চাকসু নির্বাচনে প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারের অব্যহতি চেয়েছে ছাত্রদল

2 weeks ago 17
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে চাকসু নির্বাচনের কার্যক্রম থেকে তাদের অব্যাহতি চেয়ে প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছে শাখা ছাত্রদল। তবে চাকসু নির্বাচন কমিশনের কমিটি বা নির্বাচনী কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত নন বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম। বিষয়টি তার মানহানি করেছে এবং এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।  সোমবার (২৫ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বরাবর স্মারকলিপি দেয় চবি ছাত্রদল। শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলউদ্দিন মহসীন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি ছিল চাকসু নির্বাচন, যা নানা কারণে বিগত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চাকসু নির্বাচনের প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখন পর্যন্ত প্রশাসন কালক্ষেপণ করে তফসিল ঘোষণা করতে পারেনি, যা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। এ ছাড়া সম্প্রতি প্রকাশিত চাকসুর গঠনতন্ত্রে কিছু অসঙ্গতি, অস্পষ্টতা, এমফিল-পিএইচডির সংযুক্তি এবং নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক ধারা অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের মতামত উপেক্ষা করে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের অধিকার ও গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থি।  এতে আরও বলা হয়, একটি কার্যকর চাকসু গঠনের স্বার্থে সকল অংশীজন ও শিক্ষার্থীদের মতামত অনুযায়ী নির্বাচনের প্রার্থিতার ক্ষেত্রে কেবল স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদেরই রাখতে হবে। বয়সসীমা ৩০ বছর প্রত্যাহার করে এমফিল-পিএইচডি শিক্ষার্থীদের প্রার্থিতার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে দপ্তর সম্পাদক ও সহদপ্তর সম্পাদক পদ নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারের কর্মকাণ্ডে দলীয় পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। বর্তমান চবি প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রক্টর একটি ছাত্র সংগঠনকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে অন্যদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছেন। ছাত্র প্রতিনিধির নামে নিজের আশীর্বাদপুষ্ট ছাত্র সংগঠনের নেতাদের বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব দিয়েছেন। তাছাড়া নানা সময়ে তিনি ওই ছাত্র সংগঠনের মুখপাত্রের মতো আচরণ করেছেন। গত কয়েক মাসে তিনি তার পছন্দের ছাত্র সংগঠনের হয়ে নানা স্থানে ক্যাম্পেইন চালিয়েছেন। এতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারও তার কর্মকাণ্ডে দলীয় পক্ষপাতমূলক আচরণ ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রক্টর মহোদয়ের নারীবিদ্বেষী মনোভাব, বিতর্কিত ভূমিকা এবং প্রকাশ্য দলবাজি একটি সুষ্ঠু চাকসু নির্বাচনের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই চবি ছাত্রদল মনে করে, শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও আস্থা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ চাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারকে নির্বাচনী কার্যক্রমের সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে চবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান কালবেলাকে বলেন, আমরা পক্ষপাতমূলক কোনো প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন করব না। প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার একটি বিশেষ গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করছেন। বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্পেইন করেছেন। তবে রেজিস্ট্রারের অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।  তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি রেজিস্ট্রার তার অফিসে শিবিরের ছেলেদের নিয়ে আড্ডা দেন। এমনকি ক্যাম্পাসে বিভিন্ন জরুরি মিটিং করেন।  এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হায়দার আরিফের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।  রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি চাকসু নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বা কোনো কার্যক্রমের সঙ্গেই যুক্ত নই। তাহলে কীভাবে তারা আমার অব্যাহতি চায়। চাকসু নিয়ে তাদের ন্যূনতম ধারণাও নেই। ছাত্রদল মিথ্যা, ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়েছে। এতে করে আমার সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমি এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।  এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন বলেন, ছাত্রদল স্মারকলিপি দিয়েছে। আমরা আরেকটি মিটিং করে সিদ্ধান্ত জানাব। বয়সসীমা ও দপ্তর সম্পাদকের বিষয়টি আমরা আলোচনা করব। তবে এমফিল ও পিএইচডির বহাল থাকবে।    
Read Entire Article