ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে গণহারে পদত্যাগে বাধ্য করা ২৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন, ভাতাসহ ও চাকুরির সুবিধা সংক্রান্ত করা আবেদন এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাণিজ্য সচিব ও নবনিযুক্ত প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার (৬ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফ’র সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. আরিফুজ্জামান খান।
গত ৬ অক্টোবর ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ পদে (জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতিসহ) চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন করেন। সেই সঙ্গে চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রাপ্য সুবিধা দাবি করেন তারা।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এফবিসিসিআইয়ের চাকরিচ্যুত ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরিতে পুনর্বহালের দাবির বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন-১ বিভাগ। গত ২৭ অক্টোবর এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক ও অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমানকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, ২০১৯-২১ মেয়াদকালে এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শেখ ফজলে ফাহিম ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় ৬২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করেন। পরবর্তীকালে অনেককে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হলেও ২৬ জনকে এখনো পুনর্বহাল করা হয়নি।
রিটকারীদের অভিযোগ ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময়ে উল্লেখিত ২৬ জনকে কোনো প্রকার সার্ভিস বেনিফট ছাড়াই এফবিসিসিআইয়ের চাকরি থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। সম্পূর্ণ দলীয়করণের মাধ্যমে তৎকালীন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম (যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও শেখ সেলিমের ছেলে) তাদের চাকুরিচ্যুত করেন। পরবর্তী সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং মাহবুবুল আলমও তাদের পুর্নবহালের কোনো উদ্যোগ নেননি।
এমনকি প্রতিষ্ঠানের চাকরিবিধি ১৯৯০ অনুযায়ী, প্রাপ্য সুবিধাদি থেকেও সেই ২৬ জনকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই সুবিধার মাত্র ২৫ শতাংশ কয়েকজনকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তাদের আইনি সুরক্ষা নেওয়া থেকে বিরত রাখতে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ২০২২ সালে মতিঝিল থানায় জিডি করতে বাধ্য হন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বর্তমান বাণিজ্য সংগঠন আইন-২০২২ অনুযায়ী মহাপরিচালককে (প্রাক্তন পরিচালক) বাণিজ্য সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রক হিসেবে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই আইনের ১৫ (২) ধারা অনুযায়ী ‘বাণিজ্য সংগঠনের কার্যাবলি মহা-পরিচালকের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকিবে এবং সময়-সময়ে মহা-পরিচালক কর্তৃক বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে উক্ত বাণিজ্য সংগঠনের কার্যাবলি পরিচালিত হইবে’। এছাড়া ১৫ (৩) (ঠ) অনুযায়ী, মহাপরিচালক বাণিজ্য সংগঠনের বিদ্যমান সমস্যা বা দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ নিতে পারবেন।
চিঠিতে বলা হয়, আবেদনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৯৯০ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদে এফবিসিসিআইয়ের অনুমোদিত চাকরিবিধি অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়। করোনার সময় তাদের জোর করে গণপদত্যাগে বাধ্য করা সম্পূর্ণ অন্যায়, অনৈতিক ও আইনের পরিপন্থি। এ গণপদত্যাগের পর এফবিসিসিআইয়ের সাবেক তিন (২০২০ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত) প্রেসিডেন্টের কার্যকালে তাদের কোনোভাবেই এফবিসিসিআই ভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
আরও বলা হয়, চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মহাপরিচালক (তৎকালীন পরিচালক) ও বাণিজ্য সংগঠনগুলো বরাবর আবেদন করেছেন। এই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২০২১ সালের ১২ জুন এফবিসিসিআই সভাপতি বরাবর চাকরিতে পুনর্বহাল ও সব বকেয়া পাওনা পরিশোধের আবেদন করেন। এর অনুলিপি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মহাপরিচালককে (তৎকালীন পরিচালক) দেওয়া হয়েছে।
পরবর্তীকালে ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এবং ২০২২ সালের ৬ মার্চ আইনজীবীর মাধ্যমে এফবিসিসিআই কর্তৃপক্ষকে ডিমান্ড নোটিশ দেওয়া হয়। তারপরও তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল ও চাকরিজনিত সুবিধাসহ বেতন-ভাতা পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কমিটির নেতারা পালিয়ে যায় বলে শোনা গেছে। এরপর সরকার এফবিসিসিআইয়ে কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ করেন। আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা তার কাছে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন, কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।
এ পরিস্থিতিতে ৫ অক্টোবর রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয় ঘেরাও করেন এই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপর তাদের বেতন-ভাতা ও চাকরিতে পুর্নবহালের নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন সাবেক যুগ্ম মহাসচিব (আইন) মো. রফিকুল ইসলাম, উপ-মহাসচিব (আন্তর্জাতিক) শাহ মাকসুদুল হক ও সিনিয়র সহকারী বেনজিন আরা বেগমসহ ২৬ জন কর্মকর্তা কর্মচারী।
এফএইচ/এমকেআর/এএসএম