ঘোষণায় পার ১৭ বছর, উন্নয়ন জোটেনি পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন জেলা মৌলভীবাজার। এ জেলার সাতটি উপজেলায় কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক ছোট-বড় মিলে প্রায় শতাধিক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া রয়েছে অসংখ্য চা বাগান, রিসোর্ট ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস। গত এক দশকে এই জেলার পর্যটন খাতে বেসরকারিভাবে কিছুটা উন্নতি ঘটলেও সরকারিভাবে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। জানা যায়, প্রায় ১৭ বছর আগে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পর্যটন জেলা হিসেবে মৌলভীবাজারকে ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ এই সময়ে যতটুকু পর্যটন সমৃদ্ধ জেলা হওয়ার কথা, বাস্তবে সরকারিভাবে তার তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ জেলার ৭টি উপজেলায় ছোট-বড় অনেক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এসব পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পর্যটনকেন্দ্র ছাড়া বাকিগুলোতে এখনো সরকারের নজরেই পড়েনি। পর্যটন শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব জেলার পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, গাড়ি ও অল্প কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পর্যটকদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। জেলার প্রায় ১০ হাজার পরিবার পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জমির দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েক বছর আগেও যেখানে জমির শ

ঘোষণায় পার ১৭ বছর, উন্নয়ন জোটেনি পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন জেলা মৌলভীবাজার। এ জেলার সাতটি উপজেলায় কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক ছোট-বড় মিলে প্রায় শতাধিক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া রয়েছে অসংখ্য চা বাগান, রিসোর্ট ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস। গত এক দশকে এই জেলার পর্যটন খাতে বেসরকারিভাবে কিছুটা উন্নতি ঘটলেও সরকারিভাবে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

জানা যায়, প্রায় ১৭ বছর আগে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পর্যটন জেলা হিসেবে মৌলভীবাজারকে ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ এই সময়ে যতটুকু পর্যটন সমৃদ্ধ জেলা হওয়ার কথা, বাস্তবে সরকারিভাবে তার তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ জেলার ৭টি উপজেলায় ছোট-বড় অনেক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এসব পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পর্যটনকেন্দ্র ছাড়া বাকিগুলোতে এখনো সরকারের নজরেই পড়েনি।

পর্যটন শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

জেলার পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, গাড়ি ও অল্প কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পর্যটকদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। জেলার প্রায় ১০ হাজার পরিবার পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জমির দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েক বছর আগেও যেখানে জমির শতক ২০-৫০ হাজার টাকা ছিল, সেই জায়গার শতক এখন ৬-৭ লাখ টাকা। বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে।

ঘোষণায় পার ১৭ বছর, উন্নয়ন জোটেনি পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে

রিসোর্ট ব্যবসার বিস্তার

জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ২০১৫ সালে গ্র‍্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ চালু হওয়ার পর এই অঞ্চলে রিসোর্ট ব্যবসার ব্যাপক বিস্তার ঘটে। গত কয়েক বছরে জেলায় নতুন করে অনেক রিসোর্ট তৈরি করা হয়েছে। সব মিলে অন্তত প্রায় ২০০টি রিসোর্ট রয়েছে। কয়েকটি রিসোর্টে ৫ তারকা মানের সেবা পাওয়া যায়। তবে রিসোর্ট ব্যবসার বিস্তার ঘটলেও গাইড ও ট্রান্সপোর্ট ব্যবসার তেমন বিস্তার ঘটেনি। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হামহাম জলপ্রপাতসহ কিছু স্থানে গাইডের প্রয়োজন হলেও বেশিরভাগ এলাকায় গাইডের প্রয়োজন হয় না।

আরও পড়ুন-
যাতায়াত দুর্ভোগে বিছনাকান্দি ভুলতে বসেছে পর্যটকরা
পর্যটন মৌসুমে নির্জন সুন্দরবন, সাতক্ষীরা রেঞ্জে শুধুই হতাশা
সেন্টমার্টিনে পর্যটক থাকতে দু’মাসের নিষেধাজ্ঞায় বছরজুড়ে অনিশ্চয়তা

পর্যটন খাতে সরকারি-বেসরকারি অগ্রগতি

গত কয়েক বছরে এখানে বেসরকারিভাবে আধুনিক মানের হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট গড়ে উঠলেও পর্যটন শিল্পের সামগ্রিক বিকাশ হয়নি। কারণ সরকারিভাবে পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। রিসোর্ট, হোটেল ব্যবসার মাধ্যমে ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। তবে সরকারিভাবে বড় পরিসরে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বিশেষ করে জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি একেবারেই। এখানে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হলে চাকরি ও কর্মসংস্থান কয়েকগুণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ঘোষণায় পার ১৭ বছর, উন্নয়ন জোটেনি পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে

বিদেশি পর্যটকদের অভিজ্ঞতা

জেলায় আগত বিভিন্ন দেশের বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবুজ প্রকৃতি ও চা-বাগান দেখতে বেশিরভাগ বিদেশি পর্যটক আসেন। তবে এখানকার কয়েকটি রিসোর্ট ছাড়া অনেক রিসোর্টে বিদেশি পর্যটক থাকতে চান না। কেউ আসেন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী জীবনযাত্রা দেখতে। সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করলে অনেক বিদেশি পর্যটক এখানে ভ্রমণে আসবেন। এখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই দুর্বল অবস্থা এখনো। এগুলো আরও উন্নত করতে হবে।

এছাড়া দেশি পর্যটকরা বলছেন, এই অঞ্চলে যারা একবার এসেছেন তারা বারবার আসতে চান। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ মনোমুগ্ধকর। তবে নানান সমস্যা রয়েছে পর্যটকদের। বিশেষ করে জেলায় বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র আছে যেখানে এখনো রাস্তা তৈরি হয় নি। পর্যটকদের জন্য শ্রীমঙ্গল ও জেলা শহর ছাড়া ভালো খাবারের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। যারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন তাদের যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য ট্রেন থাকলেও সবসময় ট্রেনের টিকিট সংকট থেকে। এছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হয় পর্যটকদের। স্থানীয়ভাবে পর্যটকদের জন্য বিশেষ বাস বা গাড়ির ব্যবস্থা নেই। এসব সমস্যা সমাধান করলে পর্যটকের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।

মৌলভীবাজারে পর্যটকের পছন্দের তালিকায় যেসব স্থান

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, উঁচু নিচু ৯২ সবুজ চা বাগান, মাধবপুর লেক, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতি কমপ্লেক্স, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, বাইক্কা বিল, হামহাম জলপ্রপাত, মণিপুরী পল্লি, খাসিয়া পুঞ্জি, হাকালুকি হাওর, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, নীলকণ্ঠ টি কেবিন, সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা, পৃথিমপাশা নবাববাড়ি, পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্ট, বর্ষিজোড়া ইকোপার্কসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। এসব পর্যটন কেন্দ্র বিভিন্ন ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে।

ঘোষণায় পার ১৭ বছর, উন্নয়ন জোটেনি পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে

পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পর্যটন জেলা ঘোষণার পর দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলেও পর্যটন শিল্পের বিকাশে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। বেসরকারিভাবে আধুনিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট গড়ে উঠলেও পর্যটক কম আসায় অনেক ব্যবসায়ী হতাশায় ভুগছেন। পর্যটককে সব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে এখানকার পর্যটনকেন্দ্রগুলো নতুন করে সাজানো, অবকাঠামোর আধুনিকায়ন, বিমানে যাতায়াতের ব্যবস্থা, পর্যটকদের সুরক্ষা, উন্নত সেবা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। একইসঙ্গে দেশ ও দেশের বাইরে এখানকার দর্শনীয় স্থান নিয়ে প্রচারণা চালাতে হবে। তাহলে কিছুটা হলেও সংকট দূর হবে। একইসঙ্গে পর্যটক শিল্প বিকশিত হবে।

শ্রীমঙ্গলের একটি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরমান খান বলেন, মৌলভীবাজারের পর্যটন শিল্প স্থানীয় অর্থনীতিতে বেশ প্রভাব ফেলছে। গত এক দশকে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ জেলার পর্যটনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এর জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারিভাবে মিউজিয়ামসহ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান নতুনভাবে আবিষ্কার করলে আরও অনেকদূর এগিয়ে যাবে এ জেলার পর্যটন শিল্প।

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি ও গ্র‍্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমদ বলেন, জেলায় প্রায় ২০০টি রিসোর্ট রয়েছে। এসব রিসোর্ট বেশিরভাগ শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত। ২০১৫ সালের পর থেকে এই অঞ্চলের ইকো রিসোর্টের প্রচলন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে রিসোর্ট ব্যবসার ব্যাপক বিস্তার বেড়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে পর্যটকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিশেষ করে যাতায়াত ব্যবস্থার অবস্থা খুবই নাজুক। বিদেশি পর্যটকেরা এই অঞ্চলে ঘুরতে এলে সুযোগ সুবিধা খুবই কম পেয়ে থাকেন। তাদের অনেক চাহিদা পূরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। বিদেশি যারাই আসেন তাদের অধিকাংশ সাধারণ পর্যটক হিসেবে আসেন। পর্যটনশিল্প নিয়ে উদ্যোগ নিলে বিদেশিরা আসবেন এই জেলায়।

মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তানভীর হোসেন বলেন, মৌলভীবাজারের পর্যটন খাতকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকারের কাছে অনেকগুলো আবেদন করা হয়েছে। এরমধ্যে শমশেরনগর বিমানবন্দর চালু, ট্রেনের টিকিট বৃদ্ধি, সড়ক প্রশস্ত করা, একটি মিউজিয়াম স্থাপনসহ বেশকিছু দাবি জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে শ্রীমঙ্গল শহরের যানজট নিরসন ও পর্যটকদের যাতায়াতে নতুন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। আশা করি আস্তে আস্তে আমাদের অন্যান্য প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।

এফএ/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow