খাস জমি দখল করে মাছচাষ, পানিবন্দি ৩০০ পরিবার

3 months ago 28

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সরকারি খাস জায়গা দখল করে খালের শ্রেণি পাল্টে মাছচাষ করায় বিপাকে পড়েছে প্রায় ৩০০ পরিবার। টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বসতঘরে থাকতে পারছেন না তারা। উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের চুনি মিঝির টেক এলাকায় অবৈধভাবে খালের জায়গা দখল করে মাছচাষ করায় পানিবন্দি রয়েছে পরিবারগুলো।

সরেজমিনে ইছাখালী ইউনিয়নের চুনি মিঝির টেক গিয়ে দেখা যায়, সরকারি খাস জমি দখল করে অনেকে দিঘী খনন করেছেন। আবার কেউ কেউ সড়কের পাশে ও ফসলি জমি কেটে দিঘী খনন করেছেন। পানি চলাচলের একমাত্র খাল দখল করে রেখেছেন তারা। সামান্য বৃষ্টি হলে পানি চলাচলের কোনো জায়গা থাকে না। এলাকার অধিকাংশ পরিবারের ঘরে ঢুকে যায় বৃষ্টির পানি। এতে বিপাকে পড়েছে ওই এলাকার প্রায় ৩০০ পরিবার।

খাস জমি দখল করে মাছচাষ, পানিবন্দি ৩০০ পরিবার

স্থানীয়দের অভিযোগ, ১০-১৫ জনের একটি সিন্ডিকেট ওই এলাকার কোম্পানী নগর খালটির জায়গা দখল করে দিঘী কেটে মাছচাষ করছে। এতে করে পানি নিষ্কাশনের জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০০ পরিবার।

পানিবন্দি হয়ে থাকা গৃহবধূ নাছিমা জানান, তার দুই সন্তান এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। ঠিকমতো সন্তানদের খাবারও দিতে পারেন না। টিউবওয়েলে পানি ওঠে না। পানির জন্য ১ কিলোমিটার হাঁটা লাগে। দিঘীর পাশে বড় করে পানি চলাচলের জায়গা করলে পানি জমে থাকতো না বলে জানান তিনি।

খাস জমি দখল করে মাছচাষ, পানিবন্দি ৩০০ পরিবার

ষাটোর্ধ্ব বিবি ছকিনা জানান, এই এলাকায় কখনো পানি উঠতো না। দিঘী খনন হওয়ার পর হালকা বৃষ্টি হলে ঘর বাড়িতে পানি উঠে যায়। দিঘীর মালিকদের কিছু বললে তারা ঘর-বাড়ি বিক্রি করে চলে যাওয়ার হুমকি দেন।

সাবেক ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দিন বলেন, এই জায়গায় ৮৬ ফুট সরকারি খাস জায়গা ছিল। পানি চলাচলের জন্য অনেক বড় খাল ছিল। কিন্তু মাছচাষিরা দিঘী খনন করে খালের জায়গা দখল করে নিয়েছে। এখন পানি চলাচলের কোনো জায়গা নেই। হালকা বৃষ্টি হলে পানি জমে প্রায় ৩০০ পরিবার কষ্ট করে। খালের জায়গা উন্মুক্ত করে দিলে আর পানি জমে থাকবে না।

তবে খাল দখল করে দীঘি খনন করা ইয়াছিন ও হারুন অর রশিদ জানান, ইছাখালীতে শুধু আমরা না, অনেকে দীঘি খনন করে আসছে। তাদের বিষয়ে কেউ কিছু বলছে না। আমরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। পুরো দীঘির পাড় কেটে দিলে আমাদের অনেক লোকসান হবে। তবে বাড়িঘরের পানি কমে যাওয়ার জন্য আমরা প্রকল্প থেকে পানি যাওয়ার পাইপ বসিয়েছি।

খাস জমি দখল করে মাছচাষ, পানিবন্দি ৩০০ পরিবার

এ বিষয়ে ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তাফা বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। মাছচাষিরা অবৈধভাবে দিঘী খনন করেছে। বিগত তিন বছর ধরে ওই এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে অনেক কষ্ট করছেন। বিষয়টি আমাদের এমপি মাহবুবউর রহমান রুহেল ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একাধিকবার অবহিত করেছি। আশা করছি শিগগিরই তারা এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

মিরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, আমি নিজে এই এলাকা পরিদর্শন করেছি। অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। অবৈধ দিঘী খননের কারণে পানি জমে থাকে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।

এম মাঈন উদ্দিন/এফএ/এমএস

Read Entire Article