গাজা যুদ্ধে ইসরায়েল কী পেল

3 hours ago 2

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে। গাজায় হামাসকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে ইসরায়েল। এটি করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে। আগে ইসরায়েলকে যে পশ্চিমা দেশগুলো সমর্থন করত, এখন তারা নিজেদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করছে। বিশেষ করে, গাজায় চলমান সহিংসতা, বেসামরিক জনগণের বিপর্যয় ও ইসরায়েলি বাহিনীর কর্মকাণ্ডের কারণে বিশ্বজনমত পাল্টে গেছে। 

পশ্চিমা সমর্থন হারানো

ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন পেয়েছিল। কিন্তু গাজার এই যুদ্ধের পর থেকে অনেক পশ্চিমা দেশ তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করেছে। গাজার মানুষের ওপর চলা আক্রমণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে অনেক দেশই ইসরায়েলের সমালোচনা করছে। যুদ্ধের প্রথম দিকে কিছু দেশ ইসরায়েলের পাশে থাকলেও, ধীরে ধীরে তাদের অবস্থান থেকে সরে যায়। 

ইহুদি কিশোরদের মত পরিবর্তন

একসময় যারা ইসরায়েলকে সমর্থন করতেন, বর্তমানে তাদের মধ্যেও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে আমেরিকার ইহুদি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ইহুদি কিশোর এখন হামাসের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছে। ৪২ শতাংশ কিশোর মনে করে, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। পাশাপাশি, ৬৬ শতাংশ পুরো ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছে, যা ইসরায়েলের জন্য বড় অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। 

ইসরায়েল বর্জন আন্দোলন

বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদ বাড়ছে। প্রথমে এই প্রতিবাদগুলোকে ইহুদিবিদ্বেষ বলে দমন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তা এক বৈশ্বিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য সমর্থন অর্জন করেছে এই আন্দোলন। ইসরায়েল বর্জন আন্দোলন এখন আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী হয়েছে। ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায়

বর্তমানে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা চলছে। গণহত্যার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে এখন আরও অনেক মামলার প্রস্তুতি চলছে। এই নতুন পরিস্থিতি ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিকভাবে আরও বিপদে ফেলেছে।

অভ্যন্তরীণ বিভক্তি

ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও এক বড় ধরনের বিভক্তি দেখা দিয়েছে। একদল ধর্মীয় ইহুদি সম্প্রদায় সামরিক সেবা করতে অস্বীকার করছে। অন্যদিকে সেক্যুলার ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী ইহুদিদের মধ্যে মতবিরোধ তীব্র হয়েছে। এর ফলে ইসরায়েলে যে অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ছিল, তা বর্তমানে চ্যালেঞ্জে পড়েছে।  

গাজার এই যুদ্ধ ইসরায়েলকে শুধু সামরিকভাবে নয়, আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিকভাবে নিচে নামিয়েছে। ইসরায়েল এখন একটি কঠিন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। একদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে তো লক্ষ্য অর্জন করতে পারল না, অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী সমর্থন হারিয়ে সংকটে পড়ছে দেশটি। 

বর্তমান পরিস্থিতি

যুদ্ধবিরতি চুক্তির ফলে গাজার চলমান সংঘাতের অবসান হতে যাচ্ছে। ১৫ মাসের ভয়াবহ সংঘাতে প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত ও লক্ষাধিক মানুষ আহত হয়েছে। এই চুক্তি আগামীকাল রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার চুক্তি বাস্তবায়নে সহায়তা করছে। গাজার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া মিশর, কাতার ও জাতিসংঘের সহযোগিতায় পরিচালিত হবে।
গত ২ দিনে অন্তত ১১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৮ শিশু ও ৩১ নারী। এখন পর্যন্ত, ১৫ মাসে গাজার সংঘাতে ৪৭ হাজার মানুষ নিহত এবং ১ লাখ ১০ হাজার ৬৪২ জন আহত হয়েছে।

তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট আই, আল জাজিরা ও সিএনএন

Read Entire Article