‘গরিপের আবার ঘুড়া রুগ’

3 months ago 61

অমিয় দাশ, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র

‘জজ ব্যারিস্টার না হলেও অফিসার হবে। বুঝলে, অফিসার।’ ঈশরাত আপুর মা অপ্রয়োজনীয়ভাবে ইচ্ছা করেই রান্না-বান্না করার কিছু তৈজস, হাতা বা খুন্তি দিয়ে একটু বেশি শব্দ করে কড়াই বা হাড়িতে নাড়া দিয়ে চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘আমার এই যে কিলাশ ফাইপ ফাশ কইরাই বিয়া অইলো।

আই কি খারাপ আচিনি? নিহাফরা হিগ্যা হের কি আর দুইডা বেশি চুক গজইতো? ঈশরাত আপুর আব্বা অপলকে চেয়ে থাকে ঈশরাত আপুর দিকে। অনেক আদর আর প্রশান্তি তার চোখে। আম্মা ক্ষান্ত দেয় না। তিরস্কারের সুরে বলে, ‘মাইয়া অপিচার হইবো। তাইলেই হইচে। গরিপের আবার ঘুড়া রুগ।’

কিছুক্ষণ চুপচাপ। শুধু মচ্মচ্ মুড়ি খাওয়ার শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা গেলো না। সবাই নিশ্চুপ।

ভাবলাম ঝড় মনে হয় থামলো। কিন্তু তা হলো না। নিজেকে নিজে বলার মতোই আম্মা গজ-গজ করলেন, ‘ওই পাড়ার মেম্বর ছাব যে ডাক্তর ফুলাডার হম্বন্ধ আইনলো, হেইডাও সাফ্ না কইরা দিলো। ফুলাডা নাহি দ্যাখতে কালা। ডাক্তর মাইন্সের আবার কালা আর ধলা কি? ডাক্তর তো ডাক্তরই। হেরপর আরো কত কি? ফুলা নাহি হাতুইররা ডাক্তর। হেইতো আর হাকিমী, কবিরাজী, ঝাড়ফুক্ কইত্তো ন। ডাক্তর ফুলা। ব্যাবাকে না কইরা দিলো। আমার কপাল!’

ঠাশ ঠাশ দুটো শব্দ এলো। মনে হয় ঈশরাত আপুর আম্মা কপাল চাপড়ালেন। আমার মনে হচ্ছিলো আরো ঝড় আসছে।

কিছু বোঝার আগেই ঈশরাত আপু আমাকে ফিস্ ফিস্ করে বললো, ‘দীপ্ত, তুই এখন বাড়ি যা, কাল বিকালে আসিস্।’
আমি হ্যাঁ সূচক ঘাড় নাড়লাম। ফিস্ ফিসি্য়ে বললো, ‘আসিস্ কিন্তু।’

আগের পর্ব পড়ুন

আমি ঘাড় নেড়ে নিঃশব্দে চলে এলাম। আসার পথে খুব মনে হয়েছিল, আচ্ছা, ঘোড়ারোগ কি রোগ? ঘোড়ারোগ হলে কি হয়? গরিবদেরই কি ঘোড়ারোগ হয়? শুনেছি ঘোড়ারা নাকি রাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমায়। গরিবের ঘোড়ারোগ হলে কি মানুষ বিছানায় আর শুতে পারে না? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমায়? আবার মনে হয়েছিল ঈশরাত আপুর মনে হয় ওই ডাক্তার ছেলেটার সাথেই বিয়ে হওয়া উচিত ছিল।

ডাক্তার জামাই নিশ্চয়ই ঘোড়ারোগের একটা ওষুধ দিতে পারবে। যদি ঈশরাত আপুর আব্বার ঘোড়ারোগ হয়েই থাকে।
পরের দিন বিকেলের পড়া শেষ করে আমি ঈশরাত আপুদের বাড়িতে গেলাম। আপু যেতে বলেছিল, হয়তো বাতাসা বা দানাদার দিতে পারেনি ঝগড়াঝাঁটির তান্ডবে, তাই ডেকেছে।

এদিক-ওদিক তাকিয়ে বিকেল বেলায় আমি ঈশরাত আপুদের বাড়িতে ঢুকলাম। উঠান পর্যন্ত এলাম বটে, তবে বেশ ভয়ে ভয়ে। আস্তে আস্তে সন্তর্পণে পা টিপে টিপে হাঁটছিলাম, যেন কোনো শব্দ না হয়। গতকাল যে একটা তান্ডব দেখে গিয়েছিলাম, তা কোথায় গড়ালো কে জানে? বুকের মধ্যে একটা ভয় এজন্যে, হয়তো ঈশরাত আপুর মা আমাকে বারবার ওদের বাড়িতে আসতে দেখে ধমকিয়ে বলবে,

‘এই তুই আবার আইছস্’?
ঈশরাত আপুকে আবার ধমকাবে। হয়তো বলবে,
‘তুই এই ফুলাডার লগে কি পুটুস্ পুটুস্ করোচ্? আয় এইহানে, এই থাল-বাসনগুলো ধো। সংসারের এট্টু কামে লাগ’, ইত্যাদি।

নাহ্, আমি ঈশরাত আপু ছাড়া আর কাউকেই ওদের বাড়িতে দেখলাম না। ঈশরাত আপু একা একা বারান্দায় বসে, কাগজ কেটে কি যেন একটা ডিজাইন বানাচ্ছে। আমি আবার ভয়ে ভয়ে ওদের রান্না ঘরের দিকে তাকাতেই ঈশরাত আপু নাক দিয়ে হিস্ হিস্ শব্দ করে হেসে বলল, ‘ভয় নেই রে দীপ্ত! সবাই শান্ত হয়েছে। আব্বা বাজারে গেছে। আর আম্মা ওই বাড়ির কাকির সাথে গল্প করতে গেছে।’

এমআরএম/এএসএম

Read Entire Article