গ্যাসের ব্যথা ভেবে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ নিয়ে ঘুরছেন না তো?

3 hours ago 1

সাধারণত হার্ট অ্যাটাক বলতে তীব্র বুকে ব্যথার মতো কোনো উপসর্গের কথাই মনে হয় আমাদের। পেটের ওপরের অংশেও এ ব্যথা হতে পারে বলে অনেকে জানেন। হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণকে অ্যাসিডিটি বা ‘গ্যাসের ব্যথা’ ভেবেও ভুল করেন অনেকে। তবে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অনেক বছর আগেও নিজের শরীরে কিছু পরিবর্তন অনুভব করতে পারবেন আপনি। এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের প্রকাশিত এক গবেষণার সূত্র ধরে এমনটাই জানা গেছে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদরোগ হওয়ার অনেক আগেই শরীর তার সংকেত দিতে শুরু করে। হার্টের সমস্যা ধরা পড়ার প্রায় ১২ বছর আগে থেকেই মাঝারি মাত্রার শারীরিক কার্যক্রম (যেমন—সাইক্লিং, সাঁতার) ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিওর বা স্ট্রোকের পূর্ববর্তী দুই বছরের মধ্যে এই সক্ষমতা অনেক বেশি কমে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধীর পতন শেষ দুই বছরে দ্রুততর হয় এবং বেশিরভাগ মানুষ এটিকে স্বাভাবিক বার্ধক্য ভেবে ভুল করেন। সময়মতো বুঝে পদক্ষেপ নিলে বড় ধরনের কার্ডিয়াক ইভেন্ট প্রতিরোধ সম্ভব।

‘Trajectories of Physical Activity Before and After Cardiovascular Disease Events in CARDIA Participants’ শীর্ষক গবেষণায় ১৯৮৫-৮৬ সালে যুক্ত হওয়া অংশগ্রহণকারীদের কয়েক দশকের শারীরিক কার্যক্রমের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এত গবেষকরা দেখতে পান, প্রথম হৃদরোগ ধরা পড়ার গড়ে ১২ বছর আগে থেকেই মাঝারি থেকে তীব্র শারীরিক কার্যক্রম (MVPA) কমতে শুরু করে, রোগ নির্ণয়ের আগের দুই বছরে এই পতন দ্রুততর হয় এবং রোগ হওয়ার পরও শারীরিক কার্যক্রম কম থাকে, ফলে সুস্থ সমবয়সীদের তুলনায় ব্যবধান আরও বাড়ে।

এমভিপিএ বলতে এমন কার্যক্রম বোঝায় যা হৃৎস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস বাড়ায়, যেমন— দৌড়ানো, সাইক্লিং, সাঁতার বা খেলাধুলা করা। CARDIA-র দীর্ঘমেয়াদি তথ্য বিশ্লেষণ এই ধীর পরিবর্তনের সময়কাল শনাক্ত করেছে, যা এককালীন পরীক্ষায় বোঝা যায় না।

গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৩ হাজার ৬৮ জন ব্যক্তির মধ্যে পরবর্তী সময়ে হার্ট অ্যাটাক বা করোনারি আর্টারি ডিজিজ, হার্ট ফেইলিওর বা স্ট্রোক হয়েছিল ২৩৬ জনের। তাদের অসুস্থতার আগের বছরগুলোর লক্ষণকে বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা। তুলনা করে দেখেছেন অন্যদের সঙ্গে। আর তাতেই এ তথ্য উঠে এসেছে।

অনভ্যস্ত ব্যক্তি শরীরচর্চা শুরু করতে গিয়েই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন। মাঝারি ব্যায়াম করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠতে পারেন। তবে, এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। অনভ্যস্ততা কাটিয়ে ওঠার উপায় আছে। ধীরে ধীরে নিজেকে ব্যায়ামে অভ্যস্ত করে তুলুন। এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষকের সহায়তা নেওয়া ভালো।

সুস্থ থাকতে আপনি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) নির্দেশনামাফিক এ ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন। তবে ব্যায়াম করতে গিয়ে নিজেকে অতিরিক্ত চাপে ফেলাও ঠিক নয়।

নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শরীরচর্চা করুন এবং খেয়াল রাখুন, এ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে কি না। তাহলে হার্ট অ্যাটাকের বহু বছর আগেই হৃৎপিণ্ডের অসুস্থতাকে চিহ্নিত করার সুযোগ পাবেন আপনি।

কেন আপনি আগের মতো ব্যায়াম করতে পারছেন না, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তা খুঁজে বের করতে পারবেন আপনি। এটি কি কেবল বয়সের কারণে শারীরিক সক্ষমতা কমে যাওয়া, নাকি হৃৎপিণ্ডের কোনো সমস্যার কারণে এমনটা হচ্ছে, তা বের করতে পারবেন।

এমভিপিএর ধারাবাহিক পতন শুধু জীবনযাত্রার পরিসংখ্যান নয়—এটি একাধিক শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত।

সাধারণত, কম শারীরিক কার্যক্রম হৃদযন্ত্রের স্ট্রোক ভলিউম ও অ্যারোবিক ক্ষমতা কমায়। ফলে দৈনন্দিন কাজ কষ্টকর হয়। নড়াচড়া কম হলে এন্ডোথেলিয়াল কার্যকারিতা খারাপ হয় এবং ধমনিতে ক্ষতিকর প্লাক জমতে থাকে। শরীরের নড়াচড়া কম হলে ওজন বৃদ্ধি, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও ক্ষতিকর লিপিড প্রোফাইল তৈরি করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বয়সের সঙ্গে সবার এমভিপিএ কমলেও এর ধারা লিঙ্গ ও জাতিগত দিক থেকে ভিন্ন। বিশেষত, কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে ধারাবাহিকভাবে কম শারীরিক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন এবং কিছু গোষ্ঠীতে পতন আরও তীব্র ছিল, যা স্বাস্থ্য বৈষম্য বাড়ায়।

সুস্থ থাকতে যা যা করতে পারেন

একদিনে লম্বা সময় ব্যায়াম না করে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে ভাগ করে ব্যায়াম করুন। এমন ব্যায়াম করুন, যা আপনি উপভোগ করেন। ব্যায়াম ছাড়াও এমনভাবে জীবন যাপন করুন, যাতে খুব বেশি বসে বা দাঁড়িয়ে থাকতে না হয়। লিফটের বদলে সিঁড়ির ব্যবহার কিংবা যাতায়াতের পথে কিছুটা হাঁটাও দারুণ অভ্যাস।

চিকিৎসকের পরামর্শ হলো, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ বজায় রাখতে হবে। রোগ হলে দেখা যাবে—এমন ভাবনা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি থেকে ভারী শারীরিক কার্যকলাপ করতেই হবে।

যাদের এরই মধ্যে হৃদরোগ রয়েছে, তাদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ধীরে ধীরে শারীরিক কার্যকলাপ পুনরায় শুরু করা। এটি দ্রুত আরোগ্য এবং দীর্ঘমেয়াদে হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

Read Entire Article