ঘুরে এলাম নয়াদিল্লির ইমাম জামিনের মাজার
ফাত্তাহ তানভীর রানা কুতুব মিনারের গেটে ঢুকেই কুতুব মিনারে না গিয়ে বামদিকে ছোট খিলান দিয়ে বের হয়ে একটা সমাধি চোখে পড়ে। আমি সমাধিতে উল্লেখ করা নাম দেখে চিনতে পারিনি। সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তার পরে কুতুব মিনার কমপ্লেক্স ঘুরে দেখি। আমি সেখানে সব সুলতান ও অন্য মৃত মানুষের জন্য একবারেই কবর জিয়ারত করে ফেলি। সমাধির পাশে ও গুগল ম্যাপে লেখা আছে ইমাম জামিন। আমি তখনো বুঝিনি কার কবর জিয়ারত করলাম। কুতুব মিনার কেন্দ্রীক যে পর্যটন গড়ে উঠেছে, তাতে কুতুব উদ্দিন বখতিয়ারের মাজার, ভুলভুলাইয়া, বাওলি কি রাজন, জামালি-কামালি মসজিদ, লাল কোট কেল্লাসহ অন্য সুলতানদের সমাধি অন্তর্ভুক্ত। কুতুব মিনার কমপ্লেক্স ছাড়া উল্লেখিত ঐতিহাসিক স্থানে যেতে হলে টিকিট লাগে না। কুতুব মিনার কমপ্লেক্সে ঢোকার পরে, আমার সবটুকু দেখার ইচ্ছে ছিল। অবশ্যই কুতুব মিনার, মাদ্রাসা, স্তম্ভ, পিলার, পুরাকীর্তি, সুলতানদের সমাধিসহ অন্য স্থাপনা ঘুরে ঘুরে দেখেছিলাম। ইমাম জামিন কোনো সম্রাট বা উজির ছিলেন না। তবে তিনি কে ছিলেন? ইসলাম প্রচারে মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনেকেই ভারতবর্ষে এসেছেন। ইমাম জামিন তাদের মধ্যে অন্যতম। ইমাম জামিন দিল্লির সুলতানদের সময়ে কু
ফাত্তাহ তানভীর রানা
কুতুব মিনারের গেটে ঢুকেই কুতুব মিনারে না গিয়ে বামদিকে ছোট খিলান দিয়ে বের হয়ে একটা সমাধি চোখে পড়ে। আমি সমাধিতে উল্লেখ করা নাম দেখে চিনতে পারিনি। সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তার পরে কুতুব মিনার কমপ্লেক্স ঘুরে দেখি। আমি সেখানে সব সুলতান ও অন্য মৃত মানুষের জন্য একবারেই কবর জিয়ারত করে ফেলি। সমাধির পাশে ও গুগল ম্যাপে লেখা আছে ইমাম জামিন। আমি তখনো বুঝিনি কার কবর জিয়ারত করলাম।
কুতুব মিনার কেন্দ্রীক যে পর্যটন গড়ে উঠেছে, তাতে কুতুব উদ্দিন বখতিয়ারের মাজার, ভুলভুলাইয়া, বাওলি কি রাজন, জামালি-কামালি মসজিদ, লাল কোট কেল্লাসহ অন্য সুলতানদের সমাধি অন্তর্ভুক্ত। কুতুব মিনার কমপ্লেক্স ছাড়া উল্লেখিত ঐতিহাসিক স্থানে যেতে হলে টিকিট লাগে না। কুতুব মিনার কমপ্লেক্সে ঢোকার পরে, আমার সবটুকু দেখার ইচ্ছে ছিল। অবশ্যই কুতুব মিনার, মাদ্রাসা, স্তম্ভ, পিলার, পুরাকীর্তি, সুলতানদের সমাধিসহ অন্য স্থাপনা ঘুরে ঘুরে দেখেছিলাম।
ইমাম জামিন কোনো সম্রাট বা উজির ছিলেন না। তবে তিনি কে ছিলেন? ইসলাম প্রচারে মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনেকেই ভারতবর্ষে এসেছেন। ইমাম জামিন তাদের মধ্যে অন্যতম। ইমাম জামিন দিল্লির সুলতানদের সময়ে কুতুব মিনারের কাওয়াত-উল-ইসলাম মসজিদে ইমামতি করতেন। তিনি মহানবী হযরত মোহাম্মাদের (সা.) বংশধর ছিলেন।
ইমাম জামিন একজন সৈয়দ ছিলেন এবং সুফিবাদের চিশতি তরিকার অনুসারী ছিলেন। ইমাম জামিনের প্রকৃত নাম মোহাম্মদ আলী। তিনি ইমাম জমিন নামেও পরিচিত ছিলেন। সুলতান সিকান্দার লোদীর সময়ে তিনি তুরস্ক থেকে দিল্লি আসেন। তিনি ষোড়শ শতকের একজন ধর্মগুরু ছিলেন।
প্রবেশদ্বারের শিলালিপি অনুসারে, ইমামের সমাধি মোঘল সম্রাট হুমায়ূনের সময় (১৫৩৭ থেকে ১৫৩৮ সালের মধ্যে) নির্মিত হয়। ইমাম জামিন ১৫৩৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন। মাজারটি কুতুব মিনার কমপ্লেক্সের শেষ সংযোজন। আলায় দরওয়াজার পূর্ব দিকে অবস্থিত সমাধিটি মূল স্থাপত্যের অনেক পরে নির্মিত হয়েছিল।
আরও পড়ুন
ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের বিস্ময়কর ভ্রমণ
বিলুপ্তির পথে দেড়শ বছরের বাজপাই জমিদারবাড়ি
মহানবী হযরত মোহাম্মদের (সা.) বংশধর ইমাম জামিনের কবরস্থান কুতুব মিনার কমপ্লেক্সে অবস্থিত। প্রতিদিন ভারত ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মুসলিমরা এখানে আসেন। ইমাম জামিনের সমাধিটি লোদী স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত হয়েছে। সমাধিটি বর্গাকার আকারের। দৈর্ঘ ও প্রস্থ উভয় ক্ষেত্রেই পরিমাপ ৭.৩ মিটার (২৪ ফুট)। ছাদটি বারোটি স্তম্ভ সমর্থিত এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ ছাড়া সবদিকে জলিসসহ একটি বেলেপাথরের গম্বুজ দিয়ে চূর্ণ করা হয়েছে। গম্বুজটি একটি অষ্টভুজাকৃতির ড্রাম থেকে উঠে আসে এবং ছজ্জার ওপরে একটি মার্বেল প্যানেল দিয়ে সজ্জিত করা হয়। সাথে একটি ডাবল সারি ক্রেনেল।
অভ্যন্তরীণ অলঙ্করণ এবং সেনোটাফ নির্মাণে মার্বেল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। সমাধির পশ্চিম দিকে একটি মার্বেল-নির্মিত মেহরাব আছে। মসজিদের দেওয়ালে কুলুঙ্গি, যা মুসলমানরা যেদিকে প্রার্থনা করে তা নির্দেশ করে। প্রবেশদ্বার দক্ষিণ দিকে অবস্থিত, তা-ও মার্বেল দিয়ে তৈরি। সম্পূর্ণ বেলেপাথরের কাঠামোটি মূলত পালিশ করা স্টুকো দিয়ে আবৃত, যার একটি অংশ এখনো বিদ্যমান। প্রবেশদ্বারের দরজার ওপরে নাসখ লিপিতে ইমাম জামিনের নাম লেখা আছে।
একজন মসজিদের ইমাম, যাকে দিল্লি সালতানাত এবং দিল্লির সম্রাটরাও ভীষণ শ্রদ্ধা করতেন। সবাই তাঁকে মেনে চলতেন। সমসাময়িক ও সাম্প্রতিক বিশ্বে এ ঘটনা বিরল ও নজিরবিহীন। সেই সময়ের শাসকদের উদারতা ছিল। মসজিদের ইমাম জ্ঞান, চারিত্রিক দক্ষতা ও কর্মগুণেই সম্রাট ও সুলতানদের মাথার তাজ হতে পেরেছিলেন।
তিনি ক্ষণজন্মা ছিলেন বলেই কুতুব মিনার কমপ্লেক্সে তাঁকে সমাহিত করা হয়। আজও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা তাঁকে স্মরণ করেন শ্রদ্ধার সাথে। আমি বিস্ময় নিয়ে চেয়ে রইলাম ইমাম জমিনের মাজার পানে। তাঁদের ত্যাগের কারণে উপমহাদেশে ইসলাম বিকাশ লাভ করে পরিণত হয়েছে।
লেখক: ব্যাংকার ও গল্পকার।
এসইউ/
What's Your Reaction?