গ্রামে বন্যার পানি ঢোকায় আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিচ্ছে মানুষ

3 months ago 28

টানা তিন দিনের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনা সদর, বারহাট্টা ও কলমাকান্দা উপজেলার অন্তত শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি বাড়িঘরে ঢুকে যাওয়ায় মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিচ্ছে।

কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি, পোগলা, বড়খাপনও কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ওই উপজেলার বড় নদী উব্দাখালীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ওই নদীর পানি কলমাকান্দা ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এছাড়া কলমাকান্দার মহাদেও, দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী, সদর ও বারহাট্টা উপজেলার কংস, মগড়া, খালিয়াজুরির ধনুসহ বিভিন্ন ছোট-বড় নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে।

নেত্রকোনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার থেকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ৩৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। একই সময়ে, অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও জারিয়াঝাঞ্জাইল স্টেশনে ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৬১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি ও সুনামগঞ্জে ৫২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এতে জেলার ছোট-বড় সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ওই উপজেলার মহাদেও, বৈঠাখালী, মঙ্গলেশ্বরী ও গণেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেশ কিছু ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে পানি উঠেছে।

কৈলাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন বলেন, আমার ইউনিয়নের বেনুয়া, চানকোনা, খলা, সাকুয়া, ইন্দ্রপুর, বিষমপুর, চারিয়াসহ কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক ডুবে গেছে। কয়েকটি বাড়ির উঠানে ও কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানি উঠেছে। আর এক থেকে দেড় ফুট পানি বাড়লে প্রচুর বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাবে।

গ্রামে বন্যার পানি ঢোকায় আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিচ্ছে মানুষ

বারহাট্টার রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রাজু বলেন, আমার ইউনিয়নের অন্তত ১২টি গ্রাম এরইমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরাকোণা-ফকিরের বাজার সড়কের চরপাড়ায় নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য সড়কের প্রায় আধা কিলোমিটার অংশ কেটে রাখায় অন্তত আরও দশটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

কলমাকান্দার পোগলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, আমার ইউনিয়নের অন্তত ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মানুষজন পানিবন্দি হয়ে আছে। উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের সড়ক তলিয়ে গেছে। পানি বাড়তে থাকায় বন্যা কবলিত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে হবে।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, বন্যার পানিতে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে মানুষজনকে। সঙ্গে গৃহপালিত প্রাণীগুলোকেও নিরাপদে রাখা হয়েছে। শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রস্তুত রাখা আছে।

এদিকে নেত্রকোনা-১ আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাক আহমেদ রুহী বলেন, দুর্গাপুর-কলমাকান্দার বেশ কিছু গ্রামের মানুষের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। তাদের ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্লাবিত এলাকার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পানি বাড়লে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে।

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ জানান, বন্যা প্লাবিত এলাকায় সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রাখা হয়েছে।

এইচ এম কামাল/এফএ/এমএস

Read Entire Article