চরম ক্ষতির মুখে ভারতের পোশাক-চামড়া-রত্নসহ একাধিক খাত

1 month ago 12

রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক দেশটির একাধিক রপ্তানি খাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এই শুল্কে চামড়া, রাসায়নিক, জুতা, রত্ন ও গহনা, পোশাক ও চিংড়ি রপ্তানিকারকরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

বুধবার (৬ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই অতিরিক্ত শুল্ক ঘোষণা করেন, যা আগের ২৫ শতাংশের সঙ্গে মিলিয়ে মোট ৫০ শতাংশ দাঁড়াবে। এই পদক্ষেপকে ভারত কর্তৃক রাশিয়ান তেল কেনা অব্যাহত রাখার জন্য একটি ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশ্লেষক সংস্থা জিটিআরআই জানিয়েছে, ভারতের পণ্যের দাম যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অনেক বেড়ে যাবে, ফলে দেশটিতে ভারতের রপ্তানি ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

নতুন শুল্ক কাঠামো অনুযায়ী ভারতের কিছু খাতে শুল্কহার যা দাঁড়াবে

জৈব রাসায়নিক: ৫৪ শতাংশ, কার্পেট: ৫২.৯ শতাংশ, তৈরি পোশাক: ৬৩.৯ শতাংশ, বোনা পোশাক: ৬০.৩ শতাংশ, বস্ত্র ও সামগ্রী: ৫৯ শতাংশ, হীরা, সোনা ও গহনা: ৫২.১ শতাংশ, যন্ত্রপাতি ও যান্ত্রিক সামগ্রী: ৫১.৩ শতাংশ, আসবাব, বিছানার সামগ্রী ও ম্যাট্রেস: ৫২.৩ শতাংশ।

ঘোষণা অনুযায়ী, আগে আরোপ করা ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে ও এই শুল্কের বাকি অংশ (আরও ২৫ শতাংশ) ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। অর্থাৎ, দুই ধাপে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান আমদানি শুল্কের ওপর বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়াবে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ১৮০ কোটি মার্কিন ডলার, যার মধ্যে ৮ হাজার ৬৫০ কোটি ছিল ভারতের রপ্তানি ও ৪ হাজার ৫৩০ বিলিয়ন ডলার ছিল আমদানি।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে

বস্ত্র ও পোশাক (১ হাজার ৩০ কোটি ডলার), রত্ন ও গহনা (১২০০ কোটি ডলার), চিংড়ি (২ হাজার ২৪০ কোটি ডলার), চামড়া ও জুতা (১ হাজার ১৮০ কোটি ডলার), রাসায়নিক (২ হাজার ৩৪০ কোটি ডলার), বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক যন্ত্রপাতি (৯০০ কোটি ডলার)।

কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি (সিআইটিআই) বলেছে, ৫০ শতাংশ কার্যকর শুল্ক ভারতের টেক্সটাইল ও পোশাক রপ্তানির জন্য একটি ‘গভীর উদ্বেগের বিষয়’। যুক্তরাষ্ট্র এই খাতের সবচেয়ে বড় বাজার হওয়ায় এতে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

প্রতিষ্ঠানটি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, এই কঠিন সময়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে রপ্তানিখাতকে সহায়তা করতে।

কলকাতাভিত্তিক সিফুড রপ্তানিকারক মেগা মোডার ব্যবস্থাপনা পরিচালক যোগেশ গুপ্ত বলেন, ভারতের চিংড়ির দাম এখন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বেড়ে যাবে। আমরা এমনিতেই ইকুয়েডরের সঙ্গে ব্যাপক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছি। সেখানে শুল্ক মাত্র ১৫ শতাংশ। ভারতীয় চিংড়িতে আগেই ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ অ্যান্টি-ডাম্পিং ও ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ কাউন্টারভেলিং ডিউটি ছিল। নতুন শুল্কে এটি ৩৩ দশমিক ২৬ শতাংশে দাঁড়াবে।

 

কামা জুয়েলারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কলিন শাহ বলেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ভারতের রপ্তানির জন্য বড় ধরনের আঘাত। ভারতের যুক্তরাষ্ট্রমুখী রপ্তানির প্রায় ৫৫ শতাংশ সরাসরি এই শুল্কের আওতায় পড়বে। ৫০ শতাংশ শুল্কের ফলে ভারতীয় পণ্যগুলোর খরচ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাবে, যা প্রতিযোগীদের তুলনায় ৩০-৩৫ শতাংশ পিছিয়ে দেবে।

তিনি আরও জানান, অনেক বিদেশি ক্রেতা এরই মধ্যে অর্ডার স্থগিত করেছেন। অনেক ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান এই খরচ সামলাতে পারবে না। এমনকি, অনেকে তাদের দীর্ঘদিনের ক্রেতাও হারাতে পারে।

কানপুরভিত্তিক গ্রোমোর ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যাদবেন্দ্র সিং সচান বলেন, রপ্তানিকারকদের নতুন বাজার খুঁজতে হবে যাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বজায় থাকে।

রপ্তানিকারকরা আশা করছেন, ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত চূড়ান্ত হলে এই সংকটের মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

সূত্র জানিয়েছে, এখনো চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে এবং কৃষিপণ্য, দুগ্ধজাত পণ্য ও জিএম পণ্যের শুল্ক বিষয়ে ভারতের ‘রেড লাইন’ নিয়ে কোনো আপস হবে না। দুই দেশ বর্তমানে একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। এই চুক্তির প্রথম ধাপ আগামী শরতে (অক্টোবর-নভেম্বর) চূড়ান্ত করার লক্ষ্য রয়েছে।

সূত্র: এনডিটিভি 

এসএএইচ

Read Entire Article