চাঁদাবাজির ঘটনায় আলোচিত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ

3 weeks ago 15

চাঁদাবাজির ঘটনায় আলোচিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বাংলা বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল ইয়ামিম আফ্রিদির বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ খান শুভ্র।

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চান এই সাংবাদিক নেতা।

অভিযোগ পত্রে মাহফুজ খান বলেন, গত ১৪ আগস্ট আল ইয়ামিম আফ্রিদি আমার নামে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ করেন। সেখানে তার বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগ করে চাঁদাবাজির অভিযোগ মধ্যস্থতা ও সাক্ষীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন নিয়ে কথোপকোথন প্রকাশ করায় সম্মানহানির অভিযোগ করেন। তার আনিত অভিযোগের ভিত্তিতে ১৯ আগস্ট প্রক্টর কার্যালয়ে অভিযোগকারী ও অভিযুক্তকে ডাকা হলে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক ও আফ্রিদির পক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এসময় আফ্রিদি কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পেরে দলবল নিয়ে প্রক্টর কার্যালয় থেকে পালিয়ে যায়। তার আনিত অভিযোগের কোনো প্রমাণ দিতে না পারা আমার সম্মানহানির চেষ্টার উদাহরণ।

অবিযোগ পত্রে তিনি আরও বলেন, ‘আমি দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই, তার (আফ্রিদি) আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সে আমার সামাজিক মর্যাদায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এ ধরনের বানোয়াট অভিযোগ এনেছে। আমি আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের প্রমাণ চাই। সে যদি প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয় তবে আমার বিরুদ্ধে মানহানির চেষ্টার দায়ে তদন্তপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনানুসারে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাই।’

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মাহফুজ খান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আল ইয়ামিম আফ্রিদি মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রক্টর কার্যালয়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টর কার্যালয়ে আমাদের দুই পক্ষকেই (অভিযোগকারী ও অভিযুক্তকে) ডাকা হয়। সেখানে আমি উপস্থিত হয়ে তার অভিযোগের তথ্য-প্রমাণ চাইলে, সে একটি পূর্ণ রেকর্ড বিকৃত করে উপস্থাপন করে। কিন্তু আমি যখন অরিজিনাল রেকর্ডটি প্রদর্শন করি, তখন সে নানা অজুহাতে সেটি বুঝতে না পারার কথা জানায়। এরপর বাকি প্রমাণাদি প্রদর্শন করতে না পেরে প্রক্টর কার্যালয়েই সবার সামনে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ শুরু করে।’

আরও পড়ুন:

তিনি আরোও বলেন, ‘একপর্যায়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়ে দলবল নিয়ে প্রক্টর কার্যালয় থেকে পালিয়ে যায়। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, আমার বিরুদ্ধে তার দেওয়া অভিযোগগুলো মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ অবস্থায় আমি তার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছি। কারণ সে আমার মানহানির চেষ্টা করেছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমি প্রক্টর কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছি যেন, আমার মানহানি ও এর মাধ্যমে সামাজিক, মানসিক ও অ্যাকাডেমিক ক্ষতির যে চেষ্টা করা হয়েছে তার যথাযথ বিচার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে করা হয়।’

এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ইয়ামিম আল আফ্রিদি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রক্টর অফিসে আমার বিরুদ্ধে মব সৃষ্টি করা হয়েছিল। প্রশাসন আমার নিরাপত্তা দিতে না পারায় আমি মিটিং থেকে চলে এসেছি। তবে মাহফুজ শুভ্র আমার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ দিয়েছে তা জানি না। অভিযোগ পত্র দেখে বলতে পারবো।’

উপস্থিত থাকা চবি ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, ‘গত ১৯ তারিখ আমি একটি প্রয়োজনে প্রক্টর অফিসে যাই। সেখানে থাকা অবস্থায় দেখি আফ্রিদির অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুই পক্ষকে প্রক্টর অফিসে ডাকা হয়। সেখানে পুরো সময় আমি ছিলাম৷ প্রথমে আফ্রিদি একটি অডিও শোনায় যা অনেকটা অস্পষ্ট ছিল ৷ পরবর্তীতে অভিযুক্ত মাহফুজ শুভ্র তার বিষয়ে আনা অভিযোগের প্রমাণ চাইলে প্রক্টর স্যারের কথোপকথনের এক পর্যায়ে আফ্রিদি তার সঙ্গে আসা লেকজন নিয়ে বের হয়ে চলে যায়। সেখানে কোনো ধরনের মব তৈরি হয়নি৷’

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, ‘আফ্রিদি যে কথাগুলো বলছে সম্পূর্ণ অসত্য, বানোয়াট, ভিত্তিহীন। কোনোপ্রকার মব সৃষ্টি তো দূরে থাক সেদিন সেখানে তাকে যথেষ্ট সময় ও সুযোগ দেওয়া হয়েছিল অভিযোগ ব্যাখ্যা করার। কিন্তু সে তা না করে প্রক্টরিয়াল বডির সামনে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছে। সে এরকম ঘটনা প্রশাসনের সঙ্গে আগেও ঘটিয়েছে।

গত ২৪ জুলাই সাবিনা ইয়াসমিন নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রী প্রক্টর বরাবর ছাত্রদল নেতা আহসান হাবীবের বিরুদ্ধে চেক আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ দেন। যেখানে তিনি জড়িত ছাত্রদল নেতা আহসান হাবীবের বিরুদ্ধে তার তিন লাখ টাকার চেক আটকে রেখে চাঁদা দাবি করার কথা উল্লেখ করেন। অভিযোগ দেওয়ার পর ওই রাতেই আল ইয়ামিন আফ্রিদির মাধ্যমে ওই অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন সাবিনা। অভিযুক্ত আফ্রিদি ছাত্রদলের রাজনীতির পাশাপাশি একটি দৈনিকের বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন। শাখা ছাত্রদল সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিনের গ্রুপের রাজনীতি করেন তিনি। নিয়োগের জন্য টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার নারীর সঙ্গে আফ্রিদির কথপোকথনের কল রেকর্ড প্রকাশ পেয়েছে।

আফ্রিদি তার কথোপকথন কল রেকর্ড ফাঁস করার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ শুভ্রের বিরুদ্ধে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ।

সোহেল রানা/এমএন/এমএস

Read Entire Article