গণভোটের প্রচারে জোর, ভোটদানে বাড়ছে গোপনকক্ষ

নির্বাচন কমিশন (ইসি) দেশে ৩৪ বছর পর হতে যাওয়া গণভোটের বিষয়ে প্রচারে জোর দিচ্ছে। পাশাপাশি সংস্থাটি জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। তারা স্থানীয়দের আতিথেয়তা নিতে পারবেন না। ভোটদানে গোপনকক্ষ বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে কমিশনের। এছাড়া, তফসিল ঘোষণার পর থেকে মাঠ প্রশাসন ও বিচারিক কর্মকর্তাদের ইসির সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভোট ঘিরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের একজন করে কর্মকর্তা ‘ফোকাল পয়েন্ট’ হয়ে কাজ করবেন। রোববার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভাগের প্রধানসহ সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন। এতে চার নির্বাচন কমিশনারও উপস্থিত ছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হবে। এজন্য ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভোটের কর্মী নিয়োগ পরিকল্পনা, সমন্ব

গণভোটের প্রচারে জোর, ভোটদানে বাড়ছে গোপনকক্ষ

নির্বাচন কমিশন (ইসি) দেশে ৩৪ বছর পর হতে যাওয়া গণভোটের বিষয়ে প্রচারে জোর দিচ্ছে। পাশাপাশি সংস্থাটি জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। তারা স্থানীয়দের আতিথেয়তা নিতে পারবেন না। ভোটদানে গোপনকক্ষ বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে কমিশনের।

এছাড়া, তফসিল ঘোষণার পর থেকে মাঠ প্রশাসন ও বিচারিক কর্মকর্তাদের ইসির সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভোট ঘিরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের একজন করে কর্মকর্তা ‘ফোকাল পয়েন্ট’ হয়ে কাজ করবেন।

রোববার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভাগের প্রধানসহ সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন। এতে চার নির্বাচন কমিশনারও উপস্থিত ছিলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হবে। এজন্য ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভোটের কর্মী নিয়োগ পরিকল্পনা, সমন্বয় ও দিকনির্দেশনামূলক এ সভা হয়।

বৈঠকের বিষয়ে পরে সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, তাদের মূল দায়িত্ব তফসিল ঘোষণার পর থেকে আরও বেশি বেগবান হবে।

বাড়বে গোপনকক্ষ
গণভোট আর সংসদ নির্বাচন নিয়ে মক ভোটিং বা মহড়ার অভিজ্ঞতা থেকে ভোটকেন্দ্র না বাড়িয়ে প্রতিটি ভোটকক্ষে দুটি গোপনকক্ষ রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ইসি সচিব বলেন, ‘মক ভোটিংয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা, যেটা এখন পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে, সেখানে আমরা দেখেছি যে ভোটকেন্দ্র বাড়াতে হবে না। কিন্তু প্রতিটি কক্ষের ভেতরে গোপনকক্ষ, যেখানে আমরা ব্যালটে সিল লাগাই, সেখানে একটা কক্ষ চিন্তা করা হয়েছিল প্রথমে। এখন হয়তো দুটো হবে এবং সে কারণে কিছু বাজেট বাড়বে।’

এছাড়া, ভোটকেন্দ্রে বয়স্ক, নারী ও শারীরিকভাবে অক্ষম ভোটারদের বিষয়ে স্থানীয়ভাবে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বৈঠকে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।

তিন বিভাগে সমন্বয়
এবার সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট রয়েছে। আর প্রবাসীদের ভোটের আওতাধীন আনা হয়েছে। তাই বৈঠকে বলা হয়, প্রতিটি কাজ যথাসময়ে ভালোভাবে করতে হবে। কথা ও কাজের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। শুধু মুখের কথা হলে হবে না, কাজের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশন, মাঠ প্রশাসন ও বিচার বিভাগ- এ তিনটির মধ্যে সমন্বয় খুব জরুরি। ইসির সঙ্গে সমন্বয় রাখতে মন্ত্রণালয়গুলোকে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নিয়োজিত করতে হবে।

ইসি সচিব বলেন, তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে অনুরোধ করেছেন একজন ‘কন্টাক্ট পয়েন্ট’ দিতে, যাতে তারা জরুরি প্রয়োজনে যদি যোগাযোগ করতে হয় তাহলে যেন তাৎক্ষণিকভাবে তা করতে পারেন।

ব্যালট ছাপানো
এবার পৌনে ১৩ কোটি ভোটারকে সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি গণভোট দিতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্য দুটি ব্যালট পেপার ছাপানো হবে। এছাড়া নিবন্ধিত প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারের পাশাপাশি দেশের ভেতরে তিন ধরনের ব্যক্তি পোস্টাল ভোটিংয়ের সুযোগ পাচ্ছেন।

ইসি সচিব জানান, সরকারি প্রিন্টিং প্রেস থেকে ব্যালট পেপার ছাপানো হবে। আর্মি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে ছাপানো হবে প্রবাসীদের ব্যালট পেপারগুলো। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সরকারি প্রিন্টিং প্রেস আর সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ আর্মি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস তত্ত্বাবধান করবে।

ভোট কর্মীদের ভাতা বাড়ছে
ভোটের দায়িত্বে গিয়ে যেন কর্মকর্তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের কোনো ধরনের আতিথেয়তা না নেন সে বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে ইসি।

সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘যারা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন তারা দেখা যায় যে বিভিন্ন সময় স্থানীয় প্রভাবশালীদের আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। এ কথাটা বারবারই আমাদের কানে আসছে। আমরা এবার বলেছি এটা যেন কোনো অবস্থাতেই না হয়। এজন্য ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ভাতার পরিমাণ বাড়ানো এবং অতিরিক্ত কিছু আর্থিক সুবিধা দেওয়ার কথা চিন্তা করা হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, রিটার্নিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারদের স্পষ্ট ভূমিকা এবং তাদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রচার বাড়ানোর তাগিদ
ভোট সামনে রেখে প্রচার শুরু হয়েছে এবং তা বাড়ানোর অনুরোধ করেছে ইসি। সচিব আখতার আহমেদ জানান, বিটিভি এবং সংসদ টিভি ব্যাপক প্রচার এরই মধ্যে শুরু করেছে তিনটি বিষয়ে। তা হলো সংসদ নির্বাচন, প্রবাসী ভোট ও গণভোট। ব্সেরকারি টিভি চ্যানেল ও অন্যান্য প্রচারমাধ্যমেও তা তুলে ধরতে ইসি অনুরোধ করেছে।

ইসি সচিব বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা স্থানীয়ভাবে প্রবাসীদের ভোটের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে উৎসাহী করার বিষয়ে ভূমিকা নেবে। নিবন্ধন করতে পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপ এ পর্যন্ত ডাউনলোড করেছেন দুই লাখেরও বেশি ভোটার। নিবন্ধনে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় রয়েছে।

তিনি জানান, অ্যাপে নিবন্ধন সহজ করা হয়েছে। যারা ভুল তথ্য দিয়েছেন তাদের জন্য ‘এডিট মুড’ চালু করা হয়েছে।

সমন্বয় পয়েন্ট
আখতার আহমেদ জানান, এটি সমন্বয় পয়েন্টের কথা চিন্তা করা হয়েছে। যেখানে ইসি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ নিয়ে এটি হবে। প্রয়োজনে আইসিটি বা অন্য কোনো মন্ত্রণালয়কে দরকার হলে যুক্ত করা হবে।

তিনি বলেন, পোস্টাল ভোটের জন্য ব্যালট পেপার যেখানে ছাপা হচ্ছে এবং বাছাইকেন্দ্র যেখানে আছে, অর্থাৎ তেজগাঁও এবং বিমানবন্দরে, তা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ডাক বিভাগকে পরিদর্শনের জন্য বলা হয়েছে।

দেশে সরকারি চাকরিজীবী, যারা নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন আর যারা আইনি হেফাজতে আছেন- এ তিন ধরনের ব্যক্তিদের ভোটদানে নির্ধারিত সময়ে অ্যাপে নিবন্ধনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন সচিব।

যেসব বিষয়ে জোর
সভায় আচরণবিধি প্রতিপালন থেকে এআইয়ের অপব্যহার রোধে সচেতনতার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। ইসি সচিব বলেন, গণভোটের প্রচার, প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন, আচরণবিধি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার রোধ ও ভোটারদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে।

নিরাপত্তায় নেতৃত্ব
ইসি সচিব বলেন, নিরাপত্তাব্যবস্থা আয়োজনে নেতৃত্ব দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তা আজকে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এমওএস/একিউএফ/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow