গুলিতে মাথার খুলি উড়ে যাওয়ার পর থেকে কথা বলতে পারে না শিশু মুসা

2 hours ago 6

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরায় একটি ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা তরুণ আমির হোসেনকে গুলি ও আরও দুজনকে হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা হয়। সেই মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে সোমবার (২৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জুলাই বিপ্লবে আহত ৬ বছর বয়সী মুসার বাবা।

ট্রাইব্যুনালে মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পুলিশের গুলিতে মুসার মাথার খুলি উড়ে গেছে। সে এখন কৃত্রিমভাবে নাক দিয়ে খাবার গ্রহণ করে। শরীরের ডানদিক প্যারালাইজড। সে কথা বলতে পারে না। চলাফেরা করতে পারে না। তাকে ট্রাইব্যুনালে এনে মাথায় গুলির ক্ষতচিহ্ন এবং চিকিৎসার সরঞ্জামাদি দেখানো হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে আমার ছেলে মো. বাসিত খান মুসা আইসক্রিম খেতে চায়। আমি আমার মা ও ছেলেকে নিয়ে বাসার নিচে নামি। এসময় গেটের বাহির থেকে পুলিশের ছোঁড়া একটি গুলি আমার ছেলের মাথায় লেগে মাথা ভেদ করে পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে আমি আমার ছেলেকে কোলে করে পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাসা থেকে আনুমানিক ৭০ ফুট দূরে রামপুরা থানা ভবন অবস্থিত। আমি আমার বাসার গেট থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম, ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমানসহ আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য সরাসরি গুলি করছিলেন।’

মো. মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, বাসার পাশের হাসপাতালের ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত আমার ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললে আমি তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাই। সন্ধ্যার দিকে হাসপাতালে পৌঁছাই। এরপর আমার এক প্রতিবেশী জানান যে, আমার ছেলের মাথায় যে গুলিটি লেগেছিল, সেটি আমার ছেলের মাথা ভেদ করে আমার মায়ের পেটে লেগেছে। তারা (প্রতিবেশী) আমার মাকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী আরও জানান, পরে তার মা মারা যান। এসময় সাক্ষী কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমার মায়ের মরদেহ মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন আমার ছেলে আইসিইউতে ছিল। আমার বাবা লাশ নিয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানাধীন গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করেন। আমার ছেলে আইসিইউতে থাকায় আমি আমার মায়ের মরদেহের সঙ্গে যেতে পারিনি।’

ট্রাইব্যুনালে মো. মোস্তাফিজুর বলেন, আমার ছেলে গত বছরের ২৬ আগস্ট পর্যন্ত আইসিইউতে ভর্তি ছিল। এরপর তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সে গত বছরের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত আইসিইউতে ভর্তি ছিল। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ছেলেকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। তার চিকিৎসার সব খরচ সরকার বহন করেছে।

সাক্ষী বলেন, আমার ছেলে এনজিটিউবের মাধ্যমে নাক দিয়ে খাবার গ্রহণ করে। আমার ছেলের ডানদিক এখন প্যারালাইজড। সে কথাও বলতে পারে না। চলাফেরাও করতে পারে না। আমি রামপুরা থানার ওসিকে সরাসরি অস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখেছি। সেখানে আরও অনেক পুলিশ ছিল। পরবর্তীতে জানতে পেরেছি, সেখানে চঞ্চল নামের একজন পুলিশ ছিল। আমার মায়ের হত্যা এবং সন্তানের এই অবস্থা করার জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার চাই।

এফএইচ/এমএমকে

Read Entire Article