গাজী কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ স্বজনদের সড়ক অবরোধ

2 days ago 11

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা সড়ক অবরোধ করেছেন। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের একপাশ অবরোধ করে তারা। এ সময় পরিবারের নারী ও শিশুরা নিখোঁজদের ছবি হাতে নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে রাখেন।

এতে সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরীর আশ্বাসে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করেন।

সড়ক অবরোধকারীরা জানান, তারা সবাই গাজী টায়ার কারখানায় নিখোঁজদের স্বজন। গত ২৫ আগস্ট রাতে রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় হামলা, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর থেকে তাদের পরিবারের সদস্যরা নিখোঁজ রয়েছে। চার মাস পার হলেও কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নিখোঁজ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। প্রশাসন বলছে তারা বেঁচে নেই। কিন্তু তাদের দেহাবশেষ কিছুই দিচ্ছে না।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, গাজী টায়ারে আগুনের আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পরে তদন্ত কমিটি ১৮২ জন নিখোঁজের একটি তালিকা তৈরি করে। তবে তাদের ভাগ্যে আসলে কী ঘটেছে সেটা যাচাইবাছাইয়ের জন্য পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, গাজী টায়ারে আগুনের ঘটনায় একটি জিডি হয়েছিল এবং জেলা প্রশাসন একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। সেটি নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ডিএনএ প্রতিবেদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে।

এর আগে, গত ১২ সেপ্টেম্বর গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি। 

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে গাজী টায়ার কারখানাতে লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় কিছু ব্যক্তিকে অর্থের বিনিময়ে কারখানা পাহারার দায়িত্ব দেন। কয়েকদিন পর পাহারা ইস্যুতে দুটি পক্ষের সৃষ্টি হয়। একটি পক্ষ পাহারার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে অতিরিক্ত টাকা দাবি করে। এতে কারখানা কর্তৃপক্ষ অস্বীকৃতি জানায়। এরপর হুমকি দিয়ে গত ২৫ আগস্ট তারা কারখানা ত্যাগ করে। 

এদিকে গাজী টায়ার কারখানার মালিক গোলাম দস্তগীর গাজী (সাবেক সংসদ সদস্য) গ্রেপ্তার হওয়ার খবর মিডিয়াতে প্রচার হওয়ার পরে গত ২৫ আগস্ট এলাকার লোকজন আনন্দ মিছিল বের করেন। সকাল সাড়ে ১১টায় খাদুন উত্তরপাড়া জামে মসজিদ (খাঁ পাড়া) থেকে ঘোষণা আসে বিকেল ৩টায় রূপসী মোড় ও খাদুন মোড়ে জড়ো হওয়ার জন্য। একপর্যায়ে লুটপাটের উদ্দেশ্যে দুষ্কৃতকারীরা দুপুর ১২টায় কারখানায় প্রবেশ করে প্রায় ১৮০ জন শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারখানা থেকে বের করে দেয় এবং লুটপাট শুরু করে।

বিকেল সাড়ে ৪টায় আরেক দল দুষ্কৃতকারী কারখানায় প্রবেশ করে লুটপাট চালাতে থাকে। পরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দুষ্কৃতকারীরা একাধিক দলে ভাগ হয়ে বিকেলে কারখানার মধ্যে লুটপাট করতে থাকলে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে গাজী অটো টায়ার কারখানার ৬ষ্ঠ তলা বিশিষ্ট একটি পাকা মিক্সিং ভবনে ভয়াবহ আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। 

এতে ভবনের প্রতিটি তলায় থাকা বিভিন্ন মালামালসহ যন্ত্রপাতি পুড়ে যায়। দুষ্কৃতকারীদের অগ্নি সংযোগের কারণে ভবনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে উল্লেখ করা হয়। আর আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনের ভেতরে লুটপাট করতে আসা অনেকে আটকা পড়েছে বলে নিখোঁজদের স্বজনরা দাবি করেন। পরে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, শিক্ষার্থী ও তদন্ত কমিটির গণশুনানিতে ভিন্ন ভিন্ন তালিকা একত্রিত করে মোট ১৮২ জন নিখোঁজ ব্যক্তির কথা জানানো হয়। তবে তাদের সন্ধান এখনো মেলেনি। 

ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, অধিক পরিমাণে দাহ্য পদার্থ থাকার কারণে ভবনটিতে ২১ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় আগুন সম্পূর্ণভাবে নির্বাপণ করা হয়। ভবনে আগুন লাগার পরে ১০-১৫ জন ব্যক্তি দ্রুত বের হয়ে পালিয়ে যায়। ভবন থেকে পরবর্তীতে কোনো মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি। তবে ১ সেপ্টেম্বর ভবনের ভেতর থেকে দেহের বিভিন্ন অংশের ১৫ খণ্ড হাড় পাওয়া যায়।

ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য বুয়েট টিম ও নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের প্রতিনিধিরা সরেজমিনে ফায়ার সার্ভিসের টিটিএল এবং ড্রোন দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের বিভিন্ন ফ্লোর পরিদর্শন করেন। ভবনের চার ও পাঁচ তলার ছাদ ধসে তিন তলার উপর পতিত হয়েছে এবং কলামগুলো ফেটে গিয়েছে। আরসিসি পিলার, বিম ও ছাদের ঢালাই খসে পড়েছে। ইটের দেয়ালগুলো বাঁকা হয়ে হেলে পড়ে গিয়েছে। ফলে ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। যে কারণে উদ্ধার কাজ চালানো সম্ভব হয়নি।

Read Entire Article