গুলশানে ডাক পেলেন বরিশালের ২১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা

3 hours ago 4

বরিশাল বিভাগের ২১টি সংসদীয় আসনে বিএরপির মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রায় সাড়ে ৩শজন নেতা। এরই মধ্যে বেশিরভাগ মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে মনোনয়ন বোর্ড। গুঞ্জন রয়েছে- বরিশাল-১, পটুয়াখালী-১ ও পটুয়াখালী-৩ আসন বাদে ১৮টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দলটি। এখন ঘোষণার অপেক্ষা।

চলতি মাসের মধ্যেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। এজন্য বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার ২১টি আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ডাকা হয়েছে ঢাকা গুলশান কার্যালয়ে।

তাদের নিয়ে সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় বৈঠক করবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এজন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ছবিও চেয়ে নেওয়া হয়েছে। এ বৈঠকে নির্বাচনের বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীল নেতারা।

বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহবন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু বলেন, কেন্দ্র থেকে একটি নোটিশ পেয়েছি। সোমবার বিকেল ৪টায় গুলশান কার্যালয়ে উপস্থিত থাকার জন্য। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারলাম বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ বিভাগের আরও অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের ডাকা হয়েছে।

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের মনোনয়প্রত্যাশী দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ বলেন, বিভাগের ২১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন তাদের সবাইকেই ২৭ অক্টোবরের মিটিংয়ে ডাকা হয়েছে। এটি নির্বাচনের বিষয়ে দলের মহাসচিব দিক নির্দেশনা প্রদান করবেন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাতে কেউ না যান সে বিষয়ে নির্দেশনা দিবেন।

এদিক, বরিশাল সদর আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, মনোনয়ন কারা পাবেন সেটা এখন অনেকটাই চূড়ান্ত। এখন সিস্টেম ঠিক রাখার জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজর করা হয়েছে। নির্বাচনে যাতে তারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে না যান, বিএনপির বিজয় নিশ্চিত করার বিষয়ে নির্দেশনা আসবে বৈঠক থেকে। এ বৈঠকের পর প্রার্থী ঘোষণা হতে পারে।

জানা গেছে, বরিশাল অঞ্চলের ৬ জেলার ২১ আসনে এবার বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন প্রায় সাড়ে ৩শ নেতা। প্রতিটি আসন থেকে ৮-১০ জন করে মনোনয়ন চেয়েছেন। এরই মধ্যে আসনগুলো থেকে আলোচনায় থাকা নেতাদের গুলশান কার্যালয়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে মনোনয়ন বোর্ড। তবে অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশীর গুলশানে ডাক না আসার খবর পাওয়া গেছে।

দলের নেতারা বলছেন ডাক না আসলে দলে অবদান, আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা দেখেই মনোনয়ন সিদ্ধান্ত হবে হবে। এক্ষেত্রে সবার আগে দেখা হচ্ছে মনোনয়ন প্রার্থীদের পূর্ব ইতিহাস, নির্বাচনী এলাকায় পরিচিত এবং জনপ্রিয়তার বিষয়টি। দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি গোয়েন্দা বিভাগের কাছ থেকেও নেওয়া তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।  মনোনয়ন প্রশ্নে ৫ আগস্টের পর সক্রিয় হওয়া নেতাদের আমলে নিচ্ছে না দল। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়তা আর ক্লিন ইমেজের প্রতি।

জানা গেছে, বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের তালিকায় আছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন ও কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান।

বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুর নাম চূড়ান্তের তালিকায় রয়েছে। তবে স্বাস্থ্যগত কিংবা দুর্নীতির মামলার কারণে তাকে নিয়ে জটিলতা হলে কপাল খুলতে পারে কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, কাজী দুলাল হোসেন বা সাইফ মাহমুদ জুয়েলের।

বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে চূড়ান্ত হিসাবে নাম শোনা যাচ্ছে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ব্যারিস্টার আসাদও আছেন লড়াইয়ে।

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে আলোচনার শীর্ষে আছেন সাবেক এমপি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান।

বরিশাল-৫ (সদর) আসনে সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ৫ বারের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতউল্লাহ।

এছাড়া গুলশান অফিসে সাক্ষাৎকার দিয়েন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহিন ও মহানগর বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরীন।

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে সাবেক এমপি ও বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান মোটামুটি চূড়ান্ত বলে শোনা যাচ্ছে। তবে কেন্দ্রে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে ডা. শহিদ হাসান ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান রাজনের।

ভোলা-১ (সদর) আসনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর অথবা জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হায়দার আলী লেনিন পেতে পারেন মনোনয়ন। এ ছাড়া আলোচনায় আছেন জেলা সদস্য সচিব রাইসুল আলম।

ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) ও ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদিন) আসনে মোটামুটি চূড়ান্ত জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ।

ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনে যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন অথবা জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি নাজিমউদ্দিন আলম পাচ্ছেন মনোনয়ন।

বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনে তালিকার শীর্ষে আছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম মোল্লা। এ ছাড়া ঢাকায় সাক্ষাৎ দিয়েছেন যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির শাহিন, কেন্দ্রীয় নেতা ফিরোজ উজ জামান মামুন।

বরগুনা-২ (বামনা-বেতাগী-পাথরঘাটা) আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী সাবেক এমপি দলের ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মনি।

পটুয়াখালী-১ (সদর-দুমকি-মীর্জাগঞ্জ) আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি স্নেহাংশু সরকার কুট্টি অথবা সাবেক মন্ত্রী দলের ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী পাচ্ছেন বিএনপির মনোনয়ন। তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান টোটন ও সাবেক পৌর মেয়র মুস্তাক আহম্মেদ পিনুকেও গুলশান কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।

পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে দলের কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন অথবা সাবেক এমপি শহিদুল আলম তালুকদার পাচ্ছেন মনোনয়ন। মাঠে আছেন ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদারসহ কয়েকজন।

পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে মোটামুটি চূড়ান্ত জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনের মনোনয়ন। তবে জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি প্রশ্নে এই আসনটি গণঅধিকার পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক নুরুল হক নুরকে দেওয়া হতে পারে।

পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে মোটামুটি চূড়ান্ত দলের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন।

ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে মোটামুটি চূড়ান্ত দলের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামালের মনোনয়ন। তিনি ছাড়াও মাঠে আছেন নিউইয়র্ক বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম আজম সৈকত।

ঝালকাঠি-২ (নলছিটি-ঝালকাঠি) আসনে দলের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু ও সাবেক এমপি ইলেন ভুট্টোর পাশাপাশি অ্যাড. শাহাদাত হোসাইনের নাম আলোচনায় আছে।

পিরোজপুর-১ (জিয়ানগর-সদর-নাজিরপুর) আসনে মনোনয়ন আলোচনার শীর্ষে আছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খান। এ ছাড়া কেন্দ্রের ডাকে গুলশানে সাক্ষাৎ দিয়েছেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এলিজা জামান, জেলার সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম কিসমত ও সদ্য সাবেক আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন। তবে জোট প্রশ্নে আসনটি জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে।

পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী-স্বরূপকাঠি) আসনে মাহমুদ হোসাইন ভিপি মাহমুদ অথবা ফকরুল আলম মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে মনোনয়ন চাইছেন লাভলু গাজী, সুমন মঞ্জুর, আলবিরুনী সৈকতও। পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে মোটামুটি চূড়ান্ত রুহুল আমিন দুলাল।

Read Entire Article