গত বছরের ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরে পুলিশের গুলিতে আহত হন লাল মিয়া (৪৮)। চোখ ও মাথাসহ মোট ৪৮টি গুলি লাগে তার। ৪১টি গুলি বের করা গেলেও এখনো বের হয়নি সাতটি। গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের বর্ষপূর্তির দিন আজ ৫ আগস্ট মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে অনুষ্ঠানে এসেছিলেন লাল মিয়া।
লাল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, পুলিশ গুলি কইরা অনেক মানুষ মারছে, পুলিশের ফাঁসি চাই। স্বৈরাচারী হাসিনাকে আর বাংলাদেশ চাই না। ১৬-১৭ বছর কথা বলতে পারিনি এখন বুক ফুলাইয়া কথা বলতে পারছি।
তিনি বলেন, আমরা চাই শান্তির বাংলাদেশ। আমরা আর অশান্তির বাংলাদেশ চায় না। ১৬-১৭ বছর কথা বলতে পারিনি এখন বুক ফুলাইয়া কথা বলতে পারছি। আর গুলি খাওয়ার পর ভেতরে আরও সাহস বেড়েছে, যদি মাইরাও ফালায় তাও অসুবিধা নেই। ড. ইউনূস স্যারের কাছে একটাই আবেদন— এ দেশ থেকে যেন চাঁদাবাজ-সন্ত্রাস নির্মূল হয়। তামাশার বাংলাদেশ আর চাই না, শান্তির বাংলাদেশ দেখতে চাই, শুধু শান্তি।
রাজমিস্ত্রির কাজ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা স্যার যেন নিহত-আহতদের পরিবারকে চলার মতো দুইডা ডাল-ভাত খাওয়ার মতো ব্যবস্থা করে দেন।
তিনি বলেন, গত বছরের ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুর আল্লাহ করিম মসজিদের সামনে আন্দোলনের সময় পুলিশ আমাকে গুলি করে। পুলিশ আমাকে ছররা গুলি করেছিল ৮৪টি। গুলি খাওয়ার পর যখন পড়ে যায় তখন পুলিশ আমাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। পাশে থাকা আমার সাথী ভাইয়েরা উদ্ধার করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে সাময়িক চিকিৎসা দিয়ে আমাকে বলা হয় এখান থেকে যানগা নাহলে বাকি গুলি খাইয়া মইরা যাইতে হইবো। সেখান থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। ওখানে একটি এক্সের পরে আমাকে বলে এখন যান ৪/৫ দিন পর পরিস্থিতি ভালো হলে আইসা চিকিৎসা করায়েন। এরপর বাসায় চলে যাই। পিঠে যে গুলিগুলো ঢুকছিল আমার ছেলে ব্লেড দিয়ে রেব করছে। এখনো আমার চোখের ভেতর তিনটি ও মাথার ভেতর চারটি গুলি আছে। এগুলো আর বের করা হয়নি।
যখন সেনাবাহিনীর সিএমএইচ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসার ঘোষণা দেওয়া হলো তখন সেখানে যেয়ে চিকিৎসা নিই এবং এখন আল্লাহ্র রহমতে ভালো। কিন্তু বাম চোখে দেখি না। ডান চোখের জন্য সিএমএইচ থেকে চশমা লিখে দেয়।
পুলিশ গুলি কইরা অনেক মানুষ মারছে, পুলিশের ফাঁসি চাই। এছাড়া মোহাম্মদপুরের কাউন্সিলর রাজীব ও আসিফ দুই ভাই পিঠের লগে পিঠ ঠেকাইয়া গুলি করছে। তাদেরও ফাঁসি চাই।
জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকা পেয়েছেন লাল মিয়া। দ্বিতীয় ধাপে টাকা দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু পাননি তিনি। প্রায় ৬-৭ মাস ঘুরাইতেছে বলে দাবি তার। লাল মিয়ার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে। তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় থাকেন।
টিটি/এমএএইচ/এএসএম