ক্রিকেট দুনিয়ার ঝলমলে মঞ্চে এমন কিছু সম্পর্ক আছে, যা খেলার সীমানা ছাড়িয়ে অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। মিচেল স্টার্ক ও অ্যালিসা হিলির সম্পর্ক সেই বিরল উদাহরণগুলোর একটি। তারা কেবল মাঠে প্রতিপক্ষকে হারাননি, জীবনেও গড়ে তুলেছেন এক অসাধারণ জুটি-যাদের বলা হয় ‘ক্রিকেটের পাওয়ার কাপল’।

দুজনের গল্প শুরু হয় শৈশবেই। যখন তাদের বয়স ছিল মাত্র ৯। সিডনির নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্ট জুনিয়র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের দলে একসঙ্গে খেলতেন তারা। কাকতালীয়ভাবে তখন দুজনই উইকেটকিপার ছিলেন আর তাদের কোচ ছিলেন মিচেল স্টার্কের বাবা পল স্টার্ক। প্রথমদিকে স্টার্কের ভাগ্যে মাঠে নামা হতো কমই, কারণ দলে একটিই কিপারের জায়গা ছিল। কিন্তু সেই ‘বঞ্চনাই’ তাকে ঠেলে দেয় এক নতুন ভূমিকায়-বোলার হওয়ার পথে।

স্টার্কের বন্ধুরা জানতেন, দলের সোনালি চুলের মেয়েটির প্রতি তার বিশেষ দুর্বলতা আছে। তবে মুখে কিছুই বলেননি ছোট্ট মিচেল। সময় কেটে যায়, কিন্তু হিলিকে ভুলতে পারেননি কখনো।

দুজনের কেউই ঠিক করে বলতে পারেন না, কবে বন্ধুত্ব প্রেমে রূপ নেয়। স্টার্ক একবার বিদেশ সফরে যাওয়ার সময় হঠাৎ বুঝতে পারেন হিলির অভাবটা অন্যরকমভাবে অনুভব করছেন তিনি। তাই সোজাসাপ্টা জিজ্ঞেস করে বসেন, ‘আমরা কি প্রেম করছি?’ হিলিও হাসিমুখে হ্যাঁ বলে দেন। সেই সহজ কথোপকথনই পরিণত হয় তাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়ে।

১৯৯০ সালে জন্ম নেওয়া এই দুই ক্রিকেটারেরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ২০১০ সালে। ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকায় হলেও দুজনই নিজ নিজ ক্ষেত্রে হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তি।

অ্যালিসা হিলি এখন অস্ট্রেলিয়া নারী দলের অধিনায়ক ও ইতিহাসের অন্যতম সফল উইকেটকিপার–ব্যাটার। অন্যদিকে বাঁহাতি পেসার মিচেল স্টার্ক আধুনিক যুগের ভয়ংকরতম বোলারদের একজন।

অ্যালিসা হিলির আরেকটি পরিচয়ও আছে, তিনি কিংবদন্তি অস্ট্রেলীয় কিপার ইয়ান হিলির ভাতিজি। তবে সময়ের সঙ্গে নিজের প্রতিভা ও সাফল্যে তিনি চাচার ছায়া অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছেন।

দীর্ঘ সাত বছর প্রেমের পর ২০১৫ সালে বাগদান সারেন দুজন। ২০১৬ সালে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন দুজনের কাছেই বিশ্বকাপজয়ের অভিজ্ঞতা ছিল। এখন পর্যন্ত অ্যালিসা হিলির ঝুলিতে রয়েছে ৮টি বিশ্বকাপ (৬টি টি–টোয়েন্টি, ২টি ওয়ানডে), আর মিচেল স্টার্কের দখলে ৩টি বিশ্বকাপ ট্রফি (২টি ওয়ানডে, ১টি টি–টোয়েন্টি)।

দুজনেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ত থাকেন বছরের বেশির ভাগ সময়। কখনো স্টার্ক সফরে, কখনো হিলি। তাই তাদের সম্পর্কের নীরব তৃতীয় সঙ্গী হয়ে আছে ফোন ও ভিডিওকল। সময় পেলেই একে অপরের ম্যাচে হাজির হন, এমনকি কখনো ছুটি নিয়েও।

স্টার্কের স্ত্রীপ্রেমও কম আলোচিত নয়। একবার হিলির খেলা দেখতে তিনি অস্ট্রেলিয়া দলের সফর থেকেই ছুটি নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, কয়েক মৌসুম আইপিএলেও খেলেননি শুধু স্ত্রীকে সময় দেওয়ার জন্য। এখন অবশ্য দুজনেই ভারতের মাঠে একসঙ্গে সময় কাটান, কখনো খেলায়, কখনো অবসরে।

হিলি ও স্টার্ক প্রতিবছর গলফ টুর্নামেন্টে অংশ নেন, নাম দিয়েছেন ‘স্টিলি কাপ’-তাদের নামের অক্ষর মিলিয়ে। এমনকি সেই কাপটিও তারা নিজের করে নেন। তবে সেটির মজার দাবি নিয়ে হাসিঠাট্টা চলতে থাকে সারা বছর।

আরও এক কৌতূহলোদ্দীপক মিল। দুজনেরই টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান ৯৯! স্টার্ক মজা করে প্রায়ই বলেন, ‘আমরা একে অপরের সঙ্গেই সমান স্কোরে থেমেছি।’

এই দম্পতির দুইটি কুকুরও আছে, যাদের তারা উদ্ধার করেছিলেন রাস্তা থেকে। এখন সেই দুই প্রাণীই তাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।

স্টার্ক ও হিলির গল্পটি একদিকে ক্রিকেটের, অন্যদিকে নিখাদ ভালোবাসার। যেখানে প্রতিযোগিতা আছে, দূরত্ব আছে কিন্তু সবচেয়ে বড় জায়গা দখল করে আছে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমর্থন। তাদের জীবনের গল্প প্রমাণ করে খেলার মাঠে জয় মানে শুধু ট্রফি নয়, কখনো কখনো তা মানে জীবনের সঙ্গীকে খুঁজে পাওয়া।
জেএস/

2 hours ago
5









English (US) ·