গুটি পক্সসহ নানা কারণে নষ্ট হচ্ছে ৩০ শতাংশ চামড়া

4 months ago 53

রাজধানীর লালবাগের পোস্তায় এবার কোরবানির ঈদে ১ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। তবে এসব চামড়ার মধ্যে গুটি পক্স, ভালোভাবে মাংস না ছাড়ানোসহ নানা কারণে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ নষ্ট হচ্ছে বলে আশংকা করছেন ব্যবসায়ীরা।

ঈদের পর দিন এবং আজ বুধবারও (১৯ জুন) পোস্তায় চলছে চামড়া বেচাকেনা। রাজধানীর কাঁচা চামড়ার সবচেয়ে বড় এ বাজারে আড়তের সংখ্যা যেমন কমেছে তেমনি বাজারে চামড়া আসার পরিমাণও কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

তাদের সঙ্গে কথা বলা জানা গেছে, চামড়া সংগ্রহ শুরু হওয়ার পরপরই অর্থাৎ ঈদের দিন বিকেল ৫টার পর থেকে চামড়া কেনাবেচা জমে ওঠে। ঈদের দিন গভীর রাত পর্যন্ত চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে।

পশুর চামড়ায় গুটি দাগের কারণে আমরা অনেক চামড়া কিনি নাই। গরু মোটাতাজাকরণের জন্য না বুঝে ইন্ডিয়ান ওষুধ খাওয়ানোর ফলে গুটি হচ্ছে পশুর শরীরে। তার কারণে পশুর চামড়া নষ্ট হচ্ছে। আমার ধারণা ত্রিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ চামড়ায় গুটি বা পক্সে নষ্ট হয়েছে।—শাহাদাত অ্যান্ড কোম্পানির ডিরেক্টর শাহাদাত হোসেন

ঈদের তৃতীয় দিন বুধবার (১৯ জুন) পোস্তায় গিয়ে দেখা গেছে ,সংগ্রহ করা কাঁচা চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করার কাজে ব্যস্ত আড়তদাররা।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান জানান, পোস্তায় এ মৌসুমে ১ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। মঙ্গলবারও কোরবানির পশুর চামড়া কিনেছেন, আজও কোরবানির পশুর চামড়া আসলে কেনা হবে বলেও জানান তিনি।

আফতাব খান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বরাবরই বলে এসেছি, কোরবানির পশুর চামড়া কেনার সময় যেন ভেবেচিন্তে কেনে। চামড়ার মান বুঝে আমরা দাম দেবো। সরকার নির্ধারিত দামে লবণযুক্ত চামড়া ফুট হিসেবে ফড়িয়াদের কাছ থেকে কেনা হবে। এখন যেসব চামড়া আসছে সেটা লবণ ছাড়া সে জন্য এ চামড়ার দাম প্রতিফুট লবণযুক্ত চামড়া থেকে ৫ থেকে ৭ টাকা কমে ব্যবসায়ীরা কিনছেন। তবে শহরের চামড়া সন্ধ্যা ৬টা এবং শহরের বাইরের চামড়া যদি রাত ১০টার মধ্যে পোস্তায় আনা যায় তাহলে পচন রোধ করা সম্ভব হয়। সেই সঙ্গে দামও ভালো পাবে। আর যারা পারবেন না তারা যে যেখানে রয়েছেন, সেখানেই চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। নইলে গরমের কারণে চামড়া নষ্ট হতে পারে।

ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় প্রতিবছর অন্তত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কোরবানির চামড়া নষ্ট হয়। বর্তমানে গরম অনেক বেশি, এ ছাড়া জ্যামের কারণে চামড়া নিয়ে আসতেও অনেক সময় লাগে। তাই পোস্তা এলাকায় সবাইকে চামড়া না এনে নিজ নিজ এলাকায় লবণজাত করার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। এবছর চামড়া ব্যবস্থাপনা আশা করছি ভালো হবে। সরকার এক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।—বিএইচএসএমএ সভাপতি আফতাব খান

সংরক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় প্রতিবছর অন্তত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কোরবানির চামড়া নষ্ট হয়। বর্তমানে গরম অনেক বেশি, এ ছাড়া জ্যামের কারণে চামড়া নিয়ে আসতেও অনেক সময় লাগে। তাই পোস্তা এলাকায় সবাইকে চামড়া না এনে নিজ নিজ এলাকায় লবণজাত করার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। এবছর চামড়া ব্যবস্থাপনা আশা করছি ভালো হবে। সরকার এক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

শাহাদাত অ্যান্ড কোম্পানির ডিরেক্টর মো. শাহাদাত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, পশুর চামড়ায় গুটি দাগের কারণে আমরা অনেক চামড়া কিনি নাই। গরু মোটাতাজাকরণের জন্য না বুঝে ইন্ডিয়ান ওষুধ খাওয়ানোর ফলে গুটি হচ্ছে পশুর শরীরে। তার কারণে পশুর চামড়া নষ্ট হচ্ছে। আমার ধারণা ত্রিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ চামড়ায় গুটি বা পক্সে নষ্ট হয়েছে।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে কামাল অ্যান্ড সন্সের মালিক মো. কামাল উদদীন জাগো নিউজকে বলেন, আমি নষ্ট চামড়া ফেরত দেই না আলাদা করে কম দামে কিনি। তিনি বলেন, শতকরা, দুই থেকে তিন কি চার শতাংশ চামড়ায় গুটি পক্স হয়েছে। এসব আলাদা কিনে কম দামে বিক্রি করি। সব মিলিয়ে হিসেব করলে হয়তো এ সংক্রান্ত রোগা চামড়া বাড়বে।

লবণ দিয়ে সংরক্ষণ না করলে নষ্ট হতে পারে চামড়া-ছবি জাগো নিউজ

এ বিষয়ে বিএইচএসএমএর সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ টিপু সুলতান জাগো নিউজকে বলেন, পরিবহনের দীর্ঘসূত্রতার কারণে কাঁচা চামড়া যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য কিছু সরকারি বিধিনিষেধও রয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ঈদের ১০ দিন পর থেকে ঢাকার বাইরে থেকে চামড়া রাজধানী শহরে প্রবেশ করতে পারবে। এর আগে অন্য জেলার পশুর চামড়া নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, গরুর চামড়ায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ নষ্ট হওয়ার শঙ্কা আছে। গরুকে মোটাতাজাকরণ, এটা অনাকাঙ্ক্ষিত আনফরচুনেটলি। আমাদের কাছে কখনো এটা কাম্য নয়, আমরা এটা চাইও না। এইটা যদি প্রপার মনিটরিং করা হয়, কন্ট্রোল করা সম্ভব। তবে সর্বোপরি মাংস থেকে চামড়া ছাড়ানো এবং গুটি পক্সের জন্য ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হওয়ার শঙ্কা আছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবার পক্ষে চামড়ায় লবণ দেওয়া সম্ভব হয় না। তাদের উচিত হবে দ্রুত কাঁচা চামড়া বিক্রি করে দেওয়া। রাজধানীতে পোস্তা ছাড়াও ঈদের দিনে সায়েন্সল্যাব, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, মিরপুর, গুলশান, বনানী, সাভার, হেমায়েতপুর, আমিনবাজার, জিঞ্জিরা, কেরানীগঞ্জ, টঙ্গীসহ বিভিন্ন স্থানে কাঁচা চামড়া কিনেছেন আড়তদাররা।

এফএইচ/এসএইচএস/জিকেএস

Read Entire Article