ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে চলমান সংঘাতে আক্রান্ত শিশুদের মানসিক অবস্থার ওপর গভীর প্রভাব পড়েছে।
সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গাজার ৯৬ শতাংশ শিশু মনে করে তাদের ‘মৃত্যু অতি সন্নিকটে’। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক শিশু, বিশেষত ছেলেরা (৭২ শতাংশ) তাদের মৃত্যু কামনা করছে।
এই পরিসংখ্যানটি গাজার শিশুদের ভয়াবহ মানসিক অবস্থা এবং যুদ্ধে তাদের প্রতি চলমান মানসিক আঘাতের চিত্র ফুটিয়ে তোলে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ওয়ার চাইল্ড অ্যালায়েন্স’-এর সহায়তায় গাজার একটি স্থানীয় এনজিও এ গবেষণাটি পরিচালনা করেছে। এতে ৫০৪টি পরিবারের শিশু অংশগ্রহণ করেছে, যেখানে প্রায় ৯২ শতাংশ শিশু জানায় তারা তাদের বর্তমান পরিস্থিতি গ্রহণ করতে অক্ষম। ৭৯ শতাংশ শিশু রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে এবং ৭৩ শতাংশ শিশু আক্রমণাত্মক আচরণ করছে।
এদিকে গাজার শিশুমনে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, হাসপাতাল, স্কুল এবং বাড়িঘরের মতো মৌলিক অবকাঠামো ধ্বংসের পাশাপাশি, গাজার শিশুদের মানসিক অবস্থা গুরুতর আঘাতের শিকার হচ্ছে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে চরমভাবে প্রভাব ফেলছে।
গবেষণায় জানা যায়, গাজার ৪৪ হাজার ৮০৫ জন নিহতের মধ্যে ৪২ শতাংশই শিশু। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি শিশুদের মানসিক অবস্থা আরও খারাপ করছে। গাজার ১.৯ মিলিয়ন বাস্তুচ্যুত মানুষের অর্ধেকই শিশু, যারা তাদের বাড়ি এবং প্রতিবেশী এলাকা থেকে পালিয়ে গেছে।
এ ছাড়া ৬০ শতাংশ শিশু বোমা হামলার দৃশ্য, প্রিয়জন হারানো, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং শারীরিক আঘাতের শিকার হয়েছে।
গাজায় ১৭,০০০ শিশু বর্তমানে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একা রয়েছে এবং তাদের শোষণ, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই অবস্থায় থাকা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
‘ওয়ার চাইল্ড অ্যালায়েন্স’ এখন পর্যন্ত ১৭,০০০ শিশুকে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এক মিলিয়ন শিশুকে সহায়তা দিতে চায়। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, গাজার শিশুদের মানসিক বিপর্যয় যেন ভবিষ্যতের প্রজন্মে গভীর প্রভাব ফেলতে না পারে।