গণঅধিকার পরিষদে জায়গা পেলেন পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলা কৃষক লীগের নেত্রী শেফালি পারভিন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কৃষক লীগ বাদ দিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন ভিপি নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদের আটোয়ারী উপজেলার আহ্বায়ক পদটি। হাসিনা সরকার পতনের পর নিজের গা বাঁচাতে তার এ কৌশল- এমনটাই বলছেন সচেতন মহল।
গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে কেউ পাড়ি জমিয়েছেন দেশের বাইরে, আবার কেউবা রয়েছেন জেলহাজতে। আবার শাস্তি অথবা কারাবরণের ভয়ে কেউবা দিয়েছেন গা ঢাকা। অনেকেই আবার নিজেকে বাঁচানোর জন্য আওয়ামী লীগ থেকে বিভিন্ন দলে যোগ দিচ্ছেন বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
গত ১ জানুয়ারি পঞ্চগড় জেলা গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মাহাফুজার রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব হরুন-অর-রশিদের স্বাক্ষরিত এক পত্রে ২০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে শেফালি পারভিনকে আহ্বায়ক করা হয়।
দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় আটোয়ারী উপজেলায় করেছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতি। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে ২০২২ সালের জুন মাসে উপজেলা কৃষক লীগের সম্মেলনের খসড়া তালিকায় যুগ্ম সম্পাদকের পদ পেয়েছিলেন শেফালি পারভিন।
পরে নবনির্বাচিত উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সম্পাদকের পদ পেয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ২০২২ সালের ২০ জুন বিকেলে বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবুল লতিফ তারিন ও পঞ্চগড় জেলা কৃষক লীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে পঞ্চগড় জেলা পরিষদ চত্বরে শেখ মজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পরের দিন ২১ জুন সকালে আটোয়ারী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের উপস্থিতিতে এবং শেফালি পারভিনসহ নবনির্বাচিত কৃষক লীগের কমিটির সদস্যরা শেখ মজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পরে ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শেখ মজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের সময়ও দেখা মিলেছিল সদ্য যোগদানকৃত আটোয়ারী উপজেলার গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক শেফালি পারভিনকে।
সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল শেফালি পারভিনের। আওয়ামী লীগের নিয়মিত দলীয় মিটিং, মিছিল এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ নানা কার্মকাণ্ডে বেশ সক্রিয় ছিলেন তিনি।
ঘটনাচক্রে ধামোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহের মো. দুলালের সঙ্গে শেফালি পারভিনের পারিবারিক ঝামেলা বাধে। সে ঝামেলাকে কেন্দ্র করে ধামোর ইউনিয়ন পরিষদচত্বরে চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রকাশ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে তার। চেয়ারম্যানের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঝামেলাটাই যেন তার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। অভিযোগ ওঠে, আওয়ামী লীগের মূল দলের সিনিয়র নেতাকর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকে শেফালি পারভিন।
পরে ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জেলা কর্তৃক আটোয়ারী উপজেলা কৃষক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু অজানা কারণে যুগ্ম সম্পাদকের পদ থেকে নাম বাদ পড়ে যায় শেফালি পারভিনের।
কী কারণে আটোয়ারী উপজেলা কৃষক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে শেফালি পারভিনের নাম বাদ পড়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান গোলাপ কালবেলাকে বলেন, আমাদের আটোয়ারী উপজেলা কৃষক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ২০২২ সালের ১৯ জুন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে সবার নাম খসড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই খসড়া তালিকাটা আমরা ২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি অনুমোদনের জন্য জেলায় পাঠাই। ২৩ ফেব্রুয়ারি জেলা থেকে ওই কমিটির পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানে শেফালি পারভিনের নাম বাদ পড়ে। তবে সে আওয়ামী লীগের কর্মী ছিল।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা শেফালি পারভিন কীভাবে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হলেন এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা গণঅধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব হরুন-অর-রশিদ কালবেলাকে জানান, শেফালি পারভিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন সেই বিষয়ে আমরা অবগত ছিলাম। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেছেন মর্মে আমাদের কাছে একটি লিখিত পত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে আমরা তা যাচাই-বাছাই করে দেখি যে, তিনি আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার থাকাবস্থায় তার দলের লোকজন কর্তৃক নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বিধায় দল ত্যাগ করে আমাদের গণঅধিকার পরিষদে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আটোয়ারী উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক কমিটি মাত্র ছয় মাসের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমরা পরবর্তীতে তাকে দলে রাখব কিনা সেটা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
এদিকে, শেফালি পারভিন আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেছিলেন কিনা সে বিষয়ে কোনো পদত্যাগপত্রের তথ্য পাওয়া যায়নি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে তৎকালীন আটোয়ারী উপজেলা কৃষক লীগের নেত্রী ও বর্তমান গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক শেফালি পারভিনের ফোনে কল করলে তিনি কালবেলাকে কোনো সদুত্তর না দিয়ে বরং পত্রিকার সম্পাদকসহ প্রতিবেদককে মামলার হুমকি দিয়ে কল কেটে দেন।