চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদে ২৭ হাজার ৬৩৪ ভোটারের বিপরীতে নির্বাচনে অংশ নিতে ১ হাজার ১৬২ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করলেও জমা দিয়েছেন ৯৩১ প্রার্থী। সে হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না ২৩১ শিক্ষার্থী। অন্যদিকে নির্বাচনের তফসিলে সামান্য পরিবর্তন করেছে কমিশন।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাকসু নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক একেএম আরিফুল হক সিদ্দিকী।
নির্বাচন কমিশনের সূত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সংসদে অংশ নিতে ৫২৯ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করলেও জমা দিয়েছেন ৪২৯ প্রার্থী। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫টি হলের মধ্যে ছেলেদের ১০টি ও মেয়েদের ৫টি হল থেকে ৬৩৫টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে জমা পড়েছে ৫০২টি। যার মধ্যে ছেলেদের হল থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন ৪৫৫ জন কিন্তু জমা দিয়েছেন ৩৫৬ এবং মেয়েদের হল থেকে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ১৫৪ জন, তবে জমা দিয়েছেন ১২৫ জন। এছাড়া শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ২৬ জনের মধ্যে ফরম জমা দিয়েছেন ২১ জন।
ছেলেদের হলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন সোহরাওয়ার্দী হলের প্রার্থীরা। হলটি থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে ৫৩ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। অন্যদিকে সবচেয়ে কম প্রার্থী শহীদ আব্দুর রব হলে। হলটি থেকে মনোনয়ন জমা পড়েছে ৩১ জনের। এছাড়া এএফ রহমান হল থেকে ৩৮, আলাওল হল থেকে ৩৩, শাহ আমানত থেকে ৪৩, শহীদ আব্দুর রব হল থেকে ৩১, শহীদ ফরহাদ হোসেন হল থেকে ৪৭, শাহজালাল হল থেকে ৩৬, মাস্টারদা সূর্যসেন হল থেকে ৩৭ এবং অতীশ দীপঙ্কর হল থেকে ৩৮ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
এছাড়া মেয়েদের হলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী বেগম খালেদা জিয়া হলে৷ হলটি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ফরম জমা দিয়েছেন ৩১ জন। সবচেয়ে কম ১৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বী নবাব ফয়জুন্নেছা হলে। এছাড়া বিজয় ২৪ হল থেকে ২৯, প্রীতিলতা ২৬ এবং শামসুন্নাহার হল থেকে ২২ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
ভিপি, জিএসসহ অন্যান্য পদে প্রার্থী সংখ্যা
কেন্দ্রীয় সংসদে অংশ নিতে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ২৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ২২ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ২২ জন, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক ১২ জন, সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক ১৫ জন, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক ১৮ জন, সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক ১৬ জন, দপ্তর সম্পাদক ১৮ জন, সহ-দপ্তর সম্পাদক ১৪ জন।
এছাড়া ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক (নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত) ১২ জন, সহ-ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক (নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত) ১১ জন, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ১১ জন, গবেষণা ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ১৩ জন, সমাজসেবা ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ২০ জন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ১৭ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক ১৭ জন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ১৬ জন, যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক ২০ জন সহ-যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক ১৪ জন, আইন ও মানবাধিকার ১১ জন, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক ২১ জন এবং নির্বাহী সদস্য ৫টি পদের বিপরীতে ৮৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
তপশিল আংশিক পরিবর্তন
এদিকে তপশিলে আংশিক পরিবর্তন করেছে নির্বাচন কমিশন। পূর্বের তপশিল অনুযায়ী যাচাই-বাছাই হওয়ার কথা ছিল ১৮ সেপ্টেম্বর। প্রাথমিক তালিকা প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল ২১ সেপ্টেম্বর। কিন্তু নতুন তপশিলে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২১ সেপ্টেম্বর। প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ ২২ সেপ্টেম্বর। তবে পূর্বঘোষিত অন্য তারিখ অপরিবর্তিত থাকছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ২৩ সেপ্টেম্বর। প্রার্থীদের বিষয়ে আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তির শেষ তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর এবং প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর।
চাকসু ও হল সংসদ আচরণবিধি অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমার সময় কোনো মিছিল-শোভাযাত্রা করা যাবে না এবং পাঁচজনের বেশি সমর্থক নেওয়া যাবে না।
মনোনয়নপত্র বিতরণ ও ডোপ টেস্ট থেকে আয়
চাকসু হল ও হোস্টেল সংসদ মিলিয়ে এবারের নির্বাচনে মোট ১ হাজার ১৬২ প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ৫২৮ জন এবং হল সংসদে ৬৩৪ জন। প্রার্থীদের কাছ থেকে কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য ৩০০ টাকা এবং হল সংসদের জন্য ২০০ টাকা হারে ফি নেওয়া হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় সংসদ থেকে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪০০ টাকা এবং হল সংসদ থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার ৮০০ টাকা মিলিয়ে সর্বমোট আয় হয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার ২০০ টাকা।
এছাড়া প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ডোপ টেস্টের জন্য প্রতিজনকে ৩৫০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। ১ হাজার ১৬২ প্রার্থী মনোনয়ন ফরম নিলেও জমা দিয়েছেন ৯৩১ জন। সে অনুযায়ী ডোপ টেস্ট থেকে আয় হবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮৫০ টাকা। সব মিলিয়ে মনোনয়ন ফি ও ডোপ টেস্ট থেকে প্রশাসনের আয় দাঁড়াচ্ছে ৬ লাখ ১১ হাজার ৫০ টাকা।