গ্রিসে দুই প্রবাসী ব্যবসায়ীর দেড় কোটি টাকা চুরির অভিযোগ

4 months ago 64

গ্রিস প্রতিনিধি

ইউরোপের দেশ গ্রিসে দুই ব্যবসায়ীর ১ লাখ ২০ হাজার ইউরো, বাংলাদেশের টাকার হিসেবে প্রায় দেড় কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে এক সেলসম্যান। এ ঘটনায় বাংলাদেশ দূতাবাসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন লিয়াকত ও সাইদুর রহমান।

তবে এক ব্যবসায়ীর ২৭ হাজার ইউরো চুরি করার বিষয়ে অভিযুক্ত উসমান গণির স্বীকারোক্তি দেখা গেছে একটি ভিডিও ক্লিপে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের নেতাদের মধ্যস্থতায় হয়েছে সালিশ বৈঠকও।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে গ্রিসে ব্যবসা করছেন মোশারফ হোসেন লিয়াকত ও সিআইপি সাইদুর রহমান। তারা বাংলাদেশ থেকে দেশীয় পণ্য নিয়ে গ্রিসে মুদি মালের দোকানগুলোতে পাইকারী দামে বিক্রি করেন। কমিউনিটিতে দু‘জনেরই রয়েছে বেশ পরিচিতি।

হবিগঞ্জের সন্তান গ্রিসপ্রবাসী সাইদুর রহমানের প্রতিষ্ঠানে ৪ বছর ধরে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করতো কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার জয়সিদ্ধি গ্রামের জালাল উদ্দিনের পুত্র ওসমান গণি। সে সাইদুর রহমানের প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা পণ্য সামগ্রী এথেন্সে অবস্থিত এশিয়ান মালিকানাধীন বিভিন্ন দোকানে দোকানে দিনে পৌঁছে দেওয়ার পর প্রতিদিন বিকেলে অর্থ সংগ্রহ করত। গত ৬ মাস ধরে সে উত্তোলন করা অর্থ নিজের কাছে রেখে দিয়ে হঠাৎ পালিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে গ্রিসপ্রবাসী ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য নিয়ে গ্রিসে ব্যবসা করছি। আমার প্রতিষ্ঠানে গত ৪ বছর ধরে কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার জয়সিদ্ধি গ্রামের ওসমান গণি সেলসম্যান হিসেবে কাজ করে আসছিল। তার কথা বার্তায় ও আচার ব্যবহারে প্রথমে বুঝতে পারিনি সে যে এত বড় প্রতারক। তাই আমার ব্যবসার অনেক দায়িত্ব তার কাছে দিয়ে দেই।’

ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, ‘এথেন্সের বিভিন্ন দোকানে মাল দেওয়ার পর সে প্রতিদিন বিকেলে গিয়ে অর্থ উত্তোলন করত। এভাবেই চলছিল। তাকে বিশ্বাস করে আমি আর খাতা যাচাই বা এত নজরদারিতে রাখিনি। কিন্তু গত ৬ মাস ধরে সে আমাকে কোনো হিসেব বুঝিয়ে দেয়নি। মাল বিক্রি করে ক্যাশে টাকা জমা করেনি। এর মাঝে সে হঠাৎ করেই পালিয়ে যায়। একপর্যায়ে তাকে আটকের পর ২৭ হাজার ইউরো চুরি করেছে মর্মে স্বীকারোক্তি দেয়। কিন্তু আমি আমার খাতা যাচাই বাছাই করে দেখেছি বিগত দুই বছরে প্রতারক উসমান ৮০ হাজার ইউরো আত্মসাৎ করেছে।’

জানা যায়, তাকে আটকের পর বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতাদের মধ্যস্থতায় এক সালিশ বৈঠক বসে। সালিশে ব্যবসায়ী সাইদুর রহমানকে মাসিক কিস্তিতে আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত দেবে বলে সিদ্ধান্তে রাজি হয় উসমান। কিন্তু মাস শেষে কিস্তির টাকা না দিয়েই সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। এ ঘটনার পরে তাকে নিজ এলাকার সন্তান হিসেবে চাকরি দেন আরেক ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন লিয়াকত। তিনি ভেবেছিলেন হয়তো তার ভুল বুঝতে পেরে এখন সংশোধন হয়েছে। কিন্তু লিয়াকতের দয়াও যেন আপদ ডেকে এনেছে।

কিশোরগঞ্জের সন্তান গ্রিস প্রবাসী ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন লিয়াকত বলেন, আমি বিশ্বাস করে তাকে আমার ব্যবসার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে জরুরি কাজে ১৫ দিনের জন্য বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। তখন সে বিভিন্ন দোকান থেকে আমার বকেয়া টাকা উত্তোলন করে এবং আমার প্রতিষ্ঠানে থাকা বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে ৪০ হাজার ইউরো তার কাছে রেখে দেয়। আমি দেশ থেকে আসার পর তার কাছে হিসেব চাইলে সে আগামীকাল উত্তোলন করা অর্থ ও হিসাব বুঝিয়ে দিবে বলে জানায়। কিন্তু পরের দিন হঠাৎ সে পালিয়ে যায়।

আমার ৪০ হাজার ইউরো নিয়ে সে পালিয়ে গিয়ে আমাকে নিঃস্ব করে গেছে। পরে আমরা দূতাবাসে অভিযোগ করার পর দূতাবাস অভিযোগটি কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছেন। আমরা প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করি।

এসব ঘটনায় দুই ব্যবসায়ী পৃথকভাবে অভিযোগ দায়ের করেছেন এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অভিযোগটি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছে দূতাবাস।

এসব প্রতারক থেকে সতর্ক থাকতে ও অভিযুক্ত ওসমানকে ধরিয়ে দিতে সব প্রবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতারা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সিনিয়র সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, সালিশে অভিযোগটি প্রমাণের পর একটি রায় ঘোষণা করা হয়। উসমান প্রতি মাসে মাসে আত্মসাৎকৃত অর্থ সাইদুর রহমানকে ফেরত দেবে বলে রায় মেনে নিয়ে ফের আরেকজনের সাথে একই কাজ করে বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সিনিয়র সভাপতি দেওয়ান আনোয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমরা বসে সাইদুর রহমানের খাতা টান দেই, ৬ মাসের হিসাব যাচাই-বাচাই করে দেখতে পাই সে মাল বিক্রি করেছে ঠিকই কিন্তু সে ক্যাশে টাকা জমা করেনি। হিসাব করে ২৭ হাজার ইউরোর গরমিল পাওয়া যায়। এটাও চুরি। সালিশে ২৭ হাজার ইউরো সাইদুলকে ফেরত দেবে মর্মে একটি সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। উসমানও রাজি হয় তিন কিস্তিতে সাইদুর রহমানকে ২৭ হাজার ইউরো পরিশোধ করবে। কিন্তু সে পরে বিচার সালিশ ও বাংলাদেশ কমিউনিটিকে অপমান করেছে।

দেওয়ান আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, তার প্রতারণার শিকার অপরজন মোশারফ হোসেন লিয়াকত। লিয়াকতের মনে হয় বুঝের অভাব ছিল। সাইদুরের ঘটনা ও বিচার সালিশের পরও আবেগের বশে ব্যবসায়ী লিয়াকত ওই উসমানকে সেলসম্যান হিসেবে নিযুক্ত করেন। সেখান ৩ মাসের মাথায় একই কাজ করেছে। লিয়াকতের ৪০ হাজার ইউরো আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছে।

প্রতারক উসমানকে কোথাও দেখলে বাংলাদেশ কমিউনিটিকে জানানোর অনুরোধ জানিয়েছেন সভাপতি সভাপতি দেওয়ান আনোয়ার হোসেন।

এমআরএম/এএসএম

Read Entire Article