গাজায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছে, সর্বশেষ পরিস্থিতি...

3 hours ago 3

মঙ্গলবার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। অনেকে বিধ্বস্ত ভবনের নিচে চাপা পড়ে আছেন ফলে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে গাজায় এটি ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বিমান হামলা।

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা হামাসের ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুগুলোতে’ হামলা করেছে। এই হামলায় গাজার উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ হামাস কর্মকর্তাদের মধ্যে মাহমুদ আবু ওয়াফাহ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) গাজায় হামলা শুরুর আগে বেশিরভাগ মানুষ রমজানের সেহরি খাচ্ছিলেন, তখনই বিস্ফোরণ শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ২০টিরও বেশি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজার আকাশে উড়ছিল এবং সেগুলো গাজা সিটি, রাফাহ ও খান ইউনিসে লক্ষ্যবস্তুতে বোমা ফেলছিল।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ আগেই এ হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা বলেছেন, হামাসের কাছ থেকে বন্দিদের মুক্তির দাবি এবং পূর্বে প্রস্তাবিত চুক্তি প্রত্যাখ্যানের পর ইসরায়েল এই হামলা চালিয়েছে। ভবিষ্যতে হামাসের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী সামরিক পদক্ষেপ নেবে তারা।

এদিকে হামাস এ হামলাকে একটি বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে উল্লেখ করেছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, ইসরায়েল তাদের চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং এখন বন্দি ইসরায়েলি সেনাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়তে হতে পারে। হামাসের কর্মকর্তা ইজ্জত আল রিশেক এক বিবৃতিতে বলেন, গাজায় পুনরায় যুদ্ধ শুরু করার সিদ্ধান্ত হলো দখলদারদের বন্দিদের বলিদান এবং তাদের ওপর মৃত্যুদণ্ড আরোপের সিদ্ধান্ত। 

বিশ্বজুড়ে এই হামলার প্রতি বিভিন্ন দেশ, সংগঠন এবং জনগণের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া এসেছে। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং বলেছে, গাজায় ইহুদি শত্রুদের পুনরায় আগ্রাসনের নিন্দা জানাই। ফিলিস্তিনি জনগণ একা নয়, ইয়েমেন তাদের সহায়তা করবে।

চীনও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। দেশটি বলেছে, তারা গাজায় পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে এমন যে কোনো পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে। 

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং সব পক্ষকে যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, সব বেসামরিক নাগরিককে রক্ষা করতে হবে। বেলজিয়ামের উপ-প্রধানমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রিভোটও হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাশিয়া এবং জাতিসংঘও পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং শান্তির জন্য সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের অনুরোধ জানিয়েছে। 

উল্লেখ্য, গাজার বাসিন্দারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৫২০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে বেশিরভাগই নিরীহ বেসামরিক নাগরিক। গাজার প্রায় ২১ লাখ মানুষ বেশিরভাগই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং শহরের ৭০ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। 

গাজার স্বাস্থ্য, পানি, ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে এবং খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের সংকট তীব্র হয়েছে। ইসরায়েলি বাধায় গত ১৫ দিন গাজায় কোনো ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ করতে পারেনি। এই অবস্থায় রোজা পালন করছেন গাজার মানুষ। 
 

Read Entire Article