শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাইবান্ধার কৃষকেরা। চলতি বছরের অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা এখন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শীতকালীন সবজি চাষে ঝুঁকছেন। কিছুদিনের মধ্যে তাদের উৎপাদিত সবজি নামবে বাজারে। শীতকালীন সবজি বিক্রি করে বেশি লাভবান হওয়ার স্বপ্ন এখন কৃষকের চোখে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও জেলায় বাম্পার ফলন হওয়ার আশা কৃষকদের। তবে মাঠ পর্যায়ে সঠিক সময়ে কৃষি কর্মকর্তারা তেমন কোনো পরামর্শ দেননি বলে অভিযোগ কৃষকদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, প্রতি বছর জেলায় উৎপাদিত সবজি জেলার চাহিদা পূরণ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণ করে থাকে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৬ হাজার ৯৪৭ হেক্টর জমিতে শাক-সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবজির ভালো ফলনের জন্য কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। চলতি বছর বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে সবজি চাষে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। নষ্ট হয়ে গেছে বীজ ও চারা। এর বিরূপ প্রভাব পড়ে জেলার বাজারগুলোতে। হঠাৎ বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম বেড়ে যায়। বর্ষা মৌসুম কেটে যাওয়ায় কৃষকেরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শুরু করেছেন শীতকালীন সবজি চাষ।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চাষ করা সবজির মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, টমেটো, শিম, লাউ, পালংশাক, লালশাক, ধনেপাতাসহ হরেক রকম শাক-সবজি আছে। সরেজমিনে জানা গেছে, কৃষকদের মধ্যে কেউ জমি তৈরি করছেন। আবার কেউ জমিতে বীজ বা চারা রোপণ করছেন। কেউ আবার জমিতে গজিয়ে ওঠা সবজির চারা গাছের পরিচর্যা করছেন। সব মিলিয়ে কৃষকেরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সবজি ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার ও পানি দিতে ব্যস্ত কৃষকেরা। অনাগত ফসলের দিকে তাকিয়ে তাদের মুখে ফুটছে তৃপ্তির হাসি। কৃষকদের অভিযোগ, সঠিক সময়ে কৃষি কর্মকর্তারা কোনো ধরনের পরামর্শ বা সহেযোগিতা করেন না। জেলার প্রান্তিক কৃষক আজগর আলী, বকুল মিয়া ও পারভীন বেগম কাজ করছেন মাঠে। শীতকালীন শাক-সবজি উৎপাদনের জন্য কেউ করছেন জমি প্রস্তুত আবার কেউ কেউ করছেন ক্ষেত পরিচর্যা। এ বছর বেশি লাভের আশায় হেমন্তের তীব্র রোদে দিনভর মাঠে ঘাম ঝরাচ্ছেন তারা।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দক্ষিণপুর গ্রামের কৃষক আজগর আলী এ বছর বীজ-সার-কীটনাশক ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের দাম বেশি থাকায় হিমশিম খাচ্ছেন। এরই প্রভাবে উৎপাদন কম হওয়ার শঙ্কায় ভুগছেন তিনি। বেশি লাভের আশায় শীতকালীন শাক-সবজি চাষে মাঠে ঘাম ঝড়াচ্ছেন।
কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘এরই মধ্যে দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ ও মুলা আবাদ করেছি। কিছুদিন পরে ফসল বিক্রি করা যেতে পারে। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। গত বছরের চেয়ে বেশি খরচ হয়েছে। তাই বেশি ফলন ও ভালো দাম পেলে লাভবান হওয়া সম্ভব।’
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শিবপুর গ্রামের কৃষক সামাদ মিয়া বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এ বছরও শীতের সবজি হিসেবে গাজর ও বেগুনসহ অন্য শাক-সবজি আবাদ করেছি। এতে কৃষি বিভাগের কোনো ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যায় না। তাদের পরার্শ কিংবা প্রণোদনা পেলে আরও লাভবান হওয়া যেত।’
পলাশবাড়ী উপজেলার আমলাগামী গ্রামের কৃষক হেলাল মিয়া বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে শীতকালীন সবজি আবাদ করেছি চড়া দামের বীজ ও সার কিনে। আমাদের উৎপাদিত সবজি যখন বাজারে উঠবে; তখন দাম কমে যাবে। কৃষি অফিস থেকে আমাদের যে একটু পরামর্শ বা সহযোগিতা করবে, সেটাও করে না।’
গাইবান্ধা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘চলতি রবি মৌসুমে কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে বীজ-সার পর্যায়ক্রমে বিতরণ হচ্ছে। শীতকালীন শাক-সবজির অধিক ফলন পেতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে।’
এ এইচ শামীম/এসইউ/এএসএম