মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে রয়েছে নানা ভাষাভাষী ও ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষজন। এরমধ্যে বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিসমৃদ্ধ অন্যতম একটি সম্প্রদায় খাসিয়া। সবুজ পাহাড়ের নিরালা টিলার ফাঁকে তাদের বসবাস। পাহাড়ে পান চাষাবাদ যাদের জীবিকার মূল উৎস। এদের রয়েছে বৈচিত্রময় জীবন আলেখ্য।
সংস্কৃতি মতে প্রতিবছর তারা ২৩ নভেম্বর বর্ষবিদায় ও নতুন বছর বরণের ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ অনুষ্ঠান উদযাপন করে থাকে। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে এ বছর তা উদযাপন হচ্ছে না বলে জানিয়েছে খাসিয়া সোশ্যাল কাউন্সিল।
তারা জানায়, খাসি পানই তাদের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম। কিন্তু চলতি বছর এক শ্রেণির মধ্যসত্ত্বভোগীরা পানের বাজার দখল করে নেওয়ায় ন্যায্যমূল্যে পান বিক্রি করতে পারেননি তারা। এতে বাজারে পানের দাম পড়ে গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন চালানো কঠিন হয়ে গেছে। তাই অর্থসংকটে ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী খাসিয়া সম্প্রদায়ের বর্ষ অনুষ্ঠান চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
অনুষ্ঠান আয়োজকদের অন্যতম সদস্য সাজু মরচিয়াং বলেন, পান চাষে খরচ বেড়েছে। ব্যাংকগুলো সহজভাবে ঋণ প্রদান করলে আমরা পান চাষ বৃদ্ধি করতে পারতাম। পান চাষিরা বাধ্য হয়ে মধ্যসত্ত্বভোগী মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ এনে এদের হাতে বন্দি হয়ে যান। তারা সিন্ডিকেট করে চাষিদের কাছ থেকে কম দামে পান কিনে বাজারে অধিক লাভে বিক্রি করেন। বাজারের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে থাকে। এতে সাধারণ পান চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী জানান, খাসিয়াদের আয়ের উৎস পান। এবার ব্যবসায় মন্দা চলায় পানের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। এ কারণে অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছেন তারা। অনুষ্ঠান করতে দুই লাখ টাকার মতো খরচ হয় তাদের। এই টাকা জোগাড় না হওয়ায় এ বছর অনুষ্ঠান করছেন না তারা। তবে ঘরোয়াভাবে এই অনুষ্ঠান করা হবে।
প্রতিবছর সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ এই উৎসবে অংশ নেন। দেশ-বিদেশের পর্যটকরাও আসেন অনুষ্ঠানে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে নতুন বর্ষবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠান হয়। খাসিয়ারা তাদের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে আদি পাহাড়ি নৃত্য ও গান পরিবেশন করেন। পাশপাশি তাদের জীবন-জীবিকার প্রধান উৎসব জুমচাষের এবং জীবন জীবিকার বিভিন্ন পদ্ধতি নৃত্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন।
ওমর ফারুক নাঈম/এফএ/জেআইএম