চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন মাশুল কার্যকর, রপ্তানিতে চাপের শঙ্কা

7 hours ago 4

চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৯ বছর পর নতুন মাশুল হার কার্যকর হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী তা গড়ে ৪১ শতাংশ বেড়েছে। এতে করে রপ্তানি খাত চাপে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে জারি করা সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে নতুন মাশুল কার্যকর হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতিটি ২০ ফুট কনটেইনারে এখন গড়ে ৪ হাজার ৩৯৫ টাকা বাড়তি মাশুল দিতে হবে। আগে যেখানে গড়ে ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা দিতে হতো, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা। অর্থাৎ খরচ বেড়েছে গড়ে ৩৭ শতাংশ।

বন্দরের সেবা নেওয়ার জন্য এ মাশুল দিতে হবে বন্দর ব্যবহারকারীদের। গত ২৪ জুলাই বন্দরের জন্য প্রস্তাবিত নতুন মাশুল অনুমোদন করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কনটেইনার ছাড়াও কনটেইনারবাহী জাহাজের সেবা নেওয়ার জন্য আলাদা মাশুল দিতে হয়। আবার কনটেইনারভেদে খরচ কমবেশি হয়ে থাকে। যেমন আমদানি কনটেইনার হলে মাশুল বাড়বে ৫ হাজার ৭২০ টাকা। রপ্তানির হলে তা বৃদ্ধি পাবে ৩ হাজার ৪৫ টাকা।

কনটেইনারে মাশুল বাড়ার বড় খাত হলো জাহাজ থেকে তা ওঠানো ও নামানো। প্রতি একক কনটেইনার ওঠানো বা নামানোর জন্য আগে মাশুল ছিল ৪৩ দশমিক ৪০ ডলার। এখন তা বাড়িয়ে ৬৮ ডলার করা হয়েছে। বেড়েছে ২৪ দশমিক ৬০ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে কনটেইনারের পণ্যে প্রতি কেজিতে আগে গড়ে মাশুল দিতে হতো ১ টাকা ২৮ পয়সা। নতুন হারে বাড়তি দিতে হবে ৪৭ পয়সা।

এ ছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষ ডলারের ভিত্তিতে মাশুল আদায় করে। নতুন প্রজ্ঞাপনে ডলারপ্রতি বিনিময় মূল্য ধরা হয়েছে ১২২ টাকা। ভবিষ্যতে ডলারের দাম বেড়ে গেলে মাশুলও বাড়বে।

এদিকে বন্দর ব্যবহারকারীরা শুরু থেকেই একলাফে ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ানোর বিরোধিতা করে আসছিলেন। তাদের আশঙ্কা, এতে হঠাৎ ভোক্তার ওপর বাড়তি চাপ পড়বে এবং রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাবে।

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম চট্টগ্রামের সভাপতি এবং বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব বলেন, সবচেয়ে বেশি চাপে পড়বে তৈরি পোশাক খাত। কারণ, কাঁচামাল আমদানির সময় একবার মাশুল দিতে হবে, আবার রপ্তানির সময় দিতে হবে। দুই দফায় এ চাপ কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়।

এ নিয়ে কথা হলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি শফিউল্লাহ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই হঠাৎ করে বন্দরের চার্জ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলছেন, এমন সময় চার্জ বাড়ানো হলো যখন রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। সবার সঙ্গে আলাপ করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন ছিল।

ব্যবসায়ীদের দাবি, ভবিষ্যতে বন্দরের বেশির ভাগ টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরদের হাতে চলে যাবে। ফলে মাশুল বৃদ্ধির বড় সুফল যাবে বিদেশিদের কাছে।

বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় পুরোটাই সমুদ্রপথে কনটেইনারে পরিবহন হয়। শিল্পের কাঁচামাল ও মূল্যবান যন্ত্রপাতির আমদানিও হয় কনটেইনারে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই ৯৯ শতাংশ কনটেইনার পরিবহন সম্পন্ন হয়। ফলে নতুন মাশুল কার্যকর হওয়ায় কনটেইনার পরিবহন খাতে সর্বাধিক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন ব্যবহারকারীরা।

অন্যদিকে বাল্ক জাহাজের মতো সাধারণ জাহাজ বন্দরের সুবিধা কম ব্যবহার করে। বন্দরের হিসাবে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট পণ্যের ৫৯ শতাংশই খালাস হয়েছে বহির্নোঙরে। তাই এ খাতে তুলনামূলক প্রভাব কম পড়বে।

সরকার বলছে, ১৯৮৬ সালের পর এ প্রথম বন্দরের মাশুল সমন্বয় করা হলো। বাড়তি মাশুল কার্যকর হলেও তা এখনো প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম।

এসএম/একিউএফ

Read Entire Article