দেশের ২৪টি সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে জগন্নাথ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে গেছে। তবে গুচ্ছ ভর্তি বহাল রাখতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাছাড়া গুচ্ছ টিকিয়ে রাখতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহও অনুরোধ জানিয়েছেন।
সার্বিক পরিস্থিতিতে গুচ্ছ ভর্তির ভবিষ্যৎ কী হবে তা ঠিক করতে শিগগির বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) বৈঠকে বসছেন গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা। তাতে জবি ও শাবিপ্রবি উপাচার্যের উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা খুবই কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিল মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি)। বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আনারুল আজিম এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে তুলনামূলক ছোট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ছোট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করার মতো লোকও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এজন্য আমাদের সবাইকে সভায় বসতে হবে।
মাভাবিপ্রবি উপাচার্য বলেন, গুচ্ছ ভর্তিতে থাকার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক নির্দেশনার পরও কেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেরিয়ে যাচ্ছে সেটি বোধগম্য নয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীরা মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় আলাদাভাবে এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া একজন শিক্ষার্থীর জন্য চ্যালেঞ্জের। শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুচ্ছে থাকা উচিত।
গুচ্ছ ভর্তি নিয়ে কবে নাগাদ ইউজিসিতে সভা হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আনারুল আজিম বলেন, আমরা চেষ্টা করছি চলতি মাসের মধ্যে ইউজিসিতে একটি সভা করার। সভায় গুচ্ছের বিষয়ে চূড়ান্ত একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে বলে আমি আশাবাদী।
এর আগে শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে গুচ্ছ পদ্ধতি চালু রাখাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে দুটি দাবি তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
পোস্টে তিনি লেখেন, ‘শিক্ষা সবার অধিকার, বাণিজ্যের পণ্য নয়! হাজার টাকার আবেদন ফি, যাতায়াত ও থাকার খরচে বর্তমান ভর্তি প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের জন্য এক ভয়ানক আর্থিক চাপ। প্রতিটি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ঝুলছে টাকার অঙ্কে।’
আরও পড়ুন
- গুচ্ছের ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত
- আবেদন ফি কমাও, গুচ্ছ পদ্ধতি চালু রাখো: হাসনাত আব্দুল্লাহ
তিনি আরও লেখেন, ‘মেধার মূল্যায়ন নয়, বৈষম্যের দেওয়াল টেনে দিচ্ছে এই ব্যবস্থা। উচ্চশিক্ষা কি শুধুই ধনীদের জন্য? আবেদন ফি কমাও, গুচ্ছ পদ্ধতি চালু রাখো।’
জানা গেছে, চলতি বছর ২৪টি সাধারণ ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ থেকে সবার আগে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ (শাবিপ্রবি) আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সবচেয়ে বড় গুচ্ছটি ভেঙে গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত অল্প কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এই গুচ্ছে থাকতে পারে বলে জানিয়েছে ইউজিসি।
অন্যদিকে প্রকৌশল গুচ্ছ স্পষ্টতই ভেঙে গেছে। গুচ্ছভুক্ত চুয়েট ও কুয়েট বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আবেদন নিচ্ছে। আর রুয়েট ভর্তির পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
তাছাড়া কৃষি গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে দেশের সবচেয়ে বড় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। ফলে কৃষি গুচ্ছ শেষ পর্যন্ত থাকলেও তাতে কতটি বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে তা নিয়ে সংশয়ে খোদ ইউজিসিও।
এএএইচ/এমআইএইচএস