গ্রাহক আস্থায় এনআরবিসি ব্যাংকের আমানত বাড়ছে

3 hours ago 5

চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ আমানত সংগ্রহকারী এনআরবিসি ব্যাংক। সম্প্রতি ব্যাংকটির সংগৃহীত আমানতের পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়িয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ব্যাংকটির শাখা-উপশাখা।

আমানত ও সামগ্রিক কার্যক্রম সম্পর্কে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. তৌহিদুল আলম খান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইয়াসির আরাফাত রিপন

জাগো নিউজ: দেশের ব্যাংকগুলোতে বর্তমান আমানতের অবস্থা ও প্রবণতা কেমন?

ড. মো. তৌহিদুল আলম খান: বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধানত দুটি কাজ। একটি হলো আমানত সংগ্রহ করা এবং অন্যটি সংগৃহীত আমানতের অর্থ বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের ঋণ হিসেবে বিতরণ করা। আমানতকে ব্যাংকখাতের ‘ব্লাড’ বলা হয়। এজন্য আমানত সংগ্রহকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়।

ব্যাংকিংসেবা আমরা হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছি। আমাদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ প্লানেট রয়েছে। রয়েছে ইন্টারনেট ব্যাংকিংসেবা। আমরা শিগগির ই-কেওয়াইসি চালু করতে যাচ্ছি। নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে ব্যাংকে আসার প্রয়োজন পড়বে না

বাংলাদেশে ৬২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক কাজ করছে। পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন হলেও সামগ্রিকভাবে আমানত সংগ্রহ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল ব্যাংকগুলোর সংগৃহীত আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ২০ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৪ শতাংশ বেশি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ, আমেরিকার নতুন শুল্ক নীতিসহ নানা কারণে বিশ্ববাজার অস্থিতিশীল। এটার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সামগ্রিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ব্যাংকের আমানত প্রবাহ আরও বাড়বে।

জাগো নিউজ: আপনার ব্যাংকে বর্তমানে কী কী গুরুত্বপূর্ণ আমানত স্কিম রয়েছে, বিশেষ করে নির্দিষ্ট গ্রাহক গোষ্ঠীর জন্য?

ড. মো. তৌহিদুল আলম খান: আমি আগেই উল্লেখ করেছি বর্তমান প্রেক্ষাপট অনেকটাই ভিন্ন। এরপরও বাংলাদেশের গ্রাহকরা এখন আগের চেয়ে বেশি ফরমাল ব্যাংকিং চ্যানেলের দিকে ঝুঁকছেন। একদিকে তারা তাদের কষ্টার্জিত অর্থের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ব্যাংকে অর্থ জমা রাখছেন, অন্যদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মানুষের দোরগোড়ায় শাখা-উপশাখা স্থাপনের পাশাপাশি ডিজিটাল ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিংসেবা দিচ্ছে।

এখানে নগদ টাকা যেমন ব্যাংকে এসে জমা দিতে হবে না তেমনি সঞ্চয়ের মেয়াদ পূর্তি হলেও ব্যাংকে এসে টাকা উত্তোলন করতে হবে না। গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্থ জমা হবে

এনআরবিসি ব্যাংকে আমানতের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। জুন শেষে আমাদের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। গ্রাহকদের প্রয়োজনমাফিক সেবা, উদ্ভাবনী স্কিম ও গ্রাহকের আস্থার কারণে আমাদের আমানত বাড়ছে। এখানে উল্লেখ করতে চাই, সারাদেশে এনআরবিসি ব্যাংকের ১০৯টি শাখা এবং ৪১৫টি উপশাখা ব্যাংকিংসেবা দিচ্ছে।

আমরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গ্রাহকদের জন্য উপযোগী নানান ধরনের আমানত স্কিম চালু করেছি। এর মধ্যে রয়েছে সাধারণ সঞ্চয় ও স্থায়ী আমানত (এফডিআর), মাসিক সঞ্চয় স্কিম (ডিপিএস), ডাবল/ট্রিপল বেনিফিট স্কিম, মিলিয়নিয়ার স্কিম ও পেনশনার স্কিম। বিভিন্ন পেশাজীবী ও কর্মজীবী মানুষদের জন্য বিশেষ আমানত প্রকল্প চালু রয়েছে। সম্মানিত শিক্ষকদের জন্য শিক্ষাগুরু এবং পোশাকশ্রমিকসহ অন্য পেশার শ্রমিকদের জন্য বিশেষ সঞ্চয় প্রকল্প। শিক্ষার্থীদের সব ধরনের ব্যাংকিংসেবা বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য নিউজেন নামক প্রকল্প রয়েছে। এর বাইরে স্কুল শিক্ষার্থীদের স্কুল ব্যাংকিংসেবা চালু রয়েছে।

প্রত্যন্ত গ্রামের একজন নিম্ন আয়ের মানুষকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে আমরা মাত্র ১০ টাকায় অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দিচ্ছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কমর্কাণ্ড প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আমানত সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া আমাদের সব শাখা-উপশাখায় আল আমিন ইসলামিক ব্যাংকিংসেবা চালু রয়েছে। এখানে শরিয়াহভিত্তিক সুদমুক্ত সঞ্চয়ের সুযোগ পাচ্ছেন গ্রাহকরা।

জাগো নিউজ: গ্রাহকদের জন্য প্রযুক্তি, পেমেন্ট ও নিরাপত্তার দিক থেকে কী কী উদ্ভাবন এনেছেন?

ড. মো. তৌহিদুল আলম খান: ব্যাংকের সেবা সহজ ও নিরাপদ করার জন্য প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা সেবা দেওয়ার ক্ষেত্র হিসেবে সময় ও স্থানের পরিবর্তে প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। ব্যাংকিংসেবা আমরা হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছি। আমাদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ প্লানেট রয়েছে। রয়েছে ইন্টারনেট ব্যাংকিংসেবা। আমরা শিগগির ই-কেওয়াইসি চালু করতে যাচ্ছি। নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে ব্যাংকে আসার প্রয়োজন পড়বে না।

ব্যাংকের সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট খোলা, অর্থ জমা, অর্থ স্থানান্তর ঘরে বসেই নিজের ইচ্ছামতো করা যাচ্ছে। আবার চেকবই ও এটিএম কার্ড ছাড়াই টাকা উত্তোলন করা যাচ্ছে কিউআর কোড লেনদেনের মাধ্যমে। ডিজিটালভিত্তিক লেনদেন একদিকে যেমন সহজতর, অন্যদিকে অধিক নিরাপদ। সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন নতুন ফিচার আমাদের ব্যাংকের আমানত বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।

জাগো নিউজ: ভবিষ্যতে আপনার ব্যাংক নতুন কী ধরনের আমানত স্কিম চালু করতে চায় এবং গ্রাহকসেবায় কী ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে?

ড. মো. তৌহিদুল আলম খান: প্রযুক্তি কেন্দ্র করে বিশ্ব প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। অনলাইন, ডিজিটাল সেবার পাশাপাশি এখন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) সেবা শুরু হয়েছে। এআইকে কীভাবে গ্রাহকদের কল্যাণে ব্যবহার করা যায় সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা ডিজিটাল ডিপোজিট প্যাকেজ করতে চাই। ন্যানো সেবা চালু করতে চাই। এখানে অতিক্ষুদ্র পরিমাণে ঋণ যেমন দিতে চাই, তেমনি অতিক্ষুদ্র পরিমাণ দৈনিকভিত্তিক, সাপ্তাহিকভিত্তিক সঞ্চয় প্রকল্প চালু করতে চাই।

এ প্রক্রিয়া পুরোটাই হবে অ্যাপভিত্তিক। এখানে নগদ টাকা যেমন ব্যাংকে এসে জমা দিতে হবে না তেমনি সঞ্চয়ের মেয়াদ পূর্তি হলেও ব্যাংকে এসে টাকা উত্তোলন করতে হবে না। গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্থ জমা হবে। আমরা প্রবাসী ও ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ডিজিটাল সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে চাই।

জাগো নিউজ: ব্যাংকখাতে আমানতের নিরাপত্তা ও জনগণের আস্থা বাড়াতে সরকারের কী ভূমিকা থাকা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

ড. মো. তৌহিদুল আলম খান: বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হলেও এর সরাসরি নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ সরকার। সরকারের পক্ষে বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনুমোদন, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই ব্যাংকগুলোর প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক তথা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর তদারকি ও সময়োপযোগী নীতিমালা ব্যাংকখাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক। আমানতকারীদের অর্থের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সঞ্চয়ে সাধারণ মানুষদের উদ্বুদ্ধ করতে আর্থিক সচেতনতা কার্যক্রম বাড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আইন এবং নীতিমালা প্রণয়ন ও কার্যকর করা প্রয়োজন।

নগদ লেনদেনের সীমারেখা বেঁধে দেওয়া প্রয়োজন। একেবারে নিম্ন আয়ের মানুষদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে রেমিট্যান্সের মতো প্রণোদনা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এতে একদিকে যেমন ব্যক্তির আর্থিক নিরাপত্তা বাড়বে, অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি আরও সুদূঢ় হবে। এছাড়া আর্থিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এতে ব্যাংকগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা আরও বাড়বে।

ইএআর/এএসএ/এমএফএ/এএসএম

Read Entire Article