চাপে ফেলতে চাইছেন ট্রাম্প, মাথা নোয়াবে না ইরান
হোয়াইট হাউসের মসনদে বসতে আরও দুই মাস বাকি। তবে এরই মধ্যে নিজের মন্ত্রিসভা গোছানো শুরু করেছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মন্ত্রিসভায় ইসরায়েলপন্থিদের আধিক্য দেখে হতাশও হচ্ছেন অনেকে। সামনে দিনগুলোতে ইরানের ভাগ্যে কী ঘটবে, তা নিয়েও শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। অবশ্য ইরান নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনার কিছু কিছু সামনে আসতে শুরু করেছে।
ট্রাম্প আগেরবার প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তলানি গিয়ে ঠেকে। ইরানের সঙ্গে ছয় জাতির করা একটি পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফা বের করে আনেন ট্রাম্প। এছাড়া ক্ষমতার পুরোটা সময়, নানা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে, ইরানকে হয়রান করে রেখেছিলেন তিনি। এমনকি ট্রাম্পের নির্দেশেই ইরানের গুরুত্বপূর্ণ একজন সামরিক কমান্ডার কাশেম সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়।
এখন ইরানকে দুর্বল করতে আবারও সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি বেছে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানের অর্থনীতির কোমর ভেঙে দেওয়া হবে। তাতে করে, নিজের প্রক্সিদের আর যেমন সাহায্য করতে পারবে না ইরান, আবার পরমাণু কর্মসূচিও এগিয়ে নিতে পারবে। দ্য ফাইনান্সিয়াল টাইমসের বরাতে এমন খবর প্রকাশ করেছে জেরুজালেম পোস্ট।
ট্রাম্পের অন্তর্বর্তী টিমের সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে নতুন প্রশাসনের। বিশেষ করে, দেশটির তেল রপ্তানি খাতকেই টার্গেট করবে ট্রাম্প। এতে করে ইরানের তেল রপ্তানি নাটকীয়ভাবে কমে যেতে পারে। বর্তমানে প্রতিদিন ১৫ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করে ইরান, যা চার বছর আগেও ছিল মাত্র ৪ লাখ ব্যারেল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে খুব বিপদে পড়বে ইরানের অথর্নীতি। জ্বালানি পরামর্শক এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টদের সাবেক একজন উপদেষ্টা বব ম্যাকনেলির ভাষায়, এমন নিষেধাজ্ঞায় ইরানের অর্থনীতি ট্রাম্পের প্রথম দফার শাসনামলের চেয়ে খারাপ অবস্থায় গিয়ে পড়বে। মূলত পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুতে ইরানকে আলোচনার টেবিলে আনতেই এমন কৌশল বেছে নিতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন।
তবে এমন কৌশল কতখানি কাজে দেবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। চাপে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত ইরান না-ও মানতে পারে। ইরানি কর্মকর্তারা এরইমধ্যে চাপে পড়ে আলোচনায় বসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। গেল সপ্তাহে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের এই নীতি ট্রাম্পের আগের দফায় ব্যর্থ হয়েছিল। এবারও তাই হবে।
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দেননি। কিন্তু আলোচনা হতে হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে। ট্রাম্প ক্ষমতার চেয়ারে বসেই চীন ও ইরানের ওপর চাপ প্রয়োগ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে মাইক ওয়াল্টজকে বেছে নেওয়াই তার ইঙ্গিত। সেক্ষেত্রে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।