গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে প্রস্তুত ইসরায়েল, তবে...

3 hours ago 5

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি দ্বিতীয় ধাপের বা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল। তবে, এজন্য তারা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে কয়েকটি শর্ত দিয়েছে। 

ইসরায়েল দাবি করেছে যে, এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন করার জন্য হামাসকে সব জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে এবং গাজা উপত্যকাকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে।

এই বিষয়ে বিস্তারিত জানান ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা’য়ার। 

তিনি স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৪ মার্চ) ফিলিস্তিনের জেরুজালেম শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা গাজার দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর করতে প্রস্তুত, তবে এর জন্য হামাসের কাছ থেকে কিছু শর্ত প্রয়োজন। এর মধ্যে সব ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তি এবং গাজাকে সম্পূর্ণরূপে নিরস্ত্রীকরণ অন্তর্ভুক্ত। খবর টাইমস অব ইসরায়েল।

এর আগে, ১ মার্চ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হয়েছিল। পরবর্তীতে, ৩ মার্চ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক রেকর্ডেড বক্তৃতায় বলেন, গাজায় হামাস যে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, সেটি তারা গ্রহণ করবে না, কারণ এটি তাদের জন্য একেবারে অগ্রহণযোগ্য।

তবে, ইসরায়েল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের সাময়িক যুদ্ধবিরতির জন্য উপস্থাপিত একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই পরিকল্পনায় ৫০ দিনের জন্য অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নেতানিয়াহু দাবি করেন, হামাস এখনো পর্যন্ত এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তারা প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর দাবি করেছে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা’য়ার বলেন, আমরা গাজা উপত্যকাকে সম্পূর্ণরূপে নিরস্ত্রীকরণ, হামাস এবং ইসলামিক জিহাদকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা এবং আমাদের জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়ার শর্তে দ্বিতীয় ধাপের চুক্তি কার্যকর করতে রাজি। যদি তারা এতে সম্মত হয়, তাহলে আমরা খুব শিগগিরই এই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে পারব।

এদিকে, ১৯ জানুয়ারি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শুরু হয় এবং গত ১ মার্চ সেই ধাপের মেয়াদ শেষ হয়। এই সময়ে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে বন্দি বিনিময়ও হয়। তবে, যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

হামাস তার পক্ষ থেকে বলেছে, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ এখনই কার্যকর হওয়া উচিত, এর মাধ্যমেই গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং যুদ্ধের অবসান সম্ভব।

এদিকে, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা ও পণ্য প্রবেশ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। এর ফলে, গাজাবাসী নতুন করে আবারও খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব অনুভব করতে শুরু করেছেন। 

নেতানিয়াহু দাবি করেন, এই পণ্যগুলোর মাধ্যমে হামাস অর্থ আয় করছে এবং তারা এই অর্থ দিয়ে তাদের সামরিক শক্তি পুনর্গঠন করছে, যা যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনার পরিপন্থি।

ইসরায়েলি মন্ত্রীরা বলেছেন, হামাসের জন্য মানবিক সহায়তার অন্যতম বড় উৎস হলো এই পণ্যসম্ভার। তারা এই অর্থ ব্যবহার করে তাদের অস্ত্রাগার তৈরি করছে এবং তরুণদের সংগঠনে যোগদান করাচ্ছে। তবে, যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে বলে আন্তর্জাতিক মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

গাজাবাসী নতুন করে আবারও উদ্বেগে পড়েছেন, কারণ তারা শঙ্কা করছেন যে, ইসরায়েলি সেনারা আবারও গাজায় আক্রমণ শুরু করতে পারে এবং আরও বড় আকারের মানবিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে।

Read Entire Article