গুম-খুনের জন্য হাসিনার বিচার হতেই হবে : মির্জা ফখরুল

6 hours ago 3

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রমাণিত হয়েছে হাসিনা (পলাতক) এই হত্যাকাণ্ডগুলোর জন্য দায়ী, গুমের জন্য দায়ী। এই দেশের মাটিতে হাসিনার বিচার অবশ্যই হতে হবে।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে ভুক্তভোগী পরিবারের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর আয়োজনে মানববন্ধন ও চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য এসব কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি খুব পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এই গুম কমিশনকে পাবলিকলি নিয়ে আসার, পাবলিক শুনানি করার। তারা ব্যর্থ হয়েছে এই ইস্যুগুলো তাদের আত্মীয়দের, মায়েদের, ভাইদের যে কান্না সেই কান্নাকে বন্ধ করার। এটার জন্য তাদেরকে (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) অবশ্যই জবাবদিহি করতেই হবে।

তিনি বলেন, আমাদের একটা দাবি ছিল এসব ঘটনার বিচার করতে হবে। আমরা এইটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, এই বাচ্চাগুলোর সঙ্গে আমরা সারাক্ষণ আছি, তুলির (সানজিদা ইসলাম তুলি) মায়ের সঙ্গে সারাক্ষণ আছি এবং যতক্ষণ না এদের বিচার চূড়ান্ত হবে আমরা তাদের সঙ্গেই থাকব। 

বিএনপির মহাসচিব বলেন, প্রথম দিন থেকে আমরা এই গুম হওয়া পরিবারের সঙ্গে আছি। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের সঙ্গে আছি। আমরা আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছয় বছর মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক থেকেছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান এখনও নির্বাসিত আছেন। আমরা যারা নেতৃত্ব দিয়েছি তার মধ্যে একজনও বাকি নেই যে, যার বিরুদ্ধে একশ, দেড়শ, দুইশ, তিনশ, চারশ পর্যন্ত মামলা নেই এবং সেই মামলাতে গ্রেপ্তার হইনি। তাই এ কথা ভাবাটা ভুল হবে যে, বিএনপি এই বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যাবে।

গুম-খুনের শিকার স্বজনদের কষ্টের বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে, আন্দোলনে নামা অনেকেই গুম হয়ে গেল। এক পরিবারের সাতজন পর্যন্তও গুম হলো। স্বজনহারা ছোট বাচ্চাদের দেখলে কষ্ট হয়, কারণ তাদের একসময় আরও ছোট অবস্থায় দেখেছিলাম। আজ তারা বড় হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি নির্বাচন অবশ্যই চায়, এই নির্বাচন চায় এই বিচারকে (গুমের ঘটনার) নিশ্চিত করার জন্য, বিচারগুলোকে ত্বরান্বিত করার জন্য। আমাদের কাছে গুম বা ডিজ-এপিয়ারেন্স বিষয়টা বই বা খবরের কাগজের একটা তথ্য ছিল। এই অনুষ্ঠানে একজন বলল যে, লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে এটা হয়। আমাদের দেশে এটা (গুম) আগে ছিল না। এই প্রথম ভয়াবহ দানব হাসিনা সরকার তার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে এই গুম এ দেশে নিয়ে এসেছে। আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, আমাদের প্রায় বিশ হাজার মানুষকে বিনা বিচারে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে, ১৭শ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত তার কোনো সদুত্তর পাইনি।

তিনি আরও বলেন, আজকে এই প্রত্যাশা করব আমাদের এই শিশুগুলো যারা পিতা হারিয়েছে, বোনেরা যারা ভাই হারিয়েছে, মায়েরা যারা সন্তান হারিয়েছে তাদের সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য এই সরকার চেষ্টা করবে বের করে নিয়ে আসার। সে যেই হোক না কেন, যারাই হোক না কেন, যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন, এর চেয়ে ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধ আর কিছু হতে পারে না। আমরা সবাই জানি, যে ইনফোর্স ডিজএপিয়ারেন্স হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে একটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং সেই অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। 

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের গুম ঘটনার তদন্ত সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদও জানান বিএনপি মহাসচিব। ‘মায়ের ডাক’-এর প্রধান সানজিদা ইসলাম তুলির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এবি পার্টির সেক্রেটারি ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, আমরা বিএনপির পরিবারের উপদেষ্টা প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের সিনিয়র মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খানসহ গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

Read Entire Article