গেস্টরুম সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এবং দ্রুত ডাকসুর রোডম্যাপের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে (হল পাড়া) থেকে এ মিছিল শুরু করে ভিসি চত্বরে এসে শেষ করেন তারা। পরে তারা উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘দফা এক দাবি এক, ডাকসুর রোডম্যাপ’, ‘এক দুই তিন চার, ডাকসু আমার অধিকার’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘হলে হলে খবর দে, গেস্টরুমের কবর দে’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, গণরুমের বিরুদ্ধে’, ‘গণরুম না ডাকসু, ডাকসু ডাকসু’, ‘দালালি না ডাকসু, ডাকসু ডাকসু’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গেস্টরুম কালচার ও র্যাগিংয়ের নামে আবারও ফ্যাসিজমের পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেওয়া হবে না। দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, ডাকসু নির্বাচন ছাড়া শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা সম্ভব নয়। আর অতিদ্রুত ডাকসু গঠনতন্ত্র সংস্কার করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। তাই, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য প্রদানকালে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী কানিজ বলেন, আমরা এএফআর হলে নতুন করে গেস্টরুম কালচার দেখেছি। এ গেস্টরুম কালচার আর চাই না। আমরা চাই না ছাত্রলীগের নেত্রীদের মতো আর কোনো নেত্রী আসুক, কোনো দল সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ফায়দা লুটুক। আমরা গেস্টরুম চাই না, ডাকসু চাই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যখন একত্রিত হয়েছেন, তখন কোনো শক্তিকেই আমরা গেস্টরুম ফিরিয়ে আনতে দেব না।
ঢাবি শিক্ষার্থী তাহমীদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী বলেন, কেউ গেস্টরুম নিক বা না নিক, অপসংস্কৃতি বলি আর যাই বলি, সমাধান কিন্তু একটাই! ডাকসু। যতক্ষণ পর্যন্ত রুট চিনতে ভুল করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত এই সমস্যাগুলোর কোনো সল্যুশন বের করতে পারবেন না। ক্যাম্পাসে সব শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান হতে পারে ডাকসু। নিজেদের অধিকার বুঝে নেন। নিতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।
আব্দুর রহমান আল ফাহাদ বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, একটি রাজনৈতিক শক্তি শিক্ষার্থীদের গণরুম-গেস্টরুমে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা তাদের বলতে চাই, আমরা কোনোভাবেই তা হতে দেব না। আমরা ডাকসু নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না।
এদিকে, অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে ভিসি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, প্রক্টর ড. সাইফুদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম ও রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ কথা বলেন।
এরপর রাত পৌনে ১০টায় গণমাধ্যমকে তাহমীদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী বলেন, আজকের আলোচনার পরে আমাদের ডাকসুকেন্দ্রিক হতাশা আরও বেড়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু ছাত্র সংগঠন থেকে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের সংগঠনে সরাসরি যুক্ত না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ গুটিকয়েক ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে ডাকসুকেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়েই এই কেন্দ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করব।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, আগামীকালের মধ্যে ডাকসুর অগ্রগতি নিয়ে আমাদেরকে একটি আপডেট জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন এবং তাদের পরিচয় নিচ্ছেন, এমন একটি অডিও ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনাকে অনেক শিক্ষার্থীই ছাত্রলীগের সময়কার গেস্টরুম কালচারের প্রাথমিক ধাপের সাথে তুলনা করে সমালোচনা করছেন।