গাজায় অবিলম্বে, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত একটি প্রস্তাবে একমাত্র ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৫ সদস্যের পরিষদের বাকি ১৪ দেশ প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিলেও যুক্তরাষ্ট্র তাতে আপত্তি জানায়।
প্রস্তাবে গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের পাশাপাশি বন্দি ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্তির কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনের বক্তব্য, যুদ্ধবিরতির আহ্বান সরাসরি বন্দিমুক্তির সঙ্গে যুক্ত নয়—এ কারণে এটি তাদের কাছে ‘অগ্রহণযোগ্য’।
ভোট শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ডোরোথি শে জানান, ইসরায়েলকে আত্মরক্ষার অধিকার দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বরাবরই পরিষ্কার, যা হামাসকে পরাজিত করা এবং ইসরায়েলের ওপর হুমকি বন্ধ করার অধিকার অন্তর্ভুক্ত করে।
আরও পড়ুন>>
- গাজার অবস্থা নরকের চেয়েও খারাপ: রেড ক্রস প্রেসিডেন্ট
- গাজায় ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি, নিহত ২৭
- গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চায় জাতিসংঘ
চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং বলেন, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সব সীমা লঙ্ঘন করেছে এবং জাতিসংঘের প্রস্তাবগুলো উপেক্ষা করেছে। কিন্তু একটি দেশের রক্ষাকবচের কারণে এসবের জবাবদিহি হচ্ছে না।
ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি
বুধবার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের বোমা হামলায় অন্তত ৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
একইসঙ্গে ইসরায়েল গাজার জন্য যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিতর্কিত মানবিক ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফ-এর মাধ্যমে দেওয়া সহায়তার পথ বন্ধ করে দেয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, এসব রুটকে তারা ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে বিবেচনা করবে। ফলে ত্রাণ বিতরণ একদিনের জন্য পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়।
ত্রাণের লাইনে গুলি, নিহত শতাধিক
জিএইচএফ চালু হওয়ার পর থেকে সহায়তার লাইনে থাকা মানুষদের লক্ষ্য করে একাধিকবার গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১০০-রও বেশি মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার ভোরে খাবারের জন্য জড়ো হওয়া জনগণের ওপর ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালায়। খাঁচার মতো লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষুধার্ত মানুষদের ত্রাণের জন্য ছুটতে দেখা যায়, এরপরই গুলি বর্ষণ। এই দৃশ্য বিশ্বজুড়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজা ইস্যুতে ১৪টি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে, যার মধ্যে চারটি পাস হয়। এবারের ভোট ছিল ২০২৪ সালের নভেম্বরের পর প্রথম।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
সূত্র: আল জাজিরা
কেএএ/