খোলা ম্যানহোল ঢেকে দিতে, বেষ্টনী তৈরি ও সাইনবোর্ড লাগানোর নির্দেশ

1 day ago 6

দুর্ঘটনারোধে জরুরি ভিত্তিতে দেশের সব ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল ঢেকে দিতে, সুরক্ষাবেষ্টনী নির্মাণ ও স্পষ্ট সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপনে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণে ব্যর্থতা ও ভুক্তভোগীর (ফারিয়া তাসনিম ওরফে জ্যোতির) মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন ৯০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তের ফলাফল ও গৃহীত নিরাপত্তাব্যবস্থা জনসমক্ষে প্রকাশ করা এবং তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার সচিব, গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসকসহ বিবাদীদের প্রতি এসব নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গাজীপুরের টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় নালায় পড়ে ফারিয়া তাসনিম ওরফে জ্যোতির (৩২) নিখোঁজের পর মৃত্যুর ঘটনায় এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।

আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) প্যানেল আইনজীবী আনিতা গাজী রহমান। তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. শাহিনুজ্জামান শাহিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খান জিয়াউর রহমান।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৭ জুলাই রাতে গন্তব্যে ফেরার পথে ওই নারী হোসেন মার্কেট এলাকায় ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামনে খোলা ম্যানহোলে পড়ে যান। প্রায় ৩৭ ঘণ্টা পর ২৯ জুলাই টঙ্গীর শালিকচূড়া বিল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশনের কর্মীরা।

ওই নালার রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা চ্যালেঞ্জ করে ব্লাস্ট ও আসক গত ২৪ আগস্ট রিটটি করে। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন হাইকোর্ট।

আইনজীবী আনিতা গাজী রহমান বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে টঙ্গীর ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের ফুটপাতসংলগ্ন এলাকার উন্মুক্ত ওই ড্রেন সুরক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত এবং সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তার পরিপন্থি কেন ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়ে রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা যায় যে ঢাকনাবিহীন ওই ম্যানহোল দীর্ঘদিন ধরে খোলা অবস্থায় পড়ে ছিল। সেগুলোর আশপাশে কোনো ধরনের নিরাপত্তাবেষ্টনী বা সতর্কীকরণ চিহ্ন ছিল না। একই স্থানে ইতিপূর্বে আরও একজন নারী পড়েছিলেন, যাকে স্থানীয় লোকজন দ্রুত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলগুলো সংস্কার করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থার গাফিলতি ও সমন্বয়হীনতার অভাব লক্ষ করা গেছে।

ঘটনার তিনদিন পর গত ২৯ জুলাই সকাল ৯টার দিকে টঙ্গীর শালিকচূড়া বিল থেকে ফারিয়া তাসনিম ওরফে জ্যোতির মরদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশনের কর্মীরা।

ওইদিন টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা শাহিন আলম বলেন, ফারিয়া তাসনিম যে ড্রেনে পড়েছিলেন, সেই ড্রেনের পানি শালিকচূড়া বিলে গিয়ে পড়ে। সকালে সেখানে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে তার মরদেহটি পাওয়া যায়।

ফারিয়া তাসনিম চুয়াডাঙ্গার সদর থানার বাগানপাড়া এলাকার বাসিন্দা ওয়াসিম উল্লাহ আহমেদের মেয়ে। তিনি টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকার ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ওষুধ বিপণনের কাজে এসেছিলেন। একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামনের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে একটি ড্রেনের অংশে দীর্ঘদিন ধরে কোনো ঢাকনা ছিল না। ছিল না কোনো সতর্কতামূলক সাইনবোর্ডও। গত ২৭ জুলাই রাতে হেঁটে যাওয়ার সময় অসাবধানতাবশত ফারিয়া তাসনিম ওই খোলা ড্রেনে পড়ে যান। পানির প্রবল স্রোতে তিনি নিখোঁজ হন।

দুর্ঘটনার পরপরই গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশনের কর্মীরা যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। অবশেষে ২৯ জুলাই সকালে শালিকচূড়া বিল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশন ও বিআরটি প্রকল্প কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। তারা বলেন, এমন ব্যস্ত এলাকায় খোলা ড্রেন রেখে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

নিহত নারীর বড় ভাই মো. শোভন বলেন, বোনের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বিভিন্নভাবে খোঁজ করতে থাকি। একপর্যায়ে ২৮ জুলাই সকাল ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে বোনের ব্যবহৃত জুতা পেয়ে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হই।

এফএইচ/ইএ/এএসএম

Read Entire Article