গাজায় খুব শিগগিরই আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে: ট্রাম্প

8 hours ago 7

গাজায় খুব শিগগিরই একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণের মধ্যে মানবিক বিপর্যয়ে জর্জরিত এই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে যুদ্ধো পরবর্তী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই বাহিনী মোতায়েনের কথা জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, এটা খুব তাড়াতাড়িই ঘটতে যাচ্ছে। আর গাজার পরিস্থিতি এখন খুব ভালোভাবে এগোচ্ছে। তিনি আরও জানান, ‘খুব শক্তিশালী কিছু দেশ’ এই মিশনে অংশ নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, যাতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সঙ্গে কোনো জটিলতা দেখা দিলে তারা হস্তক্ষেপ করতে পারে। যদিও হামাস এখনো নিরস্ত্র হওয়ার বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি) বর্তমানে দুই বছরের জন্য একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীর ম্যান্ডেট অনুমোদনের বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে। এই বাহিনীর দায়িত্ব হবে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া, সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মঙ্গলবার আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, গাজায় যেকোনো স্থিতিশীলতা বাহিনীকে অবশ্যই ‘পূর্ণ আন্তর্জাতিক বৈধতা’ নিয়ে কাজ করতে হবে, যাতে তা ফিলিস্তিনিদের সহায়তা করতে পারে।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবিত প্রস্তাবনাটি এই সপ্তাহে ইউএনএসসির ১০ নির্বাচিত সদস্য ও কয়েকটি আঞ্চলিক অংশীদারের কাছে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকেই এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হওয়ার কথা।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রস্তাবনাটি মিশর, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও তুরস্ক এরই মধ্যে দেখেছে। এতে বলা হয়েছে, প্রায় ২০ হাজার সদস্যের এই স্থিতিশীলতা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালনে ‘সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ নিতে পারবে, অর্থাৎ প্রয়োজনে বলপ্রয়োগেরও অনুমতি থাকবে।

ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো হামাসের নিরস্ত্রীকরণ। যদিও এ বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি, তবুও এই বাহিনীর একটি দায়িত্ব হবে হামাসের সামরিক সক্ষমতা ও ‘আক্রমণাত্মক অবকাঠামো’ ধ্বংস করা ও তা পুনর্গঠিত হতে না দেওয়া।

ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার ফলেই ১০ অক্টোবর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে বন্দি বিনিময় এবং যুদ্ধবিরতির একটি চুক্তি হয়। তবে ইসরায়েল সেই যুদ্ধবিরতি বারবার লঙ্ঘন করেছে, পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশেও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

তুরস্ক এই শান্তি পরিকল্পনা কার্যকর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তারা হামাসকে শান্তি প্রস্তাব গ্রহণে উৎসাহিত করেছে এবং স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠনের পক্ষে সমর্থন জোগাতে কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে ইস্তাম্বুলে বৈঠক করেছে।

তুরস্ক বরাবরই গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনকে ‘গণহত্যামূলক যুদ্ধ’ হিসেবে নিন্দা করে আসছে। সর্বশেষ শীর্ষ বৈঠকেও তারা ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন বন্ধ করতে ও মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিতে আহ্বান জানায়।

তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, গাজায় তারা কোনো তুর্কি উপস্থিতি মেনে নেবে না।

এদিকে, গাজায় স্থিতিশীলতা বাহিনী নিয়ে ইসরায়েলের অবস্থান কিছুটা ভিন্ন। সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরায়েল ভবিষ্যতের জন্যও গাজার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে, যার মধ্যে নিরাপত্তা বেষ্টনীর নিয়ন্ত্রণও অন্তর্ভুক্ত।

অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) প্রধান গত মাসে গাজা সফরকালে জানিয়েছিলেন, কোনো মার্কিন সেনা সেখানে মোতায়েন করা হবে না।

সূত্র: আল-জাজিরা

এসএএইচ

Read Entire Article