আগামী রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে দেখা যাবে চলতি বছরের চন্দ্রগ্রহণ। এই দিন পূর্ণচন্দ্রগ্রহণ হবে। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যদি আকাশ মেঘমুক্ত থাকে তাহলে বাংলাদেশ থেকেও এই চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে।
চন্দ্রগ্রহণটি ৭ সেপ্টেম্বর রাত থেকে শুরু হয়ে পরদিন (৮ সেপ্টেম্বর) ভোর পর্যন্ত চলবে। মোট ৭ ঘণ্টা ২৭ মিনিট স্থায়ী হবে এটি। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ৭ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা ২৮ মিনিটে এই চন্দ্রগ্রহণ শুরু হবে।
চন্দ্রগ্রহণ কখন হয়?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, একই রেখায় সূর্য ও চাঁদের ঠিক মধ্যবর্তী স্থানে যখন পৃথিবী আসে, কেবল তখনই চন্দ্রগ্রহণ হয়। এ সময় সূর্য দর্শকের পেছনে অবস্থান করার ফলে চাঁদ পুরোপুরি পৃথিবীর ছায়ায় চলে যায়।
কোরআনের ভাষায় চন্দ্রগ্রহণ
চন্দ্র-সূর্য মহান আল্লাহর অনন্য এক সৃষ্টি। পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তিনি সূর্যকে মাধ্যম বানিয়েছেন। চাঁদের মধ্যেও রেখেছেন মানুষের নানা উপকার। চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই, সূর্য থেকে আলো গ্রহণ করেই পৃথিবীতে সে স্নিগ্ধ আলো ছড়ায়। সেদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনিই সত্তা, যিনি সূর্যকে কিরণোজ্জ্বল ও চাঁদকে স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত করেছেন।’ (সুরা ইউনুস : ৫)
সুরা কিয়ামাতে রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘যখন দৃষ্টি চমকে যাবে, চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে, তখন সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে’ (আয়াত : ৭-৯)। উল্লিখিত আয়াতে ‘চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে পড়া’- এর বাস্তব রূপই হচ্ছে চন্দ্রগ্রহণ।
চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে নবীজির (সা.) নির্দেশনা
অন্ধকার যুগে মানুষ মনে করত, দুনিয়ায় বড় বড় ব্যক্তিত্বের অধিকারী লোকদের জন্য কোনো অঘটন ঘটলে চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ হয়। নবীজির (সা.) ছেলে ইবরাহিম ইবনে মুহাম্মদের মৃত্যুর দিনে সূর্যগ্রহণ হলে সাহাবায়ে কেরাম তা বলাবলি করছিলেন। শুনে রাসুল (সা.) চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে তাদের সুস্পষ্ট বর্ণনা দেন।
তিনি (সা.) বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে, তখন আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, তাঁর মহত্ব ঘোষণা করবে, তাকবির বলবে, নামাজ আদায় করবে এবং সদকা প্রদান করবে।’ (বোখারি : ১০৪০, আবু দাউদ : ১১৭৭)
চন্দ্রগ্রহণের নামাজ
সূর্যগ্রহণের নামাজের মতো চন্দ্রগ্রহণের নামাজও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত । ইসলামের পরিভাষায় এটিকে ‘সালাতুল খুসুফ’ বলা হয়। নবীজি (সা.) এ নামাজ আদায় করেছেন। ‘তাই সালাতুল খুসুফ’ আদায় করা সুন্নাত। (বোখারি : ৯৮৩)
কীভাবে পড়বেন
চন্দ্রগ্রহণের নামাজ একাকী আদায় করাই সুন্নত। সূর্যগ্রহণের নামাজ জামাতে আদায় করার নিয়ম থাকলেও চন্দ্রগ্রহণের ক্ষেত্রে তা সুন্নত নয়। তাই চন্দ্রগ্রহণের সময় নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে সমবেত হওয়ার প্রয়োজন নেই। (বাদায়েউস সানাঈ : ১/২৮২)
কত রাকাত পড়বেন
যারা চন্দ্রগ্রহণ প্রত্যক্ষ করবেন, তারা নিজ নিজ বাসায় ফজরের নামাজের মতোই দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করবেন। ইচ্ছা করলে চার রাকাত বা এর চেয়ে বেশিও পড়া যাবে, তবে প্রত্যেক দুই বা চার রাকাত পরপর সালাম ফেরাতে হবে। অন্যান্য নফল নামাজের মতো এ নামাজেও আজান-একামত নেই। নামাজ শেষে চন্দ্রগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জিকির, দোয়া ও মোনাজাতে মশগুল থাকবে। (বোখারি, আল-মাবসুত, শারহুল বিকায়া)