রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টে স্লেজিং করাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামে মার্কেটিং ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনার সূত্রপাত হয়।
পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পরে রাত ৯টার দিকে জরুরি এক সভা ডেকে চলতি আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়া আগামীকাল দুই বিভাগের ক্লাস পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ ৩৩ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ২৫ জন বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার এবং ৮ জন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
রাবি মেডিকেল সেন্টারের প্রধান চিকিৎসক মাফরূহা সিদ্দিকা লিপি ও রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শংকর কুমার বিশ্বাস কালবেলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের রাউন্ড-১৬ এ মার্কেটিং বিভাগ ও আইন বিভাগের খেলা হয়। এতে মার্কেটিং বিভাগ ১-০ গোলে জয়ী হয়৷ খেলা চলাকালে উভয়পক্ষের দর্শক স্টেডিয়ামে অবস্থান করছিলেন। গোল হওয়ার একপর্যায়ে উভয়পক্ষ একে অপরকে ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিলে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। খেলা শেষে স্টেডিয়াম গেটে আইন ও মার্কেটিং বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী তর্কে জড়ায়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
এ সময় আইন বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুর রহমান মাথায় ইটের আঘাত পেয়ে আহত হন। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল বের করেন। এ সময় মিছিলের ভিডিও ধারণ করতে গেলে বণিক বার্তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আবু সালেহকে মারধর করে মুঠোফোনের ভিডিও ডিলিট করতে বাধ্য করেন।
এই ঘটনার পর বিভাগ দুটির শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটাসহ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের প্রধান ফটকে মার্কেটিং বিভাগ ও পেছনের গেটে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। দীর্ঘক্ষণ দুই পক্ষের উত্তেজনার পর রাত ৮টার দিকে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা আইন বিভাগে ভাঙচুর চালায়। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের প্রধান চিকিৎসক মাফরূহা সিদ্দিকা লিপি বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের এখানে ২৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে কারও অবস্থা তেমন গুরুতর নয়।
আগামীকাল দুই বিভাগের ক্লাস পরীক্ষার বিষয়ে জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, মঙ্গলবার দুই বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামীকাল আলাদা করে দুই বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, আমি রাজশাহীর বাইরে আছি। তবে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটা নিয়ে আলোচনা করছে। যথাসময়ে পুলিশকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা প্রয়োজনের থেকে একটু দেরিতে এসেছে। সময়মতো আসলে হয়তো এমন পরিস্থিতি নাও হতে পারতো। তবে এখন পুলিশ এবং সেনাবাহিনী ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, একটা খেলাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দুঃখজনক। উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ ছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ফুটবল টুর্নামেন্ট আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করছি।