গত ১৫ বছর গণমাধ্যম জনগণের কথা বলেনি

5 hours ago 4

বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী দ্বারা মিডিয়া পরিচালিত হওয়ায় দেশে স্বাধীন গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা গড়ে উঠছে না। এই অবস্থার অবসান না হলে দ্রুত এর চরিত্র বদলাবে না। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অধিকারের পাশাপাশি ওয়েজবোর্ড ও বেতন-ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। প্রেস কাউন্সিল ঢেলে সাজাতে হবে। গত ১৫ বছর বাংলাদেশের গণমাধ্যম জনগণের কথা বলেনি। এমনই নিচু পর্যায়ে তাঁবেদারি হয়েছে যে, এখন কেউ কেউ বলছেন এদের অনেকের হাতে রক্ত আছে।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ: গণমাধ্যম প্রসঙ্গ’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয় ও দিকনির্দেশনা নিয়ে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে এই সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমগুলোকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে কমিশন কাজ করছে। সেইসঙ্গে গণমাধ্যমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদন বা সুপারিশ তৈরি করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, গত ১৫ বছর গণমাধ্যম চাপের মুখে ছিল। তারা জনগণের কথা বলতে পারেনি। আমাদের নিজেদেরও আত্মসমালোচনা করতে হবে, আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে। কারণ মিডিয়াগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলে তুলে ধরতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রেস উইংয়ের কাজই ছিল নিউজ বন্ধ করা। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এমন কিছু করছে না।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বেতন প্রসঙ্গে প্রেস সচিব জানান, ওয়েজ বোর্ড সিস্টেম বাতিল করে ন্যূনতম বেতন চালু করা উচিত। ওয়েজ বোর্ড সিস্টেম ত্রুটিপূর্ণ। একটা বেসিক বেতনের নিচে যেন তাকে নিয়োগ না করা যায়। ন্যূনতম বেতনের আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ন্যূনতম বেতনের বাইরে কেউ নিয়োগ দিলে তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে। আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকাগুলো উন্মোচন করা উচিত। তাদের কারণেই সাংবাদিকরা কম বেতন পাচ্ছে।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের একটি শক্তিশালী ইউনিয়ন লাগবে। ইউনিয়নগুলোকে স্বাধীন করতে সংস্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। সংবাদের ক্ষেত্রে কনটেন্ট প্রটেকশন দিতে হবে। যারা অরিজিনাল কনটেন্ট করেন তাদের কপিরাইট প্রটেকশন দিতে হবে। সাংবাদিকতা কোনও সস্তা জিনিস নয় বলেও মন্তব্য করেন প্রেস সচিব।

মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, সংস্কারের কথা বললে ইতিহাসের সংস্কার হওয়া উচিত। কারণ সরকার বদলে গেলে  ইতিহাস বদলে যায়। সংস্কারের জন্য কমিশনগুলো দিনরাত পরিশ্রম করছেন। কিন্তু রাজনৈতিক সরকার এসে সেটা বাস্তবায়ন না করলে কোনো লাভ হবে না। আর লক্ষ্যহীনভাবে সংস্কার করতে চাইলে কোনো কাজে আসবে না।

সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি হয়ে যাওয়ার কারণে সাংবাদিকতার বর্তমান দুরবস্থা। সরকারের হস্তক্ষেপ যত বাড়বে সংবাদপত্রের স্বকীয়তা তত নষ্ট হবে। ৫ আগস্টের পরও বিভিন্ন এজেন্সির শুভেচ্ছা সফর শুরু হয়েছে বিভিন্ন মিডিয়া হাউজে।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কালাকানুনগুলো বাতিল করতে হবে। নির্বাচিত সরকার আসলে কালাকানুন বাতিল হবে কিনা তা সন্দেহ আছে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের আইসিটি আইন বাতিল করা উচিত।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সাংবাদিকদের অধিকার ও আত্মমর্যাদা নিশ্চিত করা ছাড়া সেই ধরনের সাংবাদিক পাবে না, যারা মুখের ওপর প্রশ্ন করতে পারবে। সব দুর্নীতি ও অন্যায়-অনিয়মের জবাব চাইতে পারবে।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম এ আজিজ বলেন, গণমাধ্যম স্বাধীন হওয়ার আগে গণতন্ত্র দরকার। সংবাদপত্র সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করতে হবে। তারপর তার দায়িত্ব দিতে হবে একজন সিনিয়র সাংবাদিককে কোনো আমলা বা রাজনীতিবিদকে নয়।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ইউনিয়ন দুইভাগে বিভক্ত, যা এক করতে হবে। তা না হলে তারা প্রেশারগ্রুপ হিসেবে থাকবে না। অস্বচ্ছ সাংবাদিকদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

সূচনা বক্তব্যে সংলাপের সঞ্চালক সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, গণতন্ত্র হত্যা ও মানবাধিকার লংঘনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম সহযোগী ভূমিকা পালন করেছে। ডিজিএফআই ও এনএসআইসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কিভাবে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং তা থেকে কি ভাবে বের হওয়া যায়, সেটা ঠিক করতে হবে।

সিজিএসের চেয়ারপারসন মুনিরা খানের সভাপতিত্বে সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম শামীম রেজা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামাল, পারভীন এফ চৌধুরী, জায়মা ইসলাম, ডিজিটাল রাইট বিডি'র প্রতিষ্ঠাতা মিরাজ আহমেদ চৌধুরী, এএফপির ফ্যাক্ট চেকার কাদেরুদ্দীন শিশির, নাগরিক কমিটির সদস্য তুহিন খান প্রমুখ।

Read Entire Article