চতুর্থ দফার দরপত্রও বাতিল, অনিশ্চয়তায় কলাপাড়ার তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র

3 hours ago 7

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় কয়লাভিত্তিক বৃহৎ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহের জন্য চতুর্থ দফায় ডাকা দরপত্রও বাতিল করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর নির্ধারিত সময় পার হলেও বিশেষ সিন্ডিকেটের বাধায় কয়লা আমদানির দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছে না বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেড (আরএনপিএল) কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ উঠেছে, মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ প্রভাবশালীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বিশেষ ব্যক্তির সমঝোতার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বারবার যোগ্য নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও কার্যাদেশ দেওয়া হচ্ছে না সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি কোম্পানিকে। সবশেষ মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) অনেকটা তড়িঘড়ি করে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ওই প্রতিষ্ঠানকে দরপত্র বাতিল করে চিঠি দিয়েছে আরএনপিএল। যদিও এক্ষেত্রে আরএনপিএল পরিচালনা পর্ষদের বোর্ডের কোনো অনুমোদনই নেওয়া হয়নি।

বোর্ড সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আরএনপিএল বোর্ডে উপস্থাপন ও অনুমোদন ছাড়াই দরপত্র বাতিলের এমন সিদ্ধান্ত খুবই রহস্যজনক ও নজিরবিহীন। দরপত্রে কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়নের বিভিন্ন ধাপে অনিয়ম ও ত্রুটি রয়েছে বলে জানিয়েছে এ সংক্রান্ত গঠিত কমিটি। এর আগে তিন দফায় কেন্দ্রটির জন্য দীর্ঘমেয়াদি কয়লার দরপত্র ডেকেও কোনো কোম্পানি চূড়ান্ত করতে পারেনি যৌথভাবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড (আনএনপিএল)।

চতুর্থ দফায় দরপত্র বাতিলের মধ্যদিয়ে বৃহৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন নিয়ে বড় অনিশ্চয়তা এবং সরকার লোকসানের মুখে পড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দরপত্র অনুযায়ী শর্তপূরণ করে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইয়াংথাই এনার্জি পিটিই লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি যোগ্য বিবেচিত হলেও স্থানীয় কোম্পানিগুলোর চাপে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর আগে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে দফায় দফায় শর্ত শিথিল করা হয়েছিল। এরপরও সিন্ডিকেটের পছন্দের কোম্পানি না আসায় শর্ত শিথিলের কথা বলা হচ্ছে। যদিও সবশেষ মূল্যায়ন আর্থিক প্রতিবেদনে ইয়াংথাই এনার্জি প্রস্তাবিত দরকে সাশ্রয়ী বলে গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছিল।

আরএনপিএল সূত্রে জানা গেছে, আরএনপিএলের ১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি রয়েছে। ১৪ বছরের এ ঋণচুক্তির মধ্যে চার বছর গ্রেস পিরিয়ড। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এ ঋণ চুক্তি হয়। চুক্তির শর্তে বলা হয়, প্রকল্প শেষ হওয়ার ছয় মাস পর থেকে ঋণ পরিশোধ শুরু হবে। চলতি বছরের এপ্রিলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পূর্ণ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হলেও ২৫ শতাংশ প্লান্ট ফ্যাক্টরে চলছে।

অভিযোগ উঠেছে, চতুর্থ ধাপের দরপত্রের কার্যক্রম চলাকালীন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম ভূঁইয়া সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানিটির একজন কর্মকর্তাকে বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎখাত সংশ্লিষ্ট একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নম্বর পাঠিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। প্রভাবশালী ওই ব্যক্তি বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের অনিয়ম-দুনীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র কমিটির সদস্য ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বোর্ডের সদস্য বলে গুঞ্জন রয়েছে। পরে ওই ব্যক্তি নিজেই দরদাতা সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাকে মেসেজ পাঠিয়ে আরএনপিএল ইস্যুতে তাদের সঙ্গে আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে আসার কথা জানান। কিন্তু সমঝোতায় না যাওয়ায় গত মঙ্গলবার সিঙ্গারভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটিকে চিঠি দিয়ে দরপত্র প্রক্রিয়া বাতিলের কথা জানিয়ে দিয়েছে আরএনপিএল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমিশনিংয়ের কয়লার দামের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদে কয়লা সরবরাহের প্রস্তাবিত দর বেশি। আরএনপিএলের বোর্ড সভায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের কয়লার দর তুলনা করা হয়। কমিশনিংয়ের কয়লার দরের (আইসিআই-৩ ইনডেক্স অনুসরণকৃত) চেয়ে চতুর্থ দফায় কয়লার প্রস্তাবিত দর (এইচবিএ ইনডেক্স অনুসরণকৃত) তুলনা করে প্রতি টন কয়লার মূল্যে ৮৪ সেন্ট বেশি পাওয়া গেছে বলে ব্যাখ্যা করা হয়।

ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ক্যাপাসিটি চার্জের নামে এমনিতেই বছরের পর বছর আমাদের একটা বড় অঙ্কের অর্থ খরচ হয়ে যাচ্ছে। পটুয়াখালীর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সক্ষমতার দিকে সবচেয়ে এগিয়ে আছে। শুধু কয়লার অভাবে উৎপাদন করতে না পারাটা মানা যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকার এখন অনেক কাজ করছে। আশা করছি, এ কেন্দ্রটি নিয়েও কাজ করবে।

কেন্দ্রটির বাণিজ্যিক উৎপাদন বারবার পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গণমাধ্যমকে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ এটি নিয়ে কাজ করছে। খুব শিগগির এ কেন্দ্র উৎপাদনে আসতে পারবে।

এনএস/এমএএইচ/

Read Entire Article