চায়না ক্লে পাউডারের আড়ালে ভায়াগ্রার কাঁচামাল আমদানি

8 hours ago 2

আমদানির ঘোষণা ছিল চায়না ক্লে পাউডার (রাবার গ্রেড) বা কাওলিন ক্লে। তবে চায়না ক্লে পাউডারের আড়ালে আমদানি করা হয়েছে ভায়াগ্রার কাঁচামাল। এ ঘটনায় চায়না ক্লের শুল্ককর পরিশোধ সাপেক্ষে বাজেয়াপ্ত করার পরিবর্তে এক লাখ টাকা বিমোচন জরিমানা ও দুই কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যক্তিগত জরিমানা করেছে রংপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট।

গত ১৪ অক্টোবর এই আদেশ দেয় রংপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। যেখানে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জরিমানার পাশাপাশি চালানটি (ওষুধের কাঁচামাল) রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে ফোনে জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রংপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ।

সূত্রমতে, গত ১ আগস্ট চায়না ক্লে পাউডার (রাবার গ্রেড) বা কাওলিন ক্লে ঘোষণায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে একটি পণ্য চালান আমদানি করে ঢাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান উজালা পেইন্ট ট্রেডিং কোং। এক হাজার ১১৪ বস্তায় ভারত থেকে ঘোষণা অনুযায়ী চায়না ক্লে আমদানি করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু চায়না ক্লের মধ্যে বিশেষ কায়দায় আমদানি করা হয়েছে ঘোষণাবহির্ভূত প্রায় ১৬ হাজার কেজি ওষুধের কাঁচামাল। ৩৭ ধরনের ওষুধের এই কাঁচামালের মধ্যে আমদানি হয়েছে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর আমদানি নিয়ন্ত্রিত পাঁচ হাজার ৮০৫ কেজি সিলডেনাফিল সাইট্রেট, যা ভায়াগ্রা নামে পরিচিত।

৭ আগস্ট সিঅ্যান্ডএফ বাবুল এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য আমদানি হয়েছে এমন তথ্য থাকায় হিলি স্থল কাস্টমস স্টেশনের কর্মকর্তারা চালানটি আটক করেন। পরে কায়িক পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায়, চালানটিতে এক হাজার ১১৪ বস্তায় ৩০ হাজার ২৪৫ কেজি পণ্য রয়েছে। প্রতিটি বস্তার গায়ে ‘চায়না ক্লে পাউডার (রাবার গ্রেড)’ লেখা রয়েছে। পরে বস্তাগুলো খোলা হলে চায়না ক্লে’র ভেতরে একাধিক ছোট ছোট প্যাকেট পাওয়া যায়। তবে যেসব বস্তার মধ্যে প্যাকেট পাওয়া যায়, সেসব বস্তার ওপরে বিভিন্ন রকম সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। আবার এসব বস্তার মধ্যে একই রং ও বর্ণের পণ্য পাওয়া গেছে, যা চায়না ক্লে নয়।

পরে ৭৩টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) পাঠান কাস্টমস কর্মকর্তারা। গত ২৬ আগস্ট কুয়েট থেকে পাঠানো রিপোর্টে সত্যতা প্রমাণিত হয়। এরপর গত ১৪ অক্টোবর বিচারাদেশ দেয় রংপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট।

সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ বলেন, ‘ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য আমদানি করায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দুই কোটি ৯৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চালানটি (ওষুধের কাঁচামাল) রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়।’

ভায়াগ্রা এক ধরনের মাদক। এই বিপুল পরিমাণ ভায়াগ্রা দেশে প্রবেশ করলে তা দিয়ে বিপুল পরিমাণ জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর যৌন উত্তেজক ওষুধ তৈরি হতো বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্রমতে, ওষুধের কাঁচামাল আমদানি নীতি আদেশ, ২০২১-২০২৪ অনুযায়ী ব্লক লিস্ট পণ্য, যা আমদানি করতে হলে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু অনুমতি ব্যতীত ওষুধের কাঁচামাল এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর সিলডেনাফিল সাইট্রেট বা ভায়াগ্রা আমদানি করেছেন আমদানিকারক। আমদানিকারকের ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য চালানের প্রযোজ্য শুল্ককর এক কোটি ৭৬ লাখ ৩২৫ টাকা। তবে সঠিক এইচএস কোড অনুযায়ী আমদানি করা পণ্যের প্রযোজ্য শুল্ককর এক কোটি ৪৯ লাখ ৭ হাজার ৯৭৩ টাকা। অসত্য ঘোষণায় প্রতিষ্ঠানটি এক কোটি ৪৭ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৭ টাকা শুল্ককর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, ঘোষণাবহির্ভূত এবং অনুমতি ব্যতীত ওষুধের কাঁচামাল, জনস্বাস্থ্যের জন্য ভায়াগ্রা আমদানি করায় প্রতিষ্ঠানটিকে গত ২১ সেপ্টেম্বর কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি ৬ অক্টোবর নোটিশের জবাব দেয়। যাতে ভারতের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তাদের গুদাম থেকে ভুলে ওষুধের কাঁচামাল চায়না ক্লের মধ্যে দিয়েছে বলে দাবি করা হয় এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নিজ ইচ্ছায় সরবরাহ করেনি বলে জানায়। তবে ওষুধের কাঁচামাল ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ভায়াগ্রা আমদানিতে আমদানিকারক কোনোভাবে দায় এড়াতে পারে না বলে তাদের বিরুদ্ধে বিচারাদেশ দেয় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট।

প্রসঙ্গত, সিলডেনাফিল সাইট্রেট হচ্ছে ভায়াগ্রার সক্রিয় উপাদান। যা সাধারণত ২৫ মিলি গ্রাম, ৫০ মিলি গ্রাম ও ১০০ মিলি গ্রাম ডোজে ট্যাবলেট আকারে বিক্রি হয়। সেই হিসেবে এককেজি সমান এক হাজার গ্রাম। এক হাজার গ্রাম সমান ১০ লাখ মিলি গ্রাম। ২৫ মিলি গ্রাম ট্যাবলেট হলে এককেজি ভায়াগ্রা দিয়ে ৪০ হাজার ভায়াগ্রা বানানো সম্ভব।

একইভাবে এককেজি ভায়াগ্রা দিয়ে ৫০ গ্রামের ২০ হাজার ও ১০০ গ্রামের ১০ হাজার ট্যাবলেট বানানো সম্ভব। হিসেব অনুযায়ী, পাঁচ হাজার ৮০৫ গ্রাম ভায়াগ্রা দিয়ে ২৫ মিলি গ্রামের ২৩ কোটি ২২ লাখ ট্যাবলেট বানানো সম্ভব। একইভাবে ৫০ মিলি গ্রামের ১১ কোটি ৬১ হাজার ও ১০০ মিলি গ্রামের পাঁচ কোটি ৮০ লাখ ট্যাবলেট বানানো সম্ভব।

জিতু কবীর/এসআর/এএসএম

Read Entire Article