গাছে উঠতে না পারায় ‘লিচু কন্যাদের’ মজুরি কম!

3 months ago 54

ঈশ্বরদীর রসালো লিচুর কদর দেশজুড়ে। মধুমাস এলেই ফলপ্রেমীদের নজর থাকে ঈশ্বরদীর আঁশমুক্ত সুস্বাদু লিচুর দিকে। তবে অনেকেরই হয়তো জানা নেই লিচু উৎপাদন, পরিচর্যা ও বিপণন কাজের সঙ্গে এই উপজেলার ২৫-৩০ হাজার নারীশ্রমিক জড়িত। স্থানীয়ভাবে তারা পরিচিত ‘লিচু কন্যা’ হিসেবে।

গতবছর এসব লিচু কন্যাদের হাজিরা ছিল ৩০০-৩৫০ টাকা। এবার তাদের হাজিরা বেড়ে হয়েছে ৪০০-৫০০ টাকা। গতবছরের চেয়ে গড়ে ১০০ টাকা মজুরি বাড়লে খুশি নন লিচু কন্যারা। তাদের অভিযোগ, পুরুষ শ্রমিকদের সমপরিমাণ কাজ করলেও তাদের মজুরি কম। সংশ্লিষ্টদের দাবি, গাছে উঠতে না পারায় পারিশ্রমিকে পিছিয়ে নারী শ্রমিকরা।

গাছে উঠতে না পারায় ‘লিচু কন্যাদের’ মজুরি কম!

লিচু চাষিরা জানান, লিচু বাগান পরিচর্যা থেকে শুরু করে লিচু বাজাতকরণ পর্যন্ত সব কাজে নারী শ্রমিকদের ভূমিকা রয়েছে। লিচু সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণের জন্য পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে তারা সমানতালে কাজ করেন। তবে পুরুষ শ্রমিকের দিন হাজিরার ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে। যারা গাছ থেকে লিচু পাড়েন ও বাছাই করেন তাদের হাজিরা (মজুরি) ৬০০ টাকা। যারা গণনা করেন তাদের ৮০০ টাকা। আর যারা বাজারজাতকরণের জন্য প্যাকেট করেন তাদের হাজিরা ১২০০ টাকা। পুুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি নারী শ্রমিকদের মজুরিও কমবেশি রয়েছে। যারা লিচু বাছাইয়ের কাজ করেন তাদের হাজিরা ৪০০ টাকা। আর যারা গণনা করেন তাদের হাজিরা ৫০০ টাকা।

লিচু চাষে জাতীয় স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কৃষক আব্দুল জলিল কিতাব মন্ডল জাগো নিউজকে জানান, লিচু মৌসুমে এ উপজেলার ২৫-৩০ হাজার নারী প্রত্যক্ষভাবে লিচু উৎপাদন, বাছাই, গণনা ও বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে গৃহিণী, স্কুল ও কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্রীরা রয়েছেন।

গাছে উঠতে না পারায় ‘লিচু কন্যাদের’ মজুরি কম!

পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের মজুরির বিষয়ে তিনি বলেন, গতবছর নারী শ্রমিকদের মজুরি ছিল ৩০০-৩৫০ টাকা। এবছর ৪০০-৫০০ টাকা করা হয়েছে। পুরুষ শ্রমিকরা গাছে উঠে লিচু সংগ্রহ এবং বাজারজাতকরণের জন্য প্যাকেজিংয়ের কাজ করেন, যা নারী শ্রমিকরা পারেন না। তাই নারীদের তুলনায় পুরুষ শ্রমিকদের মজুরি বেশি।

মানিকনগর গ্রামের লিচু চাষি জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘গত সাতদিন আমার বাগানে ৩৩ জন শ্রমিক লিচু সংগ্রহ, বাছাই ও গণনার কাজ করেছেন। এদের মধ্যে ২৫ জন নারী। নারীরা লিচু বাছাই ও গণনার কাজ ভালো করতে পারেন। এরা পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারেন। তাদের পারিশ্রমিকও কিছুটা কম। এতে আমাদের কিছুটা সাশ্রয় হয়।’

কথা হয় মিরকামারী গ্রামের গৃহবধূ আছিয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘লিচু মৌসুম এলেই আমাদের বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়। বাড়ির আশপাশের লিচু চাষিদের বাগানে লিচু বাছাই ও গণনার কাজ করে আমাদের যে আয় হয় তা দিয়ে আমরা হাঁড়ি-পাতিলসহ সংসারের আসবাবপত্র কিনতে পারি। ২০-২৫ দিন কাজ করার টাকা দিয়ে একটি ছাগলের বাচ্চা কিনতে পারি। সেটি বড় করে বিক্রি করলে লাভবান হওয়া যায়।’

গাছে উঠতে না পারায় ‘লিচু কন্যাদের’ মজুরি কম!

মজুরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরাতো পুরুষদের চেয়ে কোনো অংশে কাজ কম করি না। বরং তাদের চেয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাজ বেশিই করি। অথচ আমাদের হাজিরা ৪০০-৫০০ টাকা। আর পুরুষদের দেওয়া হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকা।’

মানিকনগর গ্রামের কলেজছাত্রী নুসরাত জাহান বলেন, ‘আমি যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়তাম তখন থেকেই লিচু বাছাই ও গণনার কাজ করছি। ১৫-২০ দিন এ কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়ে সারাবছরের পড়াশোনার খরচ মেটানো যায়। আমার মতো শত শত স্কুল ও কলেজছাত্রীরা লিচু বাছাই ও গণনা কাজ করেন। আমরা প্রতিদিন ৪০০-৪৫০ টাকা মজুরি পাই।’

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, নারী শ্রমিকদের বেশিরভাগই গৃহিণী। লিচু মৌসুমে নারীরা তাদের বাড়তি আ দিয়ে পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেন। তাদের প্রশিক্ষণ দিতে পারলে তারা এ কাজে আরও বেশি দক্ষ হতেন।

শেখ মহসীন/এসআর/এমএস

Read Entire Article