চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যা, বিরলতম রায় আদালতের
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় সরকারি হাসপাতালের ভেতর ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় রায় দিয়েছেন আদালত। কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এ চিকিৎসককে হত্যার মামলায় আদালত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে ৩টি ধারায় সাজা দিয়েছেন। তবে ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন বা কেন্দ্রীয় অনুসন্ধান সংস্থার (সিবিআই) আইনজীবী এটিকে বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন।
সোমবার ( ২০ জানুয়ারি) শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস তার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তিনি তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪, ৬৬ এবং ১০৩ (১)— এই ৩টি ধারায় সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে মৃত্যুদণ্ডের আবেদন জানানো হলেও আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক। এ ছাড়া আদালত তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে পাঁচ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর কর্মক্ষেত্রে ধর্ষণের জন্য ৭ লাখ এবং হত্যার জন্য ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রায়ের পর সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা। নির্যাতিতা ওই নারী ডিউটিতে ছিলেন। এ ঘটনায় সবাই বিস্মিত। শুধু নির্যাতিতার পরিবার এক সদস্যকে হারায়নি, সমাজ একজন চিকিৎসককে হারিয়েছেন। এ ঘটনা পুরো সমাজকে নাড়া দিয়েছে। যাদের মেয়ে কাজের জন্য বা কোনো কারণে বাইরে যাচ্ছেন তাদের মা-বাবাকে বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে। ৩টির মধ্যে দুটি অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে। সমাজে বার্তা দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে গত ৮ আগস্ট এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। মৃত ওই চিকিৎসক স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। কর্তব্যরত ট্রেইনি চিকিৎসকরা প্রতি রাতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেমিনার রুমে বিশ্রাম নেন। সেদিন রাতে ফুড ডেলিভারি সংস্থার কাছ থেকে খাবার আনান চেস্ট মেডিসিন বিভাগের ওই চিকিৎসক। সহযোগী অন্যান্য চিকিৎসকের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খান তিনি। সেদিন মধ্যরাতে অলিম্পিকে জ্যাভলিন থ্রোর ফাইনালে নেমেছিলেন ভারতের নিরজ চোপড়া। সেই খেলা চিকিৎসকরা সবাই মিলে দেখেন। রাত প্রায় দেড়টা নাগাদ ইভেন্ট শেষ হয়। এরপর ২টার দিকে ঘুমোতে যান ৩১ বছর বয়সী ওই নারী চিকিৎসক।
পরদিন সকালে সহযোগী এক চিকিৎসক দেখতে পান, সেমিনার রুমে পড়ে রয়েছে চিকিৎসকের মরদেহ। শরীরের নিম্নাঙ্গে কোনো কাপড় নেই। শরীরের ওপরের অংশের পোশাকও ছেঁড়া। পাশে পড়ে রয়েছে তার ভাঙা চশমা। শুক্রবার হাসপাতালেই নিহতের ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্তেই অনুমান করা হয়, ধর্ষণ শেষে খুন হয় ওই নারী চিকিৎসক।