঙ্কায় চাষিরা।

এনএইচ/এসএনআর/এমএস

Read Entire Article