গাজায় হামলা করে ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তি’ ভেস্তে দিল ইসরায়েল

10 hours ago 4
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে নতুন করে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যে তিন শতাধিক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। ফলে কার্যত ভেস্তে গেছে ইসরায়েল ও হামাসের ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ইসরায়েলি গণমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট-এর এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। এর কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, হামাস এখনো গাজায় আটকে রাখা জিম্মিদের মুক্তি দিতে সম্মত হয়নি। এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় ইসরায়েল পুনরায় হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা ইজ্জাত আল-রিশক এক বিবৃতিতে বলেন, নেতানিয়াহু আবারও যুদ্ধ শুরু করে জিম্মিদের বলিদান করেছেন এবং তাদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এছাড়াও হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, গাজায় বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ হামলার জন্য নেতানিয়াহু ও জায়নবাদী শত্রুরাই সম্পূর্ণ দায়ী। হামাস আরও জানিয়েছে, এই চুক্তি লঙ্ঘনের ফলে এখনো বন্দি থাকা ৫৯ জন জিম্মির ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গাজা উপত্যকায় হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, যেহেতু হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিতে সম্মত হয়নি, তাই ইসরায়েল এখন থেকে আরও বড় পরিসরে সামরিক অভিযান চালাবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ বলেন, যতক্ষণ না হামাস জিম্মিদের মুক্তি দেয়, ততক্ষণ আমরা হামলা অব্যাহত রাখব। প্রয়োজনে নজিরবিহীন সহিংসতা চালিয়ে গাজাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হবে। এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা হামাসের নেতৃবৃন্দ ও অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আইডিএফের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেন, এই হামলা শুধু বিমান হামলায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। ইসরায়েলি বাহিনী সমগ্র গাজা উপত্যকায় তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করবে। ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। বেশিরভাগই নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ। গাজার সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বার্তা সংস্থা এএফপি-কে জানান, গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩০০ মরদেহ আনা হয়েছে। নিহতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র ও ত্রাণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এর আগে বিবিসি-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হামাস যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার শর্ত হিসেবে মার্কিন ও ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্তি দিতে এবং চারজন জিম্মির মরদেহ ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে। মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, হামাসের এই প্রস্তাব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি আলোচনার উপযুক্ত নয় এবং যুক্তরাষ্ট্র এটি মানবে না। ইসরায়েলও হামাসের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভেঙে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা গাজায় মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। নিহত ও আহতদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। একই সঙ্গে বন্দি থাকা জিম্মিদের ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংকট নিরসনের জন্য কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারবে কি না, তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Read Entire Article