বাজারে এক কেজি মোটা চাল কিনতে লাগছে সর্বনিম্ন ৬৫ টাকা। আটাও ৫৫ টাকার নিচে নেই। সেখানে ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস)-এর আওতায় সরকার ৩০ টাকা দরে চাল ও সাড়ে ২৭ টাকা দরে আটা বিক্রি করছে। যে কারণে সবখানে ওএমএসের ট্রাক সেল থেকে স্বল্পমূল্যে পণ্য কিনতে দীর্ঘ লাইন নিম্নআয়ের মানুষের।
রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ১৯১টি বিক্রয়কেন্দ্রে এ ওএমএস কার্যক্রম চলছে। সরেজমিনে কয়েকটি ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বিক্রয়কেন্দ্রে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম থাকায় পণ্য না পেয়ে খালি হাতেও ফিরতে হচ্ছে অনেককে।
সবখানে দেখা গেলো, মানুষের হুড়াহুড়িতে ট্রাক বা বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে এসে কোনো লাইন কিংবা শৃঙ্খলা থাকছে না। সবাই নিজেদের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি বিক্রেতার দিকে বাড়িয়ে দিচ্ছেন। সবার উদ্দেশ্য আগে পণ্য কেনা। দীর্ঘ সময় লাইনে আগে নেওয়ার তাড়ায় নারী-পুরুষের মাঝে হট্টগোলও বেধ যাচ্ছে। নারীদের লাইনে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে বেশি।
তবে যারা পণ্য নিচ্ছেন তাদের কথায়, বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কারণে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। বাধ্য হয়েই ওএমএসের চাল ও আটা নিচ্ছেন।
অনেকে জানিয়েছেন, গত রোববার ও সোমবার দুই দিন লাইনে দাঁড়িয়েও কিনতে পারেননি। আবার যারা পণ্য পেয়েছেন তাদের অনেকে সকাল থেকে বিক্রয়কেন্দ্রের লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছেন। পণ্য পেয়েছেন দুই-চার ঘণ্টা পরে।
রামপুরা জামতলা এলাকায় সোমবার ওএমএসের পণ্য বিক্রি করেছেন ডিলার হুমায়ূন তালুকদার। সেখানে সকাল ৭টা থেকে গাড়ি আসার আগে পর্যন্ত ভিড় ছিল। গাড়ি এসেছে ৯টায়। এরপর সেখানে শত শত মানুষের লাইন দেখা যায়। ডিলারের প্রতিনিধি ফরিদ প্রত্যেকের হাতে মার্কার কলম দিয়ে সিরিয়াল নাম্বায় দিয়ে দেন।
এরপরেও কিছুক্ষণ পরপর সেখানে লাইনে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। অনেকে লাইনের বাইরে থেকে পণ্য নেওয়ার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ সিরিয়াল অমান্য করেও ঝগড়া বিবাদ লাগায়।
সেখানে প্রায় পৌনে পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষার পর পণ্য কিনতে পেরেছেন ক্রেতা রাবেয়া আক্তার। তিনি বলেন, দুই দিন লাইনে দাঁড়িয়েও কিনতে পারিনি। আজকে সকাল ৭টা থেকে এখানে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি।
বিলকিস বানু নামের একজন বলেন, বাজার থেকে ৫ কেজি চাল আর ৪ কেজি আটা কিনতে কমপক্ষে ৫০০ টাকা লাগতো। কিন্তু এখান ২৬০ টাকা লেগেছে। অর্ধেক কম।
প্রকৃতপক্ষেও তাই। কারণ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি মোটা চাল ৬২ থেকে ৬৫ টাকা এবং আটা প্রতি কেজি ৫২ থেকে ৫৫৫ টাকা। সেখানে প্রতিজন ৩০ টাকা দরে ৫ কেজি চাল ও সাড়ে ২৭ টাকা দরে প্যাকেটজাত আটা পাচ্ছেন।
অনেক বেশি সাশ্রয় হয় বলে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক নারী-পুরুষ জানান, তাদের কেউ কেউ সকাল ৭-৮ থেকে ওএমএসের পণ্যের জন্য অপেক্ষা করছেন। নির্ধারিত ওই স্থানে ট্রাক পৌঁছায় সকাল ৯টার পর। তারপরেও অনেকে পণ্য পান না।
এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা মানুষ। বিশেষ করে চালের দাম বেশি ভোগাচ্ছে। আয়ের তুলনায় ব্যয় বাড়ায় জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে অনেকের। এ অবস্থায় কিছুটা কম দামে ওএমএসের চাল পেতে নিরুপায় হয়ে নিম্নবিত্তদের সঙ্গে অনেক মধ্যবিত্তও লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে এ লাইন।
আরও পড়ুন:
এদিকে, দেশের ৯০৬টি বিক্রয়কেন্দ্রে এ কার্যক্রম চালাচ্ছে খাদ্য অধিদপ্তর। প্রতিটি বিক্রয়কেন্দ্রে এক টন চাল ও এক থেকে দুই টন আটা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। যদিও চাহিদা আরও অনেক বেশি।
ওএমএসের ডিলাররা বলছেন, কয়েক মাস ধরেই ওএমএসের ট্রাক সেলে মানুষের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। চাহিদা বাড়ায় অনেককেই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। সীমাবদ্ধতা থাকায় ওএমএসের লাইনে দাঁড়ানো প্রত্যেক মানুষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তাদের ভাষ্য, বরাদ্দ আরও বাড়ানো দরকার। প্রতি শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকে ওএমএসের কর্মসূচি। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোয় প্রতিদিন এক টন চাল ও দুই টন আটা বিক্রি চলমান থাকে। কিন্তু চাহিদা থাকে বরাদ্দের কয়েকগুণ।
এনএইচ/এসএনআর/এমএস