বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন আজ শুক্রবার (১৫ আগস্ট)। ১৯৪৫ সালের এ দিনে তিনি দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। খালেদা জিয়ার পৈত্রিক নিবাস ফেনীর ফুলগাজী হলেও তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরে বাবার কর্মস্থলে। ইস্কান্দার মজুমদার ও তৈয়বা মজুমদার দম্পতির তৃতীয় সন্তান খালেদা জিয়া।
জন্মদিন উপলক্ষে বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও থাকছে না কোনো আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন। জন্মদিনে বেগম জিয়ার শারীরিক সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা এবং ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে জীবনদানকারী শহীদগণ, ৯০ এর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ও ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ’দের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের আশু সুস্থতা কামনায় ঢাকাসহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয় অথবা মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করবে দলটি।
কেন্দ্রীয়ভাবে শুক্রবার বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
২০১৮ সালের পর নতুন প্রেক্ষাপটে এবার দ্বিতীয় বারের মতো খালেদা জিয়ার জন্মদিন এলো। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট স্থায়ী মুক্তি পান বেগম জিয়া। ফলে মুক্ত পরিবেশে এবারের জন্মদিনও কাটাবেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তবে থাকছে না কেক কাটার মতো কোনো কর্মসূচি।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ব্যতিরেকে কেক কাটা কিংবা অন্য কোনো আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান না করার জন্য সকল নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এক সময় ১৫ আগস্টে কেক কেটে তাদের নেত্রীর জন্মদিন পালন করতেন। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে তারা দলীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি না দিয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করে আসছেন।
খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন লিভার সিরোসিস, হৃদ্রোগ ও কিডনি জটিলতা, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। গত কয়েক বছর অসুস্থতার মধ্যে থাকায় তিনি গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় চিকিৎসকদের নিবিড় পরিচর্যায় চিকিৎসাধীন আছেন। নেতা-কর্মীদের তিনি সাধারণত সাক্ষাৎ দেন না। তবে দুই ঈদে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এর মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে চার মাস কাটান খালেদা জিয়া। সেখান থেকে গত ৬ মে ফেরেন তিনি। এরপর এক যুগের বেশি সময় পর গত ১০ মে দুই পুত্রবধূকে নিয়ে গুলশানে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের বাসায় যান খালেদা জিয়া। আর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর তাকে প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছিল। সেদিন তিনি সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া একটি উজ্জ্বল নাম। ১৯৮১ সালের ৩০ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে বিপথগামী সৈন্যদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। এর পরপরই জিয়াউর রহমানের গড়া বিএনপির রাজনীতিতে আগমন ঘটে গৃহবধূ খালেদা জিয়ার। দলের নেতাকর্মীদের দাবির মুখে ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হন। এরপর প্রথমে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী দীর্ঘ আপসহীন আন্দোলনের পর ১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
এ পর্যন্ত ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬, ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদে তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন খালেদা জিয়া। এছাড়া দু’বার সংসদের বিরোধীদলীয় নেতাও হন। ১৯৯৩ সালে তিনি সার্কের প্রথম মহিলা চেয়ারপারসন হন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট জয়লাভের পর তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেন। ওয়ান-ইলেভেনের পর মঈন-ফখরুদ্দীন সরকার ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তাকে কারাবন্দি করে। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কারাভোগ করেন তিনি। সেবার কারাগারে জন্মদিন কেটেছে তার। কারাগারে থাকা অবস্থায় তার অনড় মনোভাবের কারণে ‘মাইনাস টু ফরমুলা’ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় ওই সরকার। পরে তারা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেয়।
নির্বাচনগুলোতে খালেদা জিয়া নিজ দলের নেতৃত্বে যেমন দিয়েছেন, তেমনি নির্বাচনের মাঠেও তাঁর সাফল্য শতভাগ। পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে ২৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটিতেই তিনি জয়ী হন। ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে ২০০১ সাল পর্যন্ত চারটি সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া প্রতিবারই পাঁচটি আসনে প্রার্থী হয়েছেন এবং সবগুলো আসনে তিনি জয়লাভ করেছেন। এরপর ২০০৮ সালে খালেদা জিয়া তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনটিতেই জয়ী হন। বিএনপিতে আলোচনা আছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে খালেদা জিয়া তিনটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নির্বাচন কমিশনের বর্তমান আইন অনুযায়ী, একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।
অবশ্য ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়। সেই থেকে সরকারি দলের দমন-পীড়ন ও মামলা-হামলার বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন বর্জন করে দলটি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দুর্নীতির দুই মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যেতে হয় খালেদা জিয়াকে। করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনে খালেদা জিয়াকে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়া এবং দেশের বাইরে না যাওয়ার শর্তে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়।
তবে সাময়িক মুক্তির পরও খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় কারান্তরীণ ছিলেন। এ সময় অসুস্থতার কারণে তাকে বারবার হাসপাতালে যেতে হয়েছে। তখন মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী পরিবারের সদস্যরা খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে কয়েক দফা অনুমতি চাইলেও সাময়িক মুক্তির শর্তের যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবারই তা নাকচ করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
খালেদা জিয়ার পৈত্রিক নিবাস ফেনীর ফুলগাজী হলেও তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরে বাবার কর্মস্থলে। ১৯৬০ সালে তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন খালেদা জিয়া। এ দম্পতির দুই সন্তান, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো। তবে আরাফাত রহমান ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় মারা যান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের নামে বর্বরোচিত গণহত্যা শুরু করলে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি সেনারা বিদ্রোহ করেন। ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এ দেশের মানুষ।
খালেদা জিয়ার পৈত্রিক নিবাস ফেনীর ফুলগাজী হলেও তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরে বাবার কর্মস্থলে। ১৯৬০ সালে তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন খালেদা জিয়া। এ দম্পতির দুই সন্তান, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো। তবে আরাফাত রহমান ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় মারা যান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের নামে বর্বরোচিত গণহত্যা শুরু করলে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি সেনারা বিদ্রোহ করেন। ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এ দেশের মানুষ।