গ্রাহকের ৮৫ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এনজিও ‘পারভিন-সমতা’

4 days ago 8

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ছয়টি কার্যালয় চালু করে উচ্চ মুনাফার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমানত সংগ্রহ করে আসছিল পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থা ও সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি নামে দুটি এনজিও। তবে এক সপ্তাহ ধরে কার্যালয়গুলোতে তালা ঝুলছে। উপজেলার আড়াই শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ৮৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে এনজিও দুটির বিরুদ্ধে।

গত ৫ জানুয়ারি মালিকের সঙ্গে বগুড়ার সান্তাহারে প্রধান কার্যালয়ে জরুরি সভা রয়েছে জানিয়ে সবাই চলে যান পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থার চারটি কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপর থেকেই চারটি কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওইদিনের পর থেকে কেউই আর কার্যালয়ে আসেননি।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও একই কথা বলে চলে যান। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) পর্যন্তু ওই দুটি এনজিওর কার্যালয় তালাবদ্ধ দেখা গেছে। প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীরা টাকা ফেরতের আশায় কার্যালয়গুলোতে ভিড় করছেন।

আক্কেলপুর পৌরশহরের পূর্ব রাজকান্দা মহল্লার নুরুল ইসলামের ভাড়া বাসায় পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থার কার্যালয় ছিল। বাসার মালিক নুরুল ইসলাম জানান, তিন বছর আগে তার বাসা ভাড়া নিয়ে পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থার কার্যালয় করা হয়েছিল। জানুয়ারির ৫ তারিখে বাসা ভাড়ার টাকা দিয়ে তারা প্রধান কার্যালয়ে মালিকের সঙ্গে জরুরি মিটিং আছে বলে চলে যান। এরপর আর আসেননি।

গ্রাহকের ৮৫ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এনজিও ‘পারভিন-সমতা’

জাহিদুল নামের একজন গ্রাহক বলেন, ‘আমি নিজে ২৫ লাখ টাকা আমানত রেখেছি। শুরুতে প্রতি লাখে দুই হাজার টাকা লাভ দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে। প্রতিমাসে আমি সর্বোচ্চ ১৬০০ টাকা লভ্যাংশ পেয়েছি।’

এদিকে প্রায় ছয় বছর আগে উপজেলার চন্দনদিঘী বাজারে সমতা ক্ষুদ্র সমবায় সমিতির প্রধান কার্যালয় খোলা হয়। প্রতিদিনের কিস্তির ভিত্তিতে ঋণদানের পাশাপাশি প্রতিমাসে লাখে ২ হাজার টাকার মুনাফার লোভ দেখিয়ে লোকজনদের কাছে আমানত সংগ্রহ শুরু করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ওই শাখার ১০-১২ জন গ্রাহক জানান, ৩০ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে। অথচ বুধবার থেকে অফিসে তালা ঝুলছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবার ফোনও বন্ধ। তারা সবাই আমানত হারানোর ভয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

শিয়ালা গ্রামের মোজাহার আলী বলেন, ‘আমি নিজে ও আমার দুই ছেলে ৬৮ লাখ টাকা চন্দনদিঘী সমতার শাখায় রেখেছি। আমরা দুই মাস ধরে মুনাফার টাকা পাইনি। অফিস বন্ধ করে কর্মকর্তারা সবাই পালিয়েছেন। আমরা পথে বসে গেছি।’

গ্রাহকের ৮৫ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এনজিও ‘পারভিন-সমতা’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থার উপ-পরিচালক নুরুজ্জামানের ফোনে একাধিকবার কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের কর্মকর্তারাও ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন।

উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আবু হাশেম মো. মোকারম হোসেন বলেন, পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নয়। তবে সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড আমরা নিয়ন্ত্রণ করি। তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে যে আমানত নিয়েছেন তা সম্পূর্ণ বেআইনি। তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর একটি প্রতিবেদন পাঠাবো।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম বলেন, পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থা ও সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের দুটি এনজিওর কার্যালয়গুলো তালাবন্ধ রয়েছে। অনেকে বেশি মুনাফার লোভে পড়ে এনজিও দুটিতে টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। তবে বিনিযোগকারী কেউ এখনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

আল মামুন/এসআর/এএসএম

Read Entire Article